২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসে বাংলাদেশ আবারও এক দুঃস্বপ্নের ছায়া দেখতে শুরু করেছে। এক সময় যেটি ছিল প্রতিদিনের আতঙ্ক—করোনা ভাইরাস—তা আবার ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে নতুন রূপে। সরকার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সতর্কতা জারি হয়েছে, সংবাদপত্রগুলোতে স্বাস্থ্যবিধির প্রতি আহ্বান উঠেছে, কিন্তু সাতকানিয়ার বাস্তবতা যেন এসবের উল্টো স্রোতে দাঁড়িয়ে আছে।গত ৪ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হালিমুর রশিদের স্বাক্ষরিত এক সতর্কবার্তায় দেশের সকলকে সাবধান থাকার আহ্বান জানানো হয়।বলা হয়, বারবার সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির নিকটবর্তী হওয়া যাবে না। চোখ, মুখ, নাকে অপরিষ্কার হাত লাগানো যাবে না। হাঁচি-কাশির সময় বাহু বা টিস্যু দিয়ে মুখ ঢাকতে হবে।কিন্তু এসব বার্তা যেন সাতকানিয়া পৌঁছালেও মানুষ শুনছে না। হাটে-বাজারে, চা-স্টলে, রিকশার হ্যান্ডেলে, এমনকি হাসপাতাল চত্বরে পর্যন্ত নেই হাত ধোয়ার বেসিন, নেই জীবাণুনাশক। মাস্ক ব্যবহার করা তো যেন পুরাতন কোনো কৌতুক।সোমবার দুপুর। সাতকানিয়ার কেরানীহাটে মানুষের ভিড়, গাড়ির শব্দ—সবকিছু চলছে পুরনো স্বাভাবিক গতিতে। শুধু নেই একটাই জিনিস—মাস্ক।পানের দোকানি সেলিম বলেন, ‘মাস্ক? আরে ভাই, সেইটা তো গেল ২০২০’র কাহিনী। এখন তো মানুষ অনেক কিছুই ভুলে গেছে। করোনা আছে, এমন খবরই পাই না।’বিক্রেতা বেলাল বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। মাস্ক কিনতে পারি না রোজ। সরকার যদি দিত, তাহলে না হয় পরতাম।’ — বলার সময় তাঁর হাত কাঁচা মরিচ ছুঁয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে দিচ্ছে, পরক্ষণেই সেই হাত দিয়ে ঘাম মুছলেন।সাতকানিয়া থেকে চট্টগ্রামগামী লোকাল বাসে উঠে দেখা গেল—৩০ আসনের বাসে ঠাসাঠাসিভাবে ৪০ জন। অনেকেই দাঁড়িয়ে, কারো মুখে মাস্ক নেই।ড্রাইভারের সহকারী রফিক বলেন, ‘মাস্ক পরলে ঘাম হয়, গলা শুকায়। সরকার যদি আবার পুলিশ লাগায়, তখন না হয় দেখবো।’স্থানীয় সমাজকর্মী সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘করোনা নিয়ে একধরনের ক্লান্তি তৈরি হয়েছে মানুষের মধ্যে। তারা আর মানতে চায় না। সচেতনতা নেই, কারণ ভয় নেই। অথচ ভয়টাই হওয়া উচিত ছিল শিক্ষা।’উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ‘২০২০ সালের শুরুর দিকে করোনা ভাইরাস নিয়ে মানুষের মনে যে উৎকণ্ঠা ও ভয় কাজ করছিল, বর্তমানে সেটি তেমনভাবে দেখা যাচ্ছে না। তবে এ ধরনের ফ্লু বা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং মাস্ক পরিধান করা অত্যন্ত জরুরি। এই প্রেক্ষাপটে সাতকানিয়ার সকল জনসেবা প্রদানকারী সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে।’সাতকানিয়ার জনজীবনের অভ্যাসে যদি সচেতনতা জায়গা না করে নেয়, তবে সরকার একা কিছু করতে পারবে না। করোনা হয়তো আর আগের মতো ভয়াবহ নয়, কিন্তু তা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত ছিল সবাইকে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, আমরা ভুলে গেছি সেই ভয়, সেই প্রস্তুতি, সেই মানবিকতা। আজ যদি আমরা আবারও উদাসীন থাকি, তাহলে হয়তো খুব শিগগিরই আবারও শুনবো, কারো বাবাকে অক্সিজেনের অভাবে হারাতে হয়েছে, আবার কেউ হাসপাতালে ঠাঁই পাননি।পিএম
Source: সময়ের কন্ঠস্বর