কুমিল্লার শহর ও গ্রামের নানা এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এক প্রকার সংক্রামক চর্মরোগ ‘স্ক্যাবিস’। সাধারণত হাত, পা, পেট, ঘাড়, কোমরসহ শরীরের বিভিন্ন ভাঁজে লালচে খোসা উঠে এবং তীব্র চুলকানির সৃষ্টি করে এই রোগ। চিকিৎসা না নিলে এই রোগ কিডনি পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।নগরীর রেইসকোর্স এলাকার শিশু তাওহিদের শরীর এখন লাল ছোট ছোট র্যাশে ভরা। তার বাবা জামাল হোসেন জানান, ‘আমার ছোট ছেলে তাওহিদ আগে আক্রান্ত হয়। পরে তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র থেকে ভাই জোনায়েদ, তানজিদ ও তাদের মা আসমা আক্রান্ত হয়। চিকিৎসা নিচ্ছি, কিন্তু তেমন উন্নতি নেই।’শুধু রেইসকোর্স নয়, শহরের শাসনগাছা ও তালপুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দারাও এই রোগে ভুগছেন। শাসনগাছার বাসিন্দা রিকশাচালক জালাল মিয়া বলেন, ‘প্রথমে আমার মেয়ের হাতে ঘামাচির মতো র্যাশ উঠলো। পরে আমার হাত-পায়েও ছড়ায়। রাতে ঘুমাইতে পারি না, খুব চুলকায়। ডাক্তার কইছে, কি জানি এক চর্মরোগ হইছে। ট্যাবলেট আর মলম দিছে, কিন্তু বউয়ের শরীরেও ছড়ায়া গেছে।’তালপুকুরপাড়ের গার্মেন্টসকর্মী রোকসানা আক্তার বলেন, ‘আমাদের বাসায় তিনজনই আক্রান্ত। প্রথমে আমার শরীরে দেখা দেয়, পরে মেয়ের ও শাশুড়ির শরীরেও ছড়ায়। এখন আমরা সবাই চিকিৎসা নিচ্ছি। চিকিৎসা নিতে দেরি করায় শরীর ফুলে গেছে, ব্যথাও হয়। এ রোগ খুব কষ্টকর।’কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের চিকিৎসক ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী জানান, ‘প্রতিদিন ২০০’র বেশি রোগীর চিকিৎসা করি। এদের ৭০ শতাংশই স্ক্যাবিসে আক্রান্ত। এই রোগে হাত-পা, পেট, আঙুলের ফাঁকে ও কোমরের ভাঁজে তীব্র চুলকানিসহ খোসা দেখা দেয়। সরাসরি সংস্পর্শে আসা বা পোশাক, তোয়ালে, বিছানার চাদর ব্যবহারের মাধ্যমে এটি দ্রুত ছড়ায়।’তিনি বলেন, ‘একই পরিবারের একাধিক সদস্য একসঙ্গে চিকিৎসা না নিলে সংক্রমণ বারবার ফিরে আসে। সঠিক ও সময়মতো চিকিৎসা না নিলে জটিলতা বাড়ে। স্ক্যাবিস কিডনির ক্ষতিও করতে পারে।’কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির বলেন, ‘গরম-শীত ও বর্ষায় স্ক্যাবিস সংক্রমণ বাড়ে। এটি যৌনমাধ্যমেও ছড়াতে পারে। তবে এটি চিকিৎসাযোগ্য রোগ। দ্রুত চিকিৎসা না নিলে পুরো পরিবার আক্রান্ত হয়। তাই সকলকে সতর্ক হতে হবে এবং সচেতনতা বাড়াতে হবে।’জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্র জানায়, মুরাদনগর ও দেবিদ্বার উপজেলায় স্ক্যাবিস সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি। এছাড়া কুমিল্লা নগরের নিম্নবিত্ত ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতেও রোগটি দ্রুত ছড়াচ্ছে।জেলারচিকিৎসকরা বলছেন, রোগ প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত আলাদা করে চিকিৎসা দেওয়ার বিকল্প নেই। রোগীকে যে ব্যবহার করেছে এমন কাপড়, তোয়ালে ও বিছানার চাদর গরম পানিতে ধুয়ে রোদে শুকানোর পর ব্যবহার করতে হবে।এদিকে, জোলার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এলাকায় সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছেন। তবে তাদের কার্যক্রম সীমিত।এআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর