একটা সময় পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি পরিবারের কাছে হাতে বোনা ঝাঁকি জাল ছিল নিত্য প্রয়োজনীয়। কারণ, জাল দিয়ে বাড়ির পুকুর কিংবা কোলা-বিলে মাছ ধরার একটা প্রবণতা ছিল অধিকাংশ পরিবারের। কিন্তু কালের আবর্তে তা হারিয়ে যেতে বসেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন বংশপরম্পরায় জাল বোনার কারিগররা।সরজমিন দেখা গেছে, উপজেলার কালাইয়া বাজারের বৃহৎ জালের বাজারের হাটে সাজিয়ে রাখা হয়েছে কারিগরদের নিপুণ হাতে বোনা ঝাঁকি জাল, মই ঝাল ও ধর্মজাল। ক্রেতার অপেক্ষায় বসে রয়েছেন জালের কারিগররা। তবে তেমন দেখা মিলছে কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার। এতে হতাশা নিয়েই বাড়ি ফিরছেন হাটে জাল বিক্রি করতে আসা কারিগর ও ব্যবসায়ীরা।কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জালের প্রকারভেদে দামও ভিন্ন ভিন্ন। ৪ হাত লম্বা ঝাঁকি জালের দাম হাঁকানো হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, ৫ হাত লম্বা ঝাঁকি জালের দাম ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা, ৬ হাত লম্বা ঝাঁকি জালের দাম ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা, ৭ হাত লম্বা ঝাঁকি জালের দাম ১ হাজার ৮০০-২ হাজার ২০০ টাকা। ১০ হাত ধর্মজালের দাম ৩ হাজার ৫০০ টাকা ও ১৫ হাত ধর্মজালের দাম ৪ হাজার ৫০০ টাকা এবং মই জালের দাম ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। তবে হাটে তুলনামূলক জালের ক্রেতার সংখ্যা কম।হাটে জাল বিক্রি করতে আসা উপজেলার দাশপাড়া গ্রামের আলামিন মোল্লা বলেন, তার বাপ-দাদা জালের কারিগর ছিলেন। তিনিও বংশপরম্পরায় জাল বুনছেন। এসব জাল হাটে-বাজারে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে থাকেন। কিন্তু এখন আর হাতে বোনা জালের কদর নেই।বড়ডালিমা গ্রামের আয়েনআলী মাঝি বলেন, ‘বছরের ৭ থেকে ৮ মাস জালের চাহিদা থাকে না। বর্ষা মৌসুমে ক্রেতা বেড়ে থাকে। তবে আগের মতো জালের কদর নেই। এক দিকে খাল-বিল, নদী-নালা ও পুকুর-ডোবায় তেমন মাছ নেই, অন্যদিকে আধুনিকতার যুগে মানুষের ঝাঁকি জাল দিয়ে মাছ ধরার চর্চা নেই। যে কারণে জালের কদর কমছে।’শৌলা গ্রামের জাল বিক্রেতা মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, ‘এক সময় গ্রামের মানুষ সুযোগ পেলেই জাল নিয়ে নদী খালে মাছ ধরতে নেমে যেতেন। এ যুগের ছেলে-পেলেরা ঝাঁকি জাল দিয়ে মাছ ধরতেই জানেন না। যে কারণে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ঝাঁকি জাল হারিয়ে যেতে বসেছে।’পরিবেশ নিয়ে গ্রামের তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করছেন ‘সেইভ দি বার্ড এ্যান্ড বি’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা। ওই সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এম এ বাশার বলেন, ‘এক সময় খালে-বিলে ডোবা নালায় প্রচুর দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। গ্রামের মানুষ এসব মাছ ধরে পারিবারিক চাহিদা পূরণসহ বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করত। কয়েক দশক ধরে কৃষিতে মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশকের ব্যবহার বহুগুণ বেড়েছে। মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশক খালে-বিলের পানিতে মিশে দেশীয় প্রজাতির মাছ ধ্বংস হচ্ছে। একইভাবে বিলে-খালে নিষিদ্ধ ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছ ও মাছের রেনু পোনা ধ্বংস করা হচ্ছে। যে কারণে দিনদিন দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। গ্রামে তেমন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ঝাঁকি জালের ব্যবহারও কমেছে। এছাড়া এ জালের ব্যবহার কমার পিছনে আধুনিকতার প্রভাবও রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।’দেশীয় প্রজাতির মাছ কমছে, স্বীকার করেছেন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদার। তিনি বলেন, ‘নিষিদ্ধ জাল ও মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের কারণে দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ ও রেনু ধ্বংস হচ্ছে। এসব নিষিদ্ধ জালে ব্যবহার বন্ধ করতে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। এসব জাল পুড়িয়ে ধ্বংসসহ জেল জরিমানাও করছি। তবে কাজ হচ্ছে না। সরকারের এসব জালের উৎপাদন বন্ধে কার্যকর ভূমিকা নেওয়া উচিত।’এসআর

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
কল্যাণময় জীবনের জন্য দোয়া পছন্দ করতেন আল্লাহর রাসুল
কল্যাণময় জীবনের জন্য দোয়া পছন্দ করতেন আল্লাহর রাসুল

একজন মুসলমানের যেমন দুনিয়াদার হওয়ার সুযোগ নেই, শুধু দুনিয়ার জীবন-সর্বস্ব চিন্তা ভাবনা, কাজকর্ম করার সুযোগ নেই, দুনিয়াবিরাগী হওয়ার শিক্ষাও ইসলাম Read more

সারাদেশে তাপমাত্রা বাড়ার আভাস
সারাদেশে তাপমাত্রা বাড়ার আভাস

সারাদেশে আগামী ২৪ ঘণ্টায় তাপমাত্রা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বাংলাদেশ অধিদপ্তর। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার Read more

চাঁদপুরে চার দশক পর রাজা খাল খননে এলাকাবাসীর স্বস্তি
চাঁদপুরে চার দশক পর রাজা খাল খননে এলাকাবাসীর স্বস্তি

দীর্ঘ চার দশক পর চাঁদপুরের পুরান বাজার ডাকাতিয়া নদী থেকে দোকানঘর এলাকা পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার বিস্তৃত খালটি স্থানীয়দের কাছে Read more

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন