কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, “কুমিল্লার অনেক উপজেলায় বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল চলে আওয়ামী লীগের টাকায়।” তিনি আরও বলেন, “এখন সময় এসেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আওয়ামী লীগের সম্পূর্ণ অর্থ কাঠামো ধ্বংস করে দিতে হবে এবং দলটির সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে।” শুক্রবার কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত “জুলাই ২৪ বিপ্লব” স্মরণে আয়োজিত ‘জুলাই সমাবেশে’ সভাপতির বক্তব্যে এক বিস্ফোরক মন্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।এ সময়, হাসনাত বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ও রোহিঙ্গাদের মানবিক করিডোর ইস্যু বলেন, “বাংলাদেশকে আমরা কোনও পরাশক্তির কাছে বন্ধক রাখতে চাই না। মানবিক করিডোর নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে। আমরা কোনও ধোঁয়াশা দেখতে চাই না।”এ সময়, সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, “২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে ট্রাইবুনাল-২ গঠনের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। মে মাস প্রায় শেষের পথে, অথচ ট্রাইবুনালের কোন অগ্রগতি নেই। আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল স্যারের কাছে জানতে চাই—এখনো কেন ট্রাইবুনাল-২ গঠন হয়নি।” তিনি আদালতে হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত আসামীদের জামিন মঞ্জুরের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “এ ধরনের ঘটনা আমাদের বিচারের প্রতি আস্থা নষ্ট করছে। শিক্ষার্থীরা আপনার (আসিফ নজরুল) প্রতি আশাবাদী। অনুগ্রহ করে তাদের প্রত্যাশার মূল্য দিন।”নির্বাচন ও সংস্কার প্রসঙ্গে স্পষ্ট অবস্থান জানিয়ে হাসনাত বলেন, “আমরা চাই খুনিদের বিচার নিশ্চিত করেই সংস্কারের মধ্য দিয়ে নির্বাচন হোক। যদি বিচার না হয়, তাহলে নির্বাচন অর্থহীন। আওয়ামী লীগ অতীতে নির্বাচনের মাঠ এমনভাবে তৈরি করেছে যেখানে অন্য কোন দল খেলতে পারে না। সেই মাঠ আগে সংস্কার করতে হবে। নির্বাচন কমিশনেরও সংস্কার জরুরি।” এসময়, তিনি অভিযোগ করেন, “সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে স্ব-শরীরে পেপার জমা দেয়ার একটি প্রস্তাব উঠেছিল, কিন্তু তা নাকচ করা হয়েছে। আমার প্রশ্ন, স্ব-শরীরে এসে কাগজপত্র জমা দিতে সমস্যা কোথায়। নির্বাচন কমিশন কেন এমন প্রস্তাবে রাজি হয়নি, তা খতিয়ে দেখতে হবে।”আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট প্রসঙ্গে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “এই দলগুলোকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কী ভাবছে, তা আমাদের স্পষ্ট করে জানাতে হবে। আমরা রাস্তায় না নামা পর্যন্ত কেন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।” বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখতে গিয়ে হাসনাত অভিযোগ করেন, “বৈষম্যবিরোধী ব্যানার ব্যবহার করে কেউ কেউ তদবির বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ছে। আমি তাদের সতর্ক করে দিতে চাই, এ ধরনের কাজ করবেন না। আমরা প্রশাসনকে সহযোগিতা করব এদের চিহ্নিত করতে।”জুলাই ঘোষণাপত্র প্রসঙ্গে হাসনাত বলেন, “আগামী ২৬ কর্মদিবসের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে হবে, যেখানে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকবে। অন্যথায় আমরা আবারও রাজপথে নামবো।” চলমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রসঙ্গে হাসনাত আবদুল্লাহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো খুবই সাধারণ। তারা থাকার ব্যবস্থা চায়, পড়তে চায়। এগুলো পূরণ করতে অতি দ্রুত আপনারা আলোচনায় বসুন, সিদ্ধান্ত নিন। সবশেষে তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমাদের ঐক্যে যদি ফাটল ধরে, তাহলে কারা লাভবান হবে তা আমরা জানি। তাই কুমিল্লার স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলকে এক হতে হবে। আওয়ামী লীগ যদি আবার ক্ষমতায় আসে, তাহলে কুমিল্লাকে আলাদা রাজ্যে রূপান্তর করবে। কারণ, শেখ হাসিনা ও তার পিতার দীর্ঘদিনের দুঃস্বপ্ন ছিল এই কুমিল্লা।”সমাবেশে কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণার দাবিও তোলেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, “কুমিল্লা নামেই বিভাগ ঘোষণা করতে হবে। এই বিষয়ে আপনাদেরকে সাথে নিয়েই আমরা কাজ করবো” “কুমিল্লার বীর ও বীরত্বগাথা” শীর্ষক এই সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন জুলাইয়ের কণ্ঠস্বর ‘ফেস দ্যা পিপল’ সম্পাদক সাইফুর সাগর। এসময়, প্রধান বক্তার বক্তব্যে সাইফুর সাগর বলেন, প্রায় নয় বছর আমি দেশের বাইরে ছিলাম। যাদের কারণে আমি দেশে আসার সুযোগ পেয়েছি তারা হচ্ছে ৫ই আগস্টে যারা নিজের জীবন বাজি রেখেছিল এবং যারা নিজের জীবনও দিয়েছিল। তারা যদি তখন নিজের জীবন বাজি না রাখত তাহলে আজকে আমরা এখানে থাকতে পারতাম না। তবে, আমার এখন কিছু বিষয়ে হতাশা ও ব্যর্থতা মনে হয়। সেগুলো হলো আজ আমরা দেখলাম শহীদদের পরিবারেরা কান্নাকাটি করছে, বিচারের দাবিতে। আমার অবাক লাগে এ বিষয়ে ভেবে যে শহীদদের পরিবারকে কেন কাঁদতে হবে। আর কুমিল্লার জন্য দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, কুমিল্লায় এয়ারপোর্ট আছে কিন্তু প্লেন নাই, রেললাইন আছে ট্রেন নাই, সমন্বয়ক আছে সমন্বয় নাই, উপদেষ্টা আছে উন্নয়ন নাই, পুলিশ আছে কিন্তু অ্যাকশন নেই। তিনি আরো বলেন, আমরা কুমিল্লার মানুষেরা রাজনৈতিক সরকারের আমলেও কিছু পাইনি এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়কালও আমরা কিছু পাইনি। আমাদেরকে ২৪ এর আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। কেউ যদি ২৪ এর আন্দোলনকে নিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করে তাহলে জুলাই এর যোদ্ধারা আবারো মাঠে নেমে আসবে।এসময়, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক ও এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব রিফাত রশিদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক নাভিদ নওরোজ শাহ ও এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন শিশির, শহীদ সাদমানের মা কাজী শারমিন, শহীদ ইমাম হাসানের ভাই রবিউল আউয়াল, ড. ফয়জুল ইসলাম, শহীদ ইমাম হাসানের ভাই রবিউল আউয়াল, শহীদ রবিনের মা পারভীন আক্তার, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিকুর রহমান ওয়াসিম, সচেতন রাজনৈতিক ফোরাম কুমিল্লার প্রধান সমন্বয়ক ড. শাহ্ মো: সেলিম, আমার বাংলাদেশ পার্টির মহানগর সভাপতি জি এম সামদানী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কুমিল্লা মহানগরের সভাপতি এম এম বিল্লাল হুসাইন, সাংবাদিক শাহাজাদা এমরান প্রমুখ।এছাড়া, সমাবেশে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। এসময়, সমাবেশে ৩৮ জন শহীদের পরিবারকে ও ৩০ জন আহত পরিবারকে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।এফএস
Source: সময়ের কন্ঠস্বর