অটিস্টিক এক ধরনের মানসিক বিকাশজনিত সমস্যা। অটিজম একটি রোগ মাত্র। যা চিকিৎসার মাধ্যমে সেরে ওঠা সম্ভব। সাধারণত জন্মের প্রথম ৩ বছরের মধ্যে শিশুদের এ সমস্যার আশঙ্কা থাকে। এ সমস্যার কারণে শিশুদের ইন্দ্রিয়গুলোর গঠনমূলক গুণ অক্ষুণ্ন থাকে ঠিকই, কিন্তু কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। সকলের বেঁচে থাকার সমান অধিকার রয়েছে। শুধুমাত্র একটি রোগের কারণে আলাদা চোখে দেখার একেবারেই উচিত নয়। অটিস্টিক শিশুরা শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ থাকে। চিকিৎসকদের মতে, অটিজম মূলত শিশুর মনোবিকাশগত জটিলতা বা সমস্যা, তবে মানসিক রোগ নয়। বিভিন্ন কারণে অটিজম হতে পারে। পরিবেশগত ও বংশগত কারণে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। বিভিন্ন দেশে অটিজম আক্রান্ত (অটিস্টিক) শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণাও বেড়েছে।সমাজের চোখে অটিজম: অটিজম-সম্পর্কিত সচেতনতার অভাব আজো সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রকট। বিদ্যালয়ে অনেক সময় অটিস্টিক শিশুদের জন্য সুযোগ তৈরি করা হয় না। সহপাঠীরা তাদের উপহাস করে, শিক্ষকরা ধৈর্য হারান, এবং ফলস্বরূপ, পরিবারগুলো শিশুদের ঘরে আটকে রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এর ফলে শিশু যেমন বঞ্চিত হয় মানসিক বিকাশ ও শিক্ষা থেকে, তেমনি সমাজও হারায় এক সম্ভাবনাময় নাগরিককে।কারো সন্তান যদি অটিস্টিক হয়, তখন পরিবারে এক অদৃশ্য চাপ নেমে আসে। প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন এমনকি কখনো কখনো বাবা-মাও একে অভিশাপ বলে মনে করেন। অজ্ঞতা, কুসংস্কার এবং সামাজিক চাপ এই তিনটি কারণে এখনো বাংলাদেশে অটিজমকে ‘দূরারোগ্য’ কিংবা ‘অস্বাভাবিক’ বলে ধরে নেওয়া হয়। অথচ অটিজম একটি মস্তিষ্কের বিকাশজনিত বিশেষ অবস্থা, যা মানসিক রোগ বা ‘পাগলামি’ নয়।দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে: অটিস্টিক শিশুরা কোনো ‘বিপদ’ নয়, বরং তাদের মাঝেও প্রতিভা থাকে। কেউ অসাধারণ আঁকতে পারে, কেউ সঙ্গীতপ্রতিভা নিয়ে জন্মায়, কেউ অঙ্কে দক্ষ। তাদের শুধু প্রয়োজন একটু সহানুভূতি, একটু বুঝে ওঠার চেষ্টা।আজ ১৮ জুন, অটিজম প্রাইড ডে, অর্থাৎ অটিস্টিক শিশুকে নিয়ে গর্ব করার দিন। প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী সমস্ত অটিস্টিক রোগীদের এবং তাদের পরিবারদের একত্রিত করার মাধ্যমে এই দিনটি পালন করা হয়।রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৫ সালে ব্রাজিলে প্রথম অটিস্টিক প্রাইড ডে পালন করা হয়। জানা যায়, গ্যারেথ এবং অ্যামি নেলসন এই দিনটি প্রথম উদযাপন করেছিলেন। অটিজম সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্যই এই দিনটি পালন করা শুরু হয়। ব্রাজিলিয়ান সংস্থা Aspies for Freedom দ্বারা এই দিনটি প্রথম পালন করা হয়। পরবর্তীকালে সারা বিশ্বজুড়ে এই দিনটি একটি জনপ্রিয়তা পায়।অটিজম আক্রান্ত শিশুদের বিষন্নতা, উদ্বেগ, মনোযোগে ঘাটতি, মৃগী রোগের মতো সমস্যা দেখা দেয়। জানা যায়, বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০০ জন শিশুর মধ্যে একজন শিশুর অটিজম রয়েছে। এই সংখ্যা যত দিন যাচ্ছে আরও বেশি বেড়ে যাচ্ছে। ছোট থেকেই বাচ্চাকে মোবাইলে আসক্ত না করে পরিবার বা প্রকৃতির মধ্যে বড় করলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।অটিস্টিক প্রাইড ডে দিনটির তাৎপর্য: এই দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি মানুষকে শেখায়, অটিজম শুধুমাত্র একটি রোগ নয়। অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের আলাদা করে দেখার কোনো প্রয়োজন নেই, বরং অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের আরো বেশি যত্ন এবং ভালোবাসার প্রয়োজন।লক্ষণ: শিশু অটিজমে আক্রান্ত কি না তা কিছু লক্ষণ দেখে আঁচ করা যায়। যেমন—সাধারণত ১৮ মাস থেকে ২ বছর বয়সেও কথা বলতে সমস্যা হওয়া, তাদের মনোযোগ ও কাজের সক্ষমতা বা আগ্রহ কমে যাওয়া, শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি অস্বাভাবিক হওয়া প্রভৃতি। পাশাপাশি তারা দেখা, শোনা, গন্ধ, স্বাদ অথবা স্পর্শের প্রতি অতি সংবেদনশীল অথবা প্রতিক্রিয়াহীন হয়। বিষণ্নতা, উদ্বিগ্নতা, মনোযোগে ঘাটতি সহ তাদের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।অটিজম কোনো অভিশাপ নয়, অটিস্টিক শিশুরাও আমাদের মতো মানুষ। একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেই তারাও সম্মানের সঙ্গে সুস্থভাবে বাঁচতে পারবে। তবেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশে, বৃদ্ধি পাবে অটিজম সচেতনতা।এইচএ

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
‘সরকার গঠন এবং নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়’
‘সরকার গঠন এবং নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়’

বাংলাদেশে জাতীয় সরকার গঠন এবং জাতীয় নির্বাচন কখন হবে, তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত Read more

বিএনপি জনগণের দল, জনগণের কষ্টে পাশে থাকে: ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন
বিএনপি জনগণের দল, জনগণের কষ্টে পাশে থাকে:  ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন

জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রফেসর ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, 'প্রশাসনের সকল স্তরে ফ্যাসিবাদ বসে আছে। Read more

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন