ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে উৎসব! ঈদের আগমনী বার্তা যেন শিক্ষার্থীদের মনে এক ভিন্ন সুর তোলে। ক্যাম্পাসের ব্যস্ততা, গবেষণা বা পরীক্ষার চাপ—সবকিছু ছাপিয়ে মনটা তখন কেবলই বাড়ির পানে ছুটে যেতে চায়। অনেকেই রিসার্চের শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা কিংবা পরীক্ষার কারণে দেরিতে বাড়ির পথ ধরেন। কিন্তু এই বিলম্বের পর যখন তারা অবশেষে প্রিয়জনদের কাছে পৌঁছান, তখন মনের ভিতর এক অন্যরকম ভালোবাসা ও ভালোলাগার উপলব্ধি হয়। দূরের বন্ধুদের কাছে পাওয়া, তাদের সাথে পুরোনো আড্ডায় মেতে ওঠা—এ যেন ঈদেরই এক বিশেষ অংশ। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, আর আত্মীয়-স্বজনের সান্নিধ্য ঈদের আনন্দকে শতগুণ বাড়িয়ে তোলে। এই সময়েই সবাই মিলেমিশে গল্প, হাসিঠাট্টা আর খাওয়া-দাওয়ায় মেতে ওঠেন। আর ঈদুল আযহার অন্যতম তাৎপর্য হলো কোরবানির মাংস বিলিয়ে দেওয়া। যখন সমাজের গরিব ও দুস্থদের মাঝে এই মাংস বিতরণ করা হয়, তখন মনের ভিতর থেকে এক অনাবিল শান্তি ও তৃপ্তি অনুভূত হয়। এই মানবিকতার স্পর্শে মনটা যেন অনেক হালকা হয়ে যায়, যা ঈদের প্রকৃত শিক্ষা ও সৌন্দর্যকে তুলে ধরে।শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের এম.এস দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী, সৈয়দ নাজমুল আলম (সিফাত) বলেন, ‘মানুষ স্বভাবতই সামাজিক জীব, আর তাই ঈদসহ সকল উৎসব-পার্বণেই পরিবার-পরিজন, প্রতিবেশী আর বন্ধুদের সাথে মিলেমিশে আনন্দ উপভোগ করতে ভালোবাসে। এই দিক থেকে আমি কোনো ব্যতিক্রম নই। প্রতিবার ঈদের সময় হলেই মনটা উড়ুউড়ু করে, মুখিয়ে থাকি কবে ক্যাম্পাস বন্ধ হবে। ক্লাস শেষ হওয়া মাত্রই ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়াই, কারণ পরিবারের কাছে ফেরার যে আনন্দ, তা আর কিছুতেই নেই। তবে এবার রিসার্চের কাজের জন্য বাড়ি ফিরতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। মনটা একটু খারাপ হলেও, শেষ পর্যন্ত যে কয়েকটা দিন হলেও পরিবার, আত্মীয়-স্বজন আর বন্ধুদের সাথে কাটাতে পারব, এতেই আমি মহান স্রষ্টার কাছে ভীষণ কৃতজ্ঞ। এই অল্প সময়ের একত্রিত হওয়াটাও আমার কাছে অনেক মূল্যবান, কারণ উৎসবের আসল আনন্দটাই তো প্রিয়জনদের সান্নিধ্যে। তাদের সাথে হাসিগল্পে মেতে ওঠা, পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন করা, আর একসাথে ভালো মন্দ খাওয়া—এসবই তো ঈদের বাড়তি পাওনা। দেরি হলেও, এই মিলনই আমার কাছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।’শেকৃবি কৃষি অনুষদের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মুনিরা সুলতানা সারা বলেন, ‘এবারের ঈদও এসেছে ঢাকা শহরে, চিরচেনা কোলাহল আর আপনজনের সান্নিধ্য নিয়ে। তবে এবারের ঈদের রেশটা যেন গতানুগতিকতার বাইরে এক ভিন্ন সুর বাজাচ্ছে। ছুটির এই ক্ষণিকের ফুরসত যেন এক অন্যরকম বোঝাপড়ায় আবদ্ধ। শিক্ষাজীবনের ব্যস্ততা পিছু ছাড়ছে না; ভার্সিটির অ্যাসাইনমেন্টের স্তূপ, প্রেজেন্টেশনের প্রস্তুতি আর অদূরেই উঁকি দিচ্ছে ফাইনাল পরীক্ষার হাতছানি। এই কর্মব্যস্ততার মাঝেও হৃদয়ের গভীরে এক অব্যক্ত টান, পরিবার আর বন্ধুদের সাথে নিবিড় কিছু মুহূর্ত খুঁজে নেওয়ার এক নিরন্তর প্রয়াস। যেন সময়ের বাঁধনে বাঁধা পড়েও ভালোবাসার সুতোয় বাঁধা পড়া। আর এই সবকিছুর ফাঁকেই চলছে প্রিয় মুভি আর সিরিজের অন্বেষণ, কল্পনার জগতে ডুব দেওয়ার এক মধুর আয়োজন। হয়তো এভাবেই কাটবে এবারের ঈদও, ব্যস্ততার আবরণে মোড়া এক অন্যরকম ঈদ, যা স্মৃতির পাতায় রেখে যাবে এক ভিন্নরকম কাব্যিক ছাপ।’ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্সের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়াসিউল হাসান সরকার তার মতামত এমনভাবে অভিব্যক্ত করেছেন: ‘ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে শুধু নতুন পোশাক আর ভালো খাবার নয়, ঈদ মানে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গিয়ে পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন করা, বন্ধুদের আড্ডায় মেতে ওঠা আর শৈশবের দুরন্তপনাকে নতুন করে খুঁজে পাওয়া। এই সময়টাতেই হয়তো প্রিয়জনের কাছে ফিরে যাওয়ার আকুলতা সবচেয়ে বেশি অনুভব হয়, আর সেই আকুলতা মিটলেই যেন জীবনের পূর্ণতা আসে। ঈদ তাই শুধু একটি উৎসব নয়, এটি ভালোবাসার বন্ধন আর শিকড়ের টানে ফিরে আসার এক অমোঘ আহ্বান। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ব্যস্ততা শেষে এই ঈদই নিয়ে আসে অফুরন্ত অবসর, যেখানে পড়াশোনার চাপ নেই, পরীক্ষার টেনশন নেই। আছে শুধু অবাধ স্বাধীনতা আর প্রিয়জনদের সাথে একান্ত নির্বিঘ্নে মন খুলে সময় কাটানোর সুযোগ। এই দিনগুলোই ভরে ওঠে নতুন করে স্বপ্ন দেখার আর পুরনো স্বপ্নগুলোকে নতুন করে সাজানোর অনুপ্রেরণায়।’কৃষি অনুষদের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোছাঃ নাহিদা আক্তার বলেন, ‘শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটির আকাল সর্বজনবিদিত, তাই এখানে প্রতিটি ছুটিই শিক্ষার্থীদের কাছে পরম আকাঙ্ক্ষিত। এবারের ঈদুল আযহায় ১৬ দিনের দীর্ঘ ছুটি যেন এক ঝলক বিশুদ্ধ বাতাস নিয়ে এসেছে। ছুটি মানেই পরিবারের উষ্ণ সান্নিধ্য, তবে ঈদুল আযহা তার চেয়েও বেশি কিছু। এই ঈদ কেবল আপনজনদের সাথে সুখ ভাগ করে নেওয়ার নয়, বরং দরিদ্র ও অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর এক অনন্য সুযোগ। কোরবানির মাংস বিতরণের মধ্য দিয়ে যে তৃপ্তি লাভ হয়, তা আর কিছুর সাথে তুলনীয় নয়। সারাবছর পড়াশোনার নিগড়ে আবদ্ধ আমরা, অন্যান্য সামাজিক কাজ করার সুযোগ খুব কমই পাই। সেই দিক থেকে এই ১৬ দিনের ছুটি যেন আমাদের জন্য এক প্রকৃত সহায়কের ভূমিকা পালন করে। এই সময়ে আমরা কেবল শারীরিক বিশ্রামই পাই না, বরং মানুষের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের মাধ্যমে আমাদের আত্মিক উন্নতি সাধিত হয়। সমাজের নিম্নবিত্তদের পাশে দাঁড়ানোর এই সুযোগ আমাদের ভেতরের মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটায়। এই ঈদ তাই কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি মানবতাবোধ জাগিয়ে তোলার এক মহৎ উপলক্ষ।’ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের শিক্ষার্থী হাসান আল নাভিদ-এর মতে, ‘ঈদুল আজহায় আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের বাড়িতে দাওয়াত রক্ষা করা এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। একে অপরের বাড়িতে গিয়ে সুস্বাদু মাংসের পদ চেখে দেখা, ছোটবেলার নানা মজার ঘটনা নিয়ে স্মৃতিচারণ করা – এসবই ঈদের আনন্দকে বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। কার বাড়িতে কেমন রান্না হয়েছে, কে কতটুকু খেলো, এসব নিয়ে খুনসুটি আর হাসিঠাট্টা চলতেই থাকে। এই সময়টুকুই সুযোগ করে দেয় পুরোনো সম্পর্কগুলোকে ঝালিয়ে নেওয়ার, নতুন করে ভালোবাসার বন্ধন তৈরি করার। শহর ছেড়ে গ্রামের সরলতা আর আন্তরিকতার মাঝে এই সময়টুকু কাটানো এক দারুণ অভিজ্ঞতা। ঈদুল আজহা তাই শুধু ত্যাগের মহিমা নয়, এটি প্রিয়জনদের সাথে একত্রিত হওয়ার, বাঁধনহীন আনন্দ উপভোগ করার এবং ছোটবেলার স্মৃতিতে ভেসে যাওয়ার এক অনন্য সুযোগ। এই দিনগুলোই ভরে ওঠে ভালোবাসায়, আন্তরিকতায় আর অফুরন্ত হাসিতে। আপনার ঈদ কেমন কাটছে? বন্ধুদের সাথে কেমন আড্ডা দিচ্ছেন?’ফ্যাকাল্টি অফ ফিশারিজ অ্যান্ড একুয়াকালচার অনুষদের শিক্ষার্থী আসফিয়া বিনতে সিদ্দিকী বলেন, ‘ঈদ উল আযহা, যা কোরবানির ঈদ নামেই পরিচিত, আমাদের জীবনে এক গভীর তাৎপর্যপূর্ণ উৎসব। এটি কেবল একটি ধর্মীয় উপলক্ষ নয়, বরং আল্লাহর প্রতি আমাদের অবিচল বিশ্বাস এবং ত্যাগের এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। এই দিনে আমরা নিজেদের ভেতরের অহংকে বিসর্জন দিয়ে আত্মোৎসর্গের শিক্ষা লাভ করি। কোরবানি আমাদের শেখায় কীভাবে নিজেদের প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করতে হয় এবং এর মাধ্যমে দরিদ্র ও অসহায় মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হয়। আমরা আমাদের সম্পদ অন্যদের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে সমাজে ভালোবাসা ও সহমর্মিতার বার্তা ছড়িয়ে দিই। কোরবানি নিছকই একটি আচার নয়; এটি আমাদের ভেতরের অহংকার দূর করে মানুষে মানুষে ঐক্য গড়ে তোলার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এই মহৎ শিক্ষা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা যেন আরও সদয় ও দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারি, এই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’সবশেষে বলা যায়, শিক্ষাজীবনের ব্যস্ততা আর সীমাবদ্ধ ছুটির মাঝেও ঈদ যে কীভাবে আনন্দ আর আত্মিক প্রশান্তির বার্তা নিয়ে আসে, তারই প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে শিক্ষার্থীদের কথায়। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ১৬ দিনের ঈদ ছুটি যেন এক দারুণ সুযোগ, যা গতানুগতিক ঈদ উদযাপনের বাইরে গিয়ে মানবতা আর ত্যাগের মহৎ শিক্ষাকে আরও অর্থবহ করে তোলে। ঢাকার কোলাহলে থেকেও অ্যাসাইনমেন্ট আর পরীক্ষার চাপ সামলে পরিবার ও বন্ধুদের জন্য সময় বের করা এক প্রকার চ্যালেঞ্জ। তবুও মুভি আর সিরিজ দেখার ফাঁকে এই ব্যস্ততার মাঝেও আনন্দের সন্ধান চলে। এটি এক অন্যরকম ঈদ, যা স্মৃতিতে নতুন মাত্রা যোগ করে। অন্যদিকে, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সীমিত ছুটির মাঝেও ঈদুল আযহার বাড়তি দিনগুলোকে কাজে লাগায় আত্মিক উন্নয়নে। কোরবানির মাংস বিতরণের মাধ্যমে দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানো এবং সহানুভূতি প্রকাশের সুযোগ তাদের ভেতরের মনুষ্যত্বকে আরও শাণিত করে। সব মিলিয়ে, ঈদ কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি আত্মত্যাগ, ভালোবাসা, সহমর্মিতা আর মানবিকতার এক অনন্য সেতুবন্ধন, যা শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ধাপে শিক্ষার্থীদের সমৃদ্ধ করে তোলে।এসআর

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
বরগুনায় ৪ মাসের শিশুকে রেখে মায়ের আত্মহত্যা
বরগুনায় ৪ মাসের শিশুকে রেখে মায়ের আত্মহত্যা

বরগুনার পাথরঘাটায় পারিবারিক কলহের জেরধরে ৪ মাসের ১টি কন্যা সন্তানের রেখে মোসাঃ সিনথিয়া (১৯) নামের এক গৃহবধূর আত্মহত্যা করার ঘটনা Read more

ভারতের কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় অন্তত ২৪ পর্যটক নিহত
ভারতের কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় অন্তত ২৪ পর্যটক নিহত

ভারতের কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় অন্তত ২৪ পর্যটক নিহত হয়েছেন। একে সাম্প্রতিক সময়ে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা বলে অভিহিত Read more

ধামইরহাট সীমান্তে মাদকদ্রব্য জব্দ
ধামইরহাট সীমান্তে মাদকদ্রব্য জব্দ

নওগাঁর ধামইরহাট সীমান্ত এলাকা থেকে ৯০ বোতল ভারতীয় ফেন্সিডিল এবং ৫৮ বোতল ভারতীয় ফেয়ারডিল নেশাজাতীয় কাশির সিরাপ মালিকবিহীন অবস্থায় জব্দ Read more

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন