চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রশাসনে সম্প্রতি একটি ঘটনায় তীব্র বিতর্ক ও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) পদে এক কর্মকর্তা মৌখিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পরও তাকে পদোন্নতি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন নিজেই সংশ্লিষ্ট প্রমোশন আদেশ বাতিল করেন।চসিকের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) রুপক চন্দ্র দাশ গত ৬ মার্চ অনুষ্ঠিত মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ২০ নম্বরের মধ্যে ৯ নম্বর পান, যেখানে পাস নম্বর ছিল ১০। ফলত তিনি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। তবে এরপরও ২১ এপ্রিল জারি করা এক অফিস আদেশে রুপক চন্দ্র দাশসহ চারজনকে সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। উক্ত অফিস আদেশ এবং পরীক্ষার ফলাফলের উভয় নথিতেই মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের স্বাক্ষর থাকায় প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মচারী চাকরি বিধিমালা ২০১৯ অনুযায়ী, সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) পদে পদোন্নতির জন্য ন্যূনতম ৮ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা এবং মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক। রুপকের ক্ষেত্রে এই দুটি শর্ত পূরণ না হলেও তাকে প্রমোশন দেওয়া হয়, যা সংশ্লিষ্ট নিয়মনীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন।সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ৬ মার্চের ওই পরীক্ষায় মোট আটজন প্রার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হন মাত্র তিনজন। এরমধ্যে মু. সরওয়ার আলম খান, জাহাঙ্গীর হোসেন এবং ফখরুল ইসলাম। একজন অনুপস্থিত ছিলেন, বাকি চারজন ফেল করেন, যাদের মধ্যে একজন রুপক চন্দ্র দাশ।প্রমোশনের আদেশ জারির পর সময়ের কণ্ঠস্বরসহ একাধিক গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশিত হলে তা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। চাপে পড়ে তড়িঘড়ি করে মেয়রের স্বাক্ষরে জারি হয় আরেকটি অফিস আদেশ, যেখানে রুপক চন্দ্র দাশের পদোন্নতি বাতিল করা হয়।ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে সুশাসন, নিয়মনীতির প্রয়োগ এবং রাজনৈতিক প্রভাবের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, এ ঘটনায় তদবির ও ক্ষমতার অপব্যবহারের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি এবং প্রমোশন আদেশ বাতিল করা হয়েছে। নিয়ম লঙ্ঘনের কোনো সুযোগ নেই।’ প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু আদেশ বাতিল করলেই দায় শেষ হয় না। এমন অনিয়ম কীভাবে ঘটল এবং কারা এর পেছনে ছিলেন— তা নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বের করা জরুরি। তা না হলে এ ধরনের নজির প্রশাসনের ভিত দুর্বল করতে পারে।এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অভ্যন্তরীণ নিয়মনীতির কার্যকারিতা ও মেয়রের প্রশাসনিক দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।এসকে/আরআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর