ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়তেই আছে। ইপিজেডের সাপ্লাই পানি পান করে রেনেসাঁ, নাকানো, এ্যাবা ও রহিম আফরোজ, আইএসএ, স্টিল হেয়ার, অস্কার বাংলা সহ কয়েকটি কোম্পানির তিন দিনে প্রায় ৬৬০ শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছে।অসুস্থ শ্রমিকরা ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টার ও ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত এসব শ্রমিকদের বাড়তি চাপে হাসপাতালের বারান্দায়ও নেই তিল পরিমাণ জায়গা।রবিবার (১ জুন) সকাল থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ইপিজেড শ্রমিক নতুন করে ৯৫ জন ভর্তি হয়েছে। এদিকে ইপিজেড মেডিকেল সেন্টারে আরো ৬৫ জন। আজও আশঙ্কাজনক অবস্থায় কয়েজনকে রাজশাহী ও পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া কম গুরুতর অনেকেই বেসরকারি চিকিৎসকের নিকট হতে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছে।ইপিজেডের বিপুল সংখ্যক রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় ঈশ্বরদীতে স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছে। এই সুযোগে কিছু ফার্মেসি বেশি দামে স্যালাইন ও প্যামপার্স বিক্রি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।হাসপাতালের রেকর্ড থেকে জানা যায়, গত শুক্রবার ও শনিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইপিজেড মেডিকেল সেন্টারে ডায়রিয়া আক্রান্ত চিকিৎসা গ্রহণ করা শ্রমিকের সংখ্যা ছিল পাঁচ শতাধিক। আজ রবিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত আরো ১৬০ জন শ্রমিক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শতাধিকের বেশি শ্রমিক চিকিৎসাধীন রয়েছে এবং সুস্থ হওয়ায় ৮২ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টারেও আক্রান্ত শত শত রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেছে।রবিবার (১ জুন) দুপুরে সরেজমিনে ঈশ্বরদী হাসপাতালে দেখা যায়, ৫০ শয্যার হাসপাতালে বেড সংকুলান না হওয়ায় স্যালাইন লাগিয়ে রোগীরা বারান্দায়, করিডোরে ও সিঁড়িতে শুয়ে আছে। স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে রোগীরা বলেন, কিছু ওষুধের দোকানে স্যালাইন মিললেও বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে। প্যামপার্সের দামও বেশি নিচ্ছে, রোগীরা জানিয়েছে।ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক এবিএম শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আজকের অবস্থা একটু বেটার। এখানকার মেডিকেল সেন্টারে আজ রবিবার ৬৫ জন চিকিৎসা গ্রহণ করেছে। আমাদের মেডিকেল সেন্টারে এবং বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিপুল খাবার স্যালাইন মজুদ আছে। যাদের প্রয়োজন তারা এখান থেকে সংগ্রহ করতে পারবে। পানি পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি। আশা করি আস্তে আস্তে অবস্থার উন্নতি হবে।’ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আলী এহসান বলেন, ‘ইপিজেডে খাবারের যে সাপ্লাই পানি রয়েছে, সেখান থেকে পয়জনিং হয়েছে বলে ধারণা করছি। যেকারণে আজ ইপিজেডে বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শন করে পানির সোর্স ও ট্যাংকিগুলো পরীক্ষা করছি। এগুলো মোটামুটি ঠিক আছে। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালে আইভি স্যালাইনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ইপিজেডে যে স্যালাইন রয়েছে, তা খাবার স্যালাইন। বিপুল সংখ্যক রোগী সামাল দিতে ডাক্তার ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।’প্রসঙ্গত: গত বৃহস্পতিবার (২৯ মে) থেকে ইপিজেডে দুপুরে খাওয়ার পর হতে পেটব্যথা, পাতলা পায়খানা, জ্বর, বমি ও মাথাব্যথায় শ্রমিকরা অসুস্থ হতে শুরু করে। রেনেসাঁ, নাকানো, এ্যাবা ও রহিম আফরোজ, আইএসএ, স্টিল হেয়ার, অস্কার বাংলা সহ কয়েকটি কোম্পানির প্রায় শত শত অসুস্থ শ্রমিক ঈশ্বরদী হাসপাতাল, ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টার ও বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা গ্রহণ করছে। এর মধ্যে কেউ কেউ সুস্থ হলেও নতুন করে অনেকের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। কর্মরত শ্রমিকরা বলছেন, ‘ইপিজেডের সাপ্লাই পানি পান করে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’এনআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর