বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে ভোলার চরফ্যাশনের ২১ ইউনিয়নের মধ্যে ৫ ইউনিয়নের অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারে গবাদিপশুসহ দেড় কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। বাতাসের তীব্র গতি থাকায় এসব এলাকার প্রায় দুই শতাধিক বসতঘর বিধস্ত হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিরতিহীন বৃষ্টি-দমকা বাতাস অব্যাহত রয়েছে উপকূলজুড়ে।বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকালে উপজেলার দূর্যোগকবলিত এলাকা চালচর, কুকরি-মুকরি, চর পাতিলা, মুজিবনগরের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে এসব তথ্য জানিয়েছেন সিপিপি কর্মিরা।চরফ্যাশন বেতুয়া এলাকা সংলগ্ন মেঘনা পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জোয়ারের পানি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অন্তত ৫-৬ ফুট বেড়েছে এবং মেঘনা নদীতে উত্তাল ঢেউ রয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতি ভয়াবহ বিরাজ করছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন মেঘনা পাড়ের বাসিন্দারা।সরেজমিন উপজেলার চর মাদ্রাজ, হাজারীগঞ্জ, জাহানপুর ও চরমানিকা ইউনিয়ন সহ বেশকিছু এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, লঘুচাপের প্রভাবে বেড়িবাঁধের বাইরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে মানুষের ঘরবাড়ি, মাছের ঘের, পুকুর তলিয়ে গেছে। বিকাল ৫ টা পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে জানান স্থানীয়রা।উপজেলার চরমানিকা ইউনিয়ন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইব্রাহিম মোল্লা বলেন, ‘বুধবার রাতে ঝড়ো হাওয়ার প্রভাবে আমার বসতঘরের টিনের চাল উড়িয়ে নিয়ে গেছে। এতে আমার স্ত্রী-সন্তানরা বৃষ্টিতে ভিজে রাত্রি যাপন করেছে। বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে কিভাবে ঘরে থাকবো সেই চিন্তায় রয়েছি।’উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচর ইউনিয়নের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর মাতব্বর মুঠোফোনে বলেন, ‘আমাদের এখানে বেড়িবাঁধ নাই। চরবাসির অবস্থা একেবারে নাজুক। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে পুরো ঢালচর। এই চরে কোনো আশ্রয় কেন্দ্র নাই। যার কারণে আমরা আতঙ্কে রয়েছি।’ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) ঢালচর ইউনিয়ন টিম লিডার মোঃ মনজুর মুঠোফোনে বলেন, ‘সাধারণ জোঁয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হওয়ায় ঢালচর ইউনিয়ন প্রায় পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়াও কোনো সাইক্লোন শেল্টার না থাকায় ঢালচরবাসি ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। এখানকার কাঁচা-পাকা রাস্তাগুলো জোয়ারের প্রবল স্রোতে ভেঙে গেছে।’চরফ্যাশন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) সহকারী পরিচালক কর্মকর্তা মাহাতাউল বারী বলেন, ‘চরফ্যাশন উপজেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে ১৯৭টি ঘূর্ণিঝড় কাম সাইক্লোন সেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একইসাথে দূর্যোগকবলিত এলাকাগুলোতে সিপিপির ৪২০ সেচ্ছাসেবী মোতায়েন করা হয়েছে।’চরফ্যাশন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা বলেন, ‘গত কয়েক দিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।’উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, বঙ্গোপসাগরের লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিনত হয়েছে। এতে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। আমরা চরফ্যাশন উপজেলার বিভিন্ন মৎস্যঘাটে বুধবার সকাল থেকে প্রচারণা চালিয়েছি। যাতে মৎস্যজীবিরা নিরাপদ স্থানে অবস্থান করেন।’উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাসনা শারমিন মিথি বলেন, বঙ্গোপসাগরের লঘু চাপের প্রভাবে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব অঞ্চলের মানুষজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনার জন্য সিপিপি সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া উপজেলায় ১৬৯ টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এবং ফায়ার সার্ভিস, পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ও সিভিল ডিফেন্স, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।’তিনি আরও বলেন, ‘বুধবার প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়ার ফলে অনেক স্থানে বাড়ি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে শুনছি। এসব এলাকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে উর্ধতন কর্মকর্তাকে জানানো হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে সহয়তা প্রদান করা হবে।’এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর