চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত দেশের অন্যতম রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা লিমিটেড (সিইউএফএল) ২৭ বছর ধরে কৃষি ও শিল্পখাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। ১৯৯৭ সালের ২৯ অক্টোবর যাত্রা শুরু করা এই প্রতিষ্ঠানটি দেশের সার সরবরাহে নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে কাজ করে আসছে।উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুসারে, জাপানি একটি প্রতিষ্ঠানের কারিগরি সহায়তায় গড়ে ওঠা সিইউএফএল নির্মিত হয়েছে প্রায় ৩৯০.৭৭ একর জমির ওপর। প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিল ১৫৫৬.৩০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ১১৫৯.৯১ কোটি টাকা ছিল বৈদেশিক মুদ্রায় এবং ৩৯৬.৩৯ কোটি টাকা স্থানীয় মুদ্রায়।বর্তমানে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প কর্পোরেশন (বিসিআইসি)-এর অধীন এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৪ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে মিজানুর রহমান প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে আছেন।সিইউএফএল-এর প্রশাসনিক কাঠামো অনুযায়ী, বর্তমানে কারখানাটিতে ১ জন ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ২ জন মহাব্যবস্থাপক, ৭ জন অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক, ৩৪ জন ব্যবস্থাপক, ৪৮ জন উপ-ব্যবস্থাপক, ৬৯ জন সহকারী ব্যবস্থাপক এবং ৩৩ জন জুনিয়র অফিসার কর্মরত রয়েছেন। সব মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ৬৫০জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শ্রমিক রয়েছেন। তবে চলতি বছরে কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম একাধিকবার ব্যাহত হয়েছে। গত ১১ এপ্রিল ২০২৫ থেকে গ্যাস সংকটে সার উৎপাদন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে। এর আগে ৩ জানুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কারখানাটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ ছিল।সিইউএফএল সূত্রে জানা গেছে, কারখানাটির দৈনিক প্রয়োজন ৪৮ থেকে ৫২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে, এটি প্রতিদিন ১,২০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া এবং বার্ষিক ৩ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন অ্যামোনিয়া উৎপাদন করতে পারে।বিশ্বস্ত সূত্রের দাবি, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) একটি সিন্ডিকেটের সহায়তায় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)-কে ম্যানেজ করে সিইউএফএল-কে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করতে বাধ্য করেছে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রকৃতপক্ষে গ্যাসের কোনো সংকট নেই।এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিইউএফএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান প্রথমে ব্যস্ততার অজুহাতে মন্তব্য এড়িয়ে যান এবং পরে ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টাও ব্যর্থ হয়।অন্যদিকে, কেজিডিসিএল-এর মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী মো. আমিনুর রহমান সময়ের কন্ঠস্বরকে জানান, “আমাদের বৃহৎ সরকারি গ্রাহকদের মধ্যে পেট্রোবাংলা, বিডিবি ও বিসিআইসি গ্যাস সরবরাহের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে। তারা কোন কারখানাগুলো চালু থাকবে, সেই সিদ্ধান্ত তারাই দেন। আমাদের গ্যাস সংকট নেই।”দীর্ঘদিন ধরে দেশের কৃষি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাটি বর্তমানে চরম অনিশ্চয়তার মুখে। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, সিইউএফএল-এর উৎপাদন সচল রাখতে দ্রুত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর