টানা ১০ দিনের ঈদুল আজহার ছুটি কাটাতে প্রকৃতির টানে, স্বস্তির খোঁজে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় ছুটে এসেছে দেশের নানা প্রান্তের মানুষ। আর সেই খোঁজের অন্যতম গন্তব্য হয়ে উঠেছে পাহাড় আর সবুজে ঘেরা প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতীক খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা। ঈদুল আজহার দিন পেরোতেই জেলার প্রায় সব জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দেখা গেছে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়।জেলার অন্যতম আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, আলুটিলা গুহা, তৈরাং তৈকালাই ঝর্ণা (রিছাং ঝর্ণা), জেলা পরিষদ পার্ক, চেঙ্গী নদীর পাড় ও শতভাগ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবকিছু যেন হাতছানি দিচ্ছে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা ভ্রমণপিপাসুদের।আলুটিলা গুহা রহস্য আর রোমাঞ্চে ঘেরা এই স্থান যেন হয়ে উঠেছে ঈদ যাত্রার অন্যতম আকর্ষণ। মিনিটের পর মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে পর্যটকরা। রিছাং ঝর্ণার ঠাণ্ডা পানি, ঝুলন্ত সেতুর দোল আর আলুটিলা গুহার নরম স্রোত ইত্যাদি মিলিয়ে যেন এক অপরূপ প্রেম ও কবিতা।সবুজ পাহাড়ে প্রাণের স্পন্দন—সাজেক ভ্যালী না হলেও খাগড়াছড়ির মূল শহর ও আশপাশের এলাকাগুলোতেও ঈদের ছুটিতে ব্যাপক পর্যটকের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে। আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, রিছাং ঝর্ণা, নিউজিল্যান্ড রোড, জেলা পরিষদ পার্কসহ প্রতিটি স্থানেই ছিলো শত শত পর্যটকের উপস্থিতি।ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা পর্যটক মো. রাইসুল ইসলাম বলেন, ‘খাগড়াছড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর এখানকার মানুষের আন্তরিকতা আমাদের মন ছুঁয়ে গেছে। ঈদুল আজহার ছুটির সময়টা খাগড়াছড়িতে কাটিয়ে মনে হচ্ছে সত্যিই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’চট্টগ্রাম শহর থেকে আসা পর্যটক মোছা. জেসমিন আক্তার বলেন, ‘ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ঈদের ছুটিতে খাগড়াছড়ি বেড়াতে আসছি। খুব দারুণ সময় পারছি আমরা। ছেলে-মেয়েরা খুব আনন্দ পাচ্ছে। আলুটিলা গুহার ভিতরে গিয়ে একেবারে অন্যরকম অনুভূতি হয়েছে। পাহাড়ের সৌন্দর্য, এখানকার পরিবেশসহ সবকিছু এক কথায় অসাধারণ।’নতুন আকর্ষণ তেরাং তৈকালাই ঝর্ণা—আলুটিলা পাহাড় ঘেঁষে অবস্থিত তেরাং তৈকালাই ঝর্ণা। স্থানীয়দের কাছে যেটা রিছাং ঝর্ণা নামেই বেশ পরিচিত। এবার ঈদের ছুটিতে অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে রিছাং ঝর্ণা। ঢালু পাথরের গায়ে ঝরে পড়া জলধারা ও তাঁর নিচে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতে পর্যটকদের আনন্দ-উৎসাহ ছিলো চোখে পড়ার মতো। স্থানীয় উদ্যোক্তা ধনিময় ত্রিপুরা বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি এই ঝর্ণাকে পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ রাখতে। পর্যটকদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয়দের জন্যও নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।’রাতের শহরেও আলোর ঝলকানি—শুধু দিন নয়, ঈদের ছুটিতে খাগড়াছড়ি শহরে রাতের সৌন্দর্যও ছিলো বেশ উপভোগ্য। মিনি পার্ক, ডিসি পাহাড়, চারুকলা চত্বর ও স্থানীয় রেস্টুরেন্টগুলোতে ছিলো পর্যটকদের ভিড়।খাগড়াছড়িতে পর্যটন খাতে সম্ভাবনার ইঙ্গিত—ঈদের টানা ছুটিতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের আগমন খাগড়াছড়িসহ পুরো পার্বত্য অঞ্চলের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। সংশ্লিষ্টদের মতে, পর্যটনের পরিকল্পিত উন্নয়ন, পরিচ্ছন্নতা রক্ষা ও নিরাপত্তা জোরদার করলে এই জেলাটি হয়ে উঠবে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ পর্যটন কেন্দ্র।খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার মজুমদার বলেন, ‘অন্যান্য ঈদের মতোই এবারও খাগড়াছড়িতে পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের পর্যটন মোটেলগুলো প্রায় সকল রুম বুকিং।’খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, ‘পর্যটকদের সুবিধা নিশ্চিতে আমরা নানা উদ্যোগ নিচ্ছি। স্থানীয়দের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে পরিবেশবান্ধব পর্যটনের দিকে এগোচ্ছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা।’যেকোনো ছুটির ফাঁকে প্রকৃতির কোলে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার নামই এখন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা। ঈদের মতো বড় ছুটিতে এমন আয়োজন পর্যটন শিল্পকে যেমন প্রাণ জোগায়, তেমনি পাহাড়ের মাটিতেও বয়ে আনে সম্ভাবনার নতুন ধারা।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর