নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে কিশোর গ্যাং আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রতিটি এলাকায় তাদের উপদ্রব ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ওয়ার্ডভিত্তিক বিট পুলিশিং কার্যক্রম, ওপেন হাউস ডে ও পুলিশি টহল না থাকায় অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।সিদ্ধিরগঞ্জে একটি ওয়ার্ডেই চলতি মাসে ২০ দিনের ব্যবধানে পৃথক দুটি স্থানে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে দুই কিশোর খুন হয়। গত বছর ৫ আগস্টের পর কিশোর গ্যাং সদস্যের গ্রুপের নাম পরিবর্তন করে আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা। তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। তারা গভীর রাত পর্যন্ত প্রতিটি এলাকার অলিগলি, দোকানপাট ও রাস্তায় দাঁড়িয়ে আড্ডা দেয়।তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে মারধর, হামলার শিকার, নাজেহাল ও খুন হওয়ার ভয় রয়েছে। তাই সবাই তাদের দৌরাত্ম্য সহ্য করে চলেছে। কিশোর গ্যাং সদস্যরা মাদক বিক্রি ও সেবন করে রাতভর এলাকা চষে বেড়ায়। ফলে বেড়েছে দখলদারি, চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই ও মারামারির মতো ঘটনা। রাজনৈতিক নেতারা তাদের ব্যবহার করে নিজেরা ফায়দা লুটছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। বেশির ভাগ্য অপরাধীর বয়স কম হওয়ায় পুলিশও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না। অতীতের মতো এখনও রাজনৈতিক নেতা কিংবা প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় তারা।সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আকবর হোসেন ‘সময়ের কণ্ঠস্বর’কে জানান, বর্তমানে কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডবে স্থানীয়রা অতিষ্ঠ। আমরা চাই সিদ্ধিরগঞ্জ বাসি শান্তিতে বসবাস করুক।গত ৪ মে সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলের এনায়েতনগরে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে মো. ইয়াছিন (১৬) নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়। নিহত ইয়াছিন সিদ্দিরগঞ্জে ৮ নারা ওয়ার্ডের বাসিন্দা শহিদুল ইসলামের ছেলে। কিশোর গ্যাং ও মাদক কারবারিদের কারণে মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এ এলাকার বাসিন্দারা।এদিকে একই ওয়ার্ডের ধনকুন্ডা লেকপাড়ের ভাণ্ডারীপুল এলাকায় গত শুক্রবার রাতে তর্কের জেরে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে আব্দুল্লাহ খান পায়েল (১৬) নামে কিশোরকে হত্যা করা হয়।সংশ্লিষ্টরা জানান, কিশোর গ্যাং সদস্যদের বয়স ১৪ থেকে ১৮ বছর। এর মধ্যে ১৬-১৭ বছরের কিশোরই বেশি। পুলিশের খাতায় তাদের তালিকা না থাকায় কিংবা বয়স কম হওয়ায় তারা গ্রেপ্তারের বাইরে থেকে যাচ্ছে। মাঝে-মধ্যে গ্রেপ্তার হলেও জামিনে ফিরে এসে তারা আবার আগের মতো নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড শুরু করে। রাতে গার্মেন্টস থেকে ফেরা নারী শ্রমিকরা যেমন তাদের কাছে নিরাপদ নয়, তেমনি সাধারণ পথচারীরাও তাদের হাতে জিম্মি। তারা ইভটিজিং, নারীদের শ্লীলতাহানিসহ কেড়ে নেয় মোবাইল ফোন, নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার। পথচারীদের কাছ থেকেও ছিনিয়ে নেয় মোবাইল ফোনসহ নগদ টাকা। কখনও পথচারীর কাছে টাকাপয়সা না থাকলে তাদের মাদক ব্যবসায়ী আখ্যায়িত করে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা।ভুক্তভোগী পিংকি আক্তার জানান, কিশোর গ্যাং সদস্যদের হাতে নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রভাবশালী মহলের ভয়ে টু শব্দটি পর্যন্ত করে না কেউ। কেউ কেউ থানায় অভিযোগ করলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় নির্যাতিত-ভুক্তভোগীদের অধিকাংশই আইনি সহায়তা নিতে চায় না।পোশাক শ্রমিক রায়হান সিকাদার জানান, কিশোর গ্যাং সদস্যরা পথচারীর মোবাইল ফোন ও টাকা ছিনতাই করে। তারা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় দলবেঁধে চলাফেরা করে।সিদ্ধিরগঞ্জের মিতালীমার্কেট, আদমজী বিহারি কলোনি, কাঁচপুর সেতুর পশ্চিমপাশে বাউন্ডারির মধ্যে, শীতলক্ষ্যা নদীর আটিগ্রামে, পাইনাদি নতুন মহল্লা হাজী শামসুদ্দিন স্কুলের সামনে, শিমরাইল নাফ পরিবহনের গ্যারেজে সিআই কাঠেরপুল চুনা কারখানার সামনে সিদ্ধিরগঞ্জপুল ডিএনডি লেকপাড় দশপাইসহ সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ১০টি ওয়ার্ডের দুই শতাধিক স্পটে চলে রমরমা মাদক ব্যবসা।সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মাদ শাহীনুর আলম ‘সময়ের কণ্ঠস্বর’কে বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘনবসতি এলাকা হওয়ায় অপরাধীদের দৌরাত্ম্য অনেকটাই বেশি। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
Source: সময়ের কন্ঠস্বর