ঢাকার ধামরাইয়ে আবাসিক এলাকায় অনুমোদনহীনভাবে গড়ে উঠেছে সিসা তৈরির কারখানা। এর ফলে চরমভাবে স্বাস্থঝুকিতে রয়েছে ওই এলাকায় বসবাসরত মানুষ।এছাড়া পুরাতন ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির ফলে তিন ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতিসহ বিভিন্ন গাছের ফলমূল ঝরে পড়ছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন গাছ কেটে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করে। সেই কয়লা দিয়ে সিসা গালিয়ে পাটা তৈরি করে। যার কারণে দিন দিন এলাকার গাছপালা উজাড় হচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ।প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে এবং আইনের কোনো তোয়াক্কা না করেই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাথুলি এক্সেল লোড স্টেশনের পশ্চিম পাশে খোলা জায়গায় পুরাতন ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করছে ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের ওবায়দুল নামে এক ব্যক্তি। তিনি নিজের প্রভাব খাটিয়ে এ অবৈধ ব্যবসা করে যাচ্ছেন।পুরাতন ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করার ফলে পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে বলে দাবি এলাকাবাসীর। এই ব্যাপারে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার ফলে উল্টো প্রতিবাদকারীদের বিভিন্ন হামলা ও মামলার ভয় দেখিয়ে এলাকা ছাড়ার হুমকি প্রদান করে কারখানা কর্তৃপক্ষ।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিসা কারখানার মালিক ওবায়দুল পাশাপাশি দুটি জায়গায় ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করছে। এর ফলে আশপাশের বাড়ির টিনের তৈরি ঘরগুলোর টিন ছিদ্র ছিদ্র হয়ে গেছে। কারণ পুরাতন ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির ফলে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসে ভেসে আসে ঝাঁঝালো গন্ধ, যা মানুষ এবং পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। রাতের আঁধারে শ্রমিকরা কোনোপ্রকার নিরাপত্তা বালাই না রেখে খোলা জায়গায় হাত-মুখে গ্লাভস ও মাস্ক না পরে আগুন জ্বালিয়ে পুরাতন ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করে।শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, এইভাবে রাতে একই চুল্লিতে পুরাতন ব্যাটারি পুড়িয়ে সেই ব্যাটারি থেকে সিসা বের করা হয়। পরে সেই সিসা আবার লোহার তৈরি কড়াইয়ে ঢেলে পাটা তৈরি করা হয় এবং প্রতিটি পাটার ওজন প্রায় ৩০/৩২ কেজি। পরে সেগুলো বাজারে বিক্রি করা হয়।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশে এই কারখানার কারণে আমিসহ আমার বাড়ির ছোট ছোট বাচ্চাদেরও শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আমিসহ এলাকার সবাই মিলে ওবায়দুলকে বারবার নিষেধ করেছি। উল্টো সে আমাদের বিভিন্ন ধরনের মামলা হামলার ভয়-ভীতি দেখায়। আমরা এখন অসহায় হয়ে পড়েছি।’পুরাতন ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির এক মিস্ত্রি বলেন, ‘কাগজপত্র সম্পর্কে আমরা কিছু বলতে পারব না। মালিক ভালো বলতে পারবেন। আমরা জানি এই কাজ করলে আমাদের বিভিন্ন ধরনের অসুখ হবে, কী করব পেটের দুঃখে কাজ করে খাই।’এই বিষয়ে এক পথচারী বলেন, ‘পুরোনো ব্যাটারির সিসা গলানোর কারণে এলাকার অনেক মানুষের বিভিন্ন ধরনের রোগবালাইসহ শ্বাসকষ্টের রোগ হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। এসিডযুক্ত ধোঁয়া নির্গত হওয়ায় আশপাশের জমির ফসলেরও অনেক ক্ষতি হচ্ছে।’ব্যাটারি কারখানার মালিক ওবায়দুল বলেন, ‘আমরা ব্যাটারি কারখানা থেকে ওয়েস্টেজ (বর্জ্য) এনে সেগুলো থেকে সিসা বের করে আগুনে গালিয়ে পাটা আকারে তৈরি করে বাজারে বিক্রি করি। আমরা কারও কোনো ক্ষতি করি না।’ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, ‘সিসা এমনই এক খারাপ পদার্থ, এটা যেখানে পড়বে সেখানে কোনো ধরনের ফসল হবে না। হলেও সেটা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর।’উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাফফাত আরা সাঈদ বলেন, ‘অবৈধ সিসা কারখানার মালিকের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, মানবদেহের জন্য হুমকিস্বরূপ ও জমির ফসলের জন্য ক্ষতিকর সেই কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে।’এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর