ব্যাপক আন্দোলনের মুখে গত বছর আগস্টে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) দায়িত্ব নেন ফারুক আহমেদ। তবে দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র নয় মাসের মধ্যে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। ফলে বিসিবির সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ফারুক আহমেদকে। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল।বিসিবিতে এমন আকস্মিক পরিবর্তন ঘিরে এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। তবে বিসিবি বা এনএসসি শুরুতে এ নিয়ে কোনো স্পষ্ট বক্তব্য না দিলেও গতকাল গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে পুরো পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। শনিবার (৩১ মে) ৩৫তম জাতীয় হ্যান্ডবল টুর্নামেন্টের ফাইনালের পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি ফারুক অপসারণের ইস্যু নিয়ে সজীব ভূঁইয়া বলেন, ফারুক আহমেদের অপসারণ কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয় বরং পারফরম্যান্স-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত। গত নয় মাসে ক্রিকেটে আশানুরূপ উন্নতি না হওয়ায় এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।বিসিবির পরিচালক হলেন বুলবুলক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা দেখেছি গত নয় মাসে বিসিবিতে নতুন নেতৃত্ব আসার পরে যে প্রত্যাশা ছিল, সে অনুযায়ী উন্নয়ন হয়নি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের পর থেকেই অবনতি চোখে পড়ছে। পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে আমাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।’ এদিকে গত বিপিএলে নানা অনিয়মসহ নানা অভিযোগ ওঠে ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে। এনিয়ে গণমাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে। এনিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘বিপিএলের সত্য অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে আমরা অনিয়ম ও দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেয়েছি। গণমাধ্যমেও এসব উঠে এসেছে। সেই রিপোর্টে ফারুক আহমেদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তাই পরিবর্তন ছিল সময়ের দাবি।’এর আগে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিসিবির ফারুকসহ ১০ সদস্যবিশিষ্ট বোর্ডের মধ্যে ৮ পরিচালক ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানান। চিঠিতে ফারুককে ‘স্বেচ্ছাচারী’ ও ‘আধিপত্যবাদী’ আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। এনিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘বিসিবির ৯ পরিচালকের মধ্যে ৮ জন যখন অনাস্থা জানান, তখন বোঝা যায় বোর্ডে ঐক্য ছিল না। এমন পরিবেশে কাজ করা সম্ভব নয়। ক্রিকেটের ক্রমাগত অবনতি এবং বোর্ডে বিভাজন, সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।’এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আমি কথা বলেছি। এটি দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নয়। নির্বাচকরা যদি দেখেন কোনো একজন খেলোয়াড় প্রতিনিয়ত খারাপ খেলেন, তাকে তো আর দলে রাখবে না। আমাদের দিক থেকেও ব্যাপারটি এমন ছিল। আমরা আবারও ক্রিকেট অংশীজন যারা রয়েছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।’ ফারুক আহমেদকে অপসারণ ও আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে বিসিবির পরিচালক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘দেখতে হবে প্রক্রিয়াটা কী (বিসিবির)। যে দুই জনকে মনোনয়ন দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে এনএসসির, সেই জায়গায় এনএসসি চাইলে মনোনয়ন দিতে পারে, চাইলে সরিয়েও নিতে পারে। এনএসসি তাকে (ফারুক আহমেদ) মনোনয়ন দিয়েছিল, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদের মনে হয়েছে, এখন এই মনোনয়ন রাখার যৌক্তিকতা নেই। আমরা কিন্তু বিসিবি সভাপতিকে অপসারণ করিনি, আমরা তার পরিচালক মনোনয়ন সরিয়ে নিয়েছে। তার প্রক্রিয়া হিসেবে তার সভাপতিত্ব চলে গেছে। পরে আমরা একজন পরিচালককে মনোনয়ন দিয়েছি এবং বোর্ডের যারা রয়েছেন তারা আইসিসির নিয়ম অনুসরণ করে, ক্রিকেট বোর্ডের যে নীতিমালা রয়েছে, সেটি অনুযায়ী আরেকজনকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে।’আরডি
Source: সময়ের কন্ঠস্বর