মাঠে আলোর ঝলকে ফুটবল খেলায় মেতে উঠেছিল ছেলেগুলো। ঈদের ছুটিতে ঘরে ফেরা প্রবাসী মামুনুর রশিদও ফিরেছিলেন সেই পুরোনো ছেলেবেলার টানে—খেলার মাঠে, বন্ধুদের মাঝে। কে জানতো, সেটাই হবে তাঁর জীবনের শেষ খেলা! শেষ হাসিটা হয়তো মাঠেই দিয়ে গেছেন, কিন্তু মাঠেই থেমে গেছে তাঁর হৃদস্পন্দন।ঘটনাটি গতকাল মঙ্গলবার রাতের। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের সৈয়দাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ঈদুল আজহার ছুটিকে কেন্দ্র করে স্থানীয় যুবকেরা প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করেছিলেন। গ্রামের বাতি জ্বলা মাঠে খেলায় মেতে উঠেছিলেন সবাই। সেই খেলায় অংশ নেন সৌদি প্রবাস ফেরত যুবক মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ।খেলার একপর্যায়ে হঠাৎ করেই অস্বস্তি বোধ করেন মামুন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাঠেই ঢলে পড়েন তিনি। বন্ধুরা ছুটে আসে, মুহূর্তেই থমকে যায় খেলাধুলার সব কোলাহল। মামুনকে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে তাঁকে চট্টগ্রাম নগরীর একটি বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠানো হয়। ক্লিনিকের চিকিৎসকেরা তাঁকে পরীক্ষা করে জানান—সব শেষ। মামুন আর নেই। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে চলে গেছেন না-ফেরার দেশে।মামুনুর রশিদের বড় ভাই মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ বলেন, ‘ওর আগে থেকেই হার্টের সমস্যা ছিল। দুই বছর আগে তাঁর হৃদ্যন্ত্রে দুটি স্ট্যান্ট বসানো হয়েছিল। চিকিৎসকেরা বলেছেন, সে হার্ট অ্যাটাক করেছে।’মামুন সাতকানিয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরপাড়া এলাকার মৃত আবদুল জব্বারের ছেলে। তার ঘরে রয়েছে মাত্র ১৭ মাস বয়সী এক কন্যাসন্তান। মেয়েটি বুঝতেও পারছে না, তার বাবা আর ফিরবেন না। মামুনের স্ত্রী ছিলেন স্বামীর অপেক্ষায়, কারণ আসন্ন রবিবারেই তাঁর সৌদি আরবে কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। হয়তো ভেবেছিলেন, যাওয়ার আগে একসঙ্গে কিছুটা সময় কাটাবেন। কিন্তু তার আগেই চিরবিদায়।মামুন শুধু একজন প্রবাসী ছিলেন না, এলাকায় দানবীর হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। স্থানীয়দের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়াতেন। কারও চিকিৎসা, কারও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ, কারও ঘরের চাল ঠিক করার টাকা—মামুন থাকতেন নিঃশব্দে পাশে। তাই তাঁর মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, গোটা মহল্লার জন্য বেদনার।সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘শুনেছি হার্ট অ্যাটাকে মামুনের মৃত্যু হয়েছে। এলাকায় তিনি খুবই প্রিয় ছিলেন।’এনআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর