প্রায় ছয় বছর ধরে চলে নির্মাণ। কোটি কোটি টাকা খরচ করে গড়ে তোলা হয় দৃষ্টিনন্দন স্টেশন ভবন, প্ল্যাটফর্ম, আধুনিক টিকিট কাউন্টার। সবই আছে সাতকানিয়া রেলওয়ে স্টেশনে। শুধু নেই একটি সোজা সংযোগ সড়ক। ফলে ট্রেনে চড়ে গন্তব্যে পৌঁছালেও স্টেশনে পৌঁছাতেই যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই।চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথের গুরুত্বপূর্ণ এই সংযোগস্থলটি এখন যাত্রীদের জন্য যেন এক বিড়ম্বনার নাম। স্টেশনের পূর্ব পাশে কিছু অংশে পিচঢালাই থাকলেও তা যাতায়াতের জন্য কার্যত অপ্রতুল। পশ্চিম পাশে আছে শুধু একটি অগভীর আলপথ। বর্ষায় সেই পথ তলিয়ে যায় কাদা আর পানিতে। এ পথে রিকশা চলে না, হাঁটা যায় না—যাত্রীদের পক্ষে স্টেশনে পৌঁছানো হয়ে পড়ে এক দুঃসাহসিক অভিযান।সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির ওপর দিয়ে কয়েকটি অস্থায়ী সিঁড়ি বসানো হয়েছে। যাত্রীরা জীবন নিয়ে খেলে এই অস্থায়ী সিঁড়ি ভরসা করেই ট্রেনে ওঠেন। কোনো নিরাপত্তা নেই, নেই স্থায়ী সমাধান।সরকার বলেছিল, রেল যাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে, গতি ফিরবে গ্রামের অর্থনীতিতে। কিন্তু সাতকানিয়ায় দাঁড়িয়ে সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবতা দেখছে না। আধুনিক ভবন দাঁড়িয়ে আছে, তবে যাত্রী নেই, সড়ক নেই। উন্নয়ন শুধু দৃশ্যমান ভবনের দেয়ালে মানুষের পায়ে নয়।স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল ইসলাম সবুজ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রেলস্টেশনে যেতে হলে বর্ষাকালে হেঁটেই পার হতে হয়। সড়ক না থাকায় মালামাল আনা-নেওয়াও দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমরা মাল আনতে চেয়েছিলাম ট্রেনে। কিন্তু স্টেশনে কোনো যানবাহন পৌঁছায় না দেখে বাধ্য হয়ে সড়ক পথেই ফিরে গেছি।সাতকানিয়া সাংবাদিক সমিতির সভাপতি শহীদুল ইসলাম বাবর বললেন, এখানে রেল এসেছে ঠিকই, কিন্তু ব্যবসায়ীরা রেল ব্যবহার করছেন না, কারণ সংযোগ সড়ক নেই। এটি উন্নয়নের প্রতি চরম অবহেলার দৃষ্টান্ত।স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের সাবেক পরিচালক আবুল কালাম আজাদ চৌধুরী বলেন, স্টেশনের পূর্ব পাশে অধিগ্রহণকৃত জায়গায় কিছুটা পিচ ঢালাই করা হয়েছে। তবে প্রকল্পের বাইরের কাজে হাত দেওয়ার সুযোগ আমাদের নেই। এলজিইডিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।তবে এলজিইডির সাতকানিয়া উপজেলা প্রকৌশলী সবুজ কুমার দে জানালেন ভিন্ন কথা, আমাদের কাছে এখনো কোনো চিঠি আসেনি। বিষয়টি অবগত না।প্রশাসনের একপাশে চিঠি গেছে, অন্যপাশে চিঠি আসেনি এই দাবিদাওয়ার মাঝখানে পিষ্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষ। রেলযাত্রার স্বপ্ন দেখা যাত্রীরা দিনের পর দিন পড়ে আছেন একই দুর্ভোগে।সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস বলেন, সংযোগ সড়ক থাকা জরুরি। রেল কর্তৃপক্ষ ও এলজিইডির সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।এদিকে, বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. সবুক্তগীন বলেন, রেল প্রকল্পের দায়িত্ব এখনো বুঝে নেওয়া হয়নি, তাই মন্তব্য করা যাচ্ছে না।অপরদিকে রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মং ইউ মারমা জানালেন, প্রতিদিন গড়ে ৭০ থেকে ৮০ জন যাত্রী যাতায়াত করেন এই স্টেশন দিয়ে। কিন্তু সড়ক না থাকায় যাত্রীদের বেশিরভাগই ফিরে যাচ্ছেন কিংবা বাধ্য হচ্ছেন চরম কষ্ট করে চলাচলে।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর