“স্থাপত্য বিভাগ প্রতিষ্ঠার বারো বছর হয়ে গেছে। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর এখনও এই বিভাগের নির্দিষ্ট ক্লাসরুম নেই, কাজ করার জন্য স্টুডিও নেই। আমরা উদ্বাস্তুর মতো একদিন এই বিল্ডিংয়ে ক্লাস করি আরেকদিন অন্য বিল্ডিং এ কাজ করি। এতো বছর পরও আইএবি (IAB) অ্যাক্রিডেশন আমাদের নেই। নিজেদের পরিচয়টা পর্যন্ত দিতে পারিনা কোথাও। কয়েকবছর ধরে প্রশাসন শুধু আশ্বাসই দিয়ে যাচ্ছে। বিভাগের বয়স বারো বছর হয়ে গেলেও নূণ্যতম উন্নতি আমাদের হয়নি।” কথাগুলো বলছিলেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব শাহরিয়ার। সোমবার (১২ মে) সকাল সাড়ে দশটা থেকে  আইএবি অ্যাক্রেডিটেশন, শিক্ষক সংকটসহ সেশনজট দূর করা, নির্দিষ্ট ক্লাসরুম এবং স্টুডিও বরাদ্দের দাবিতে একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান নেন স্থাপত্য বিভাগের চলমান সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, ২০১৪ সাল থেকে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যক্রম শুরু হয় স্থাপত্য বিভাগের। বর্তমানে ইন্জিনিয়ারিং অনুষদের অন্তর্ভুক্ত থাকা এ বিভাগটি প্রতিষ্ঠার ১২ বছরে পদার্পণ করলেও বিভাগটিতে কাটেনি ক্লাসরুম এবং শিক্ষক সংকট। বারো বছরে শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পেরেছে মাত্র তিনটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে চলমান সাতটি ব্যাচের জন্যও নেই পর্যাপ্ত ক্লাসরুম এবং স্টুডিও সুবিধা। ফলে অনেকটা ধুঁকে ধুঁকে চলছে এই বিভাগটির শিক্ষা কার্যক্রম। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের স্নাতক ডিগ্রী পাঁচ বছর মেয়াদী হলেও সেশনজটের কারণে তা সম্পন্ন করতে সময় লাগছে ৭.৫-৮ বছর। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির অন্যান্য বিভাগের ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অনেক আগেই তাদের স্নাতক ডিগ্রী শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়লেও স্থাপত্য বিভাগের ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এখনও পঞ্চম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারে অধ্যয়নরত। একই অবস্থা বিভাগটির ২২ ব্যাচের ক্ষেত্রেও। যেখানে অন্যান্য বিভাগের একই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই দ্বিতীয় বর্ষ শেষ করেছে সেখানে স্থাপত্য বিভাগের ২২ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের এখনও দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারই শেষ হয়নি। এছাড়াও যে চারটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বের হয়ে গেছে তাদেরও সময় লেগেছে সাত থেকে আট বছর করে। এই বিভাগের চলমান সাতটি ব্যাচে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ৩৫০ জন এবং শিক্ষক রয়েছেন ৮ জন। বর্তমান শিক্ষকদের মধ্যে ৩ জন শিক্ষাছুটিতে থাকায় ৫ জন শিক্ষক দিয়েই চলছে এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার কার্যক্রম। বিশ্বব্যাপী উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাতের ন্যূনতম মানদণ্ড ধরা হয় ১:২০। অর্থাৎ ২০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে কমপক্ষে একজন শিক্ষক থাকতে হবে। কিন্তু বিভাগটিতে ৩৫০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে বর্তমানে ৫ জন শিক্ষক হিসাব করলে যার অনুপাত হয় ১:৭০। শিক্ষক সংকট কাটাতে সর্বশেষ দুটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ৪ জন শিক্ষক নিয়োগ হলেও যোগদান করেছেন মাত্র ১ জন শিক্ষক। শিক্ষক নিয়োগ হলেও প্রশাসনের ধীরগতির কারণে তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগে ৬ মাস থেকে ১ বছর। ফলে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরাও অন্য প্রতিষ্ঠানে যোগদান করায় ফাঁকা পরে থাকে এসব পদ। যার কারণে আর দূর করা সম্ভব হয়নি শিক্ষক সংকট। শিক্ষক সংকটের পাশাপাশি এ বিভাগটিতে ক্লাসরুম এবং স্টুডিও সংকটও প্রবল। অন্যান্য ডিগ্রি থেকে এ বিভাগটির ল্যাব, ক্লাসরুম, চেয়ার-টেবিলও প্রয়োজন হয় আলাদা ধরনের। ফলে নিজস্ব ক্লাসরুম ছাড়া অন্য কোথাও এ বিভাগের পাঠদান সম্ভব নয়। এরপরও প্রতিষ্ঠার দশবছর পার হলেও এখনও পর্যন্ত অনেক আসবাবপত্র এবং যন্ত্রপাতি আনা হয়নি শিক্ষার্থীদের ল্যাব এবং ক্লাসরুমের জন্য। তৈরি করা হয়নি আলাদা কোন স্টুডিও। ফলে বিভিন্ন একাডেমিক ভবনে ধুকে ধুকে চলছে তাদের স্টুডিওকেন্দ্রিক কার্যক্রম। নবনির্মিত কুদরত-ই-খুদা একাডেমিক ভবন নির্মাণের পূর্বে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম স্থাপত্য বিভাগের জন্য জায়গা বরাদ্দ দেয়ার আশ্বাস দিলেও তা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। সেই ভবনে ইন্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির অন্য বিভাগগুলো স্থানান্তর করে পূর্বের ইন্জিনিয়ারিং বিল্ডিং (একাডেমিক ভবন-২) পুরোটা স্থাপত্য বিভাগের জন্য বরাদ্দ করলেও সেখানে ল্যাব স্থাপনের জন্য কোন বরাদ্দ এখন পর্যন্ত না দেয়ায় পরিপূর্ণভাবে শিক্ষা কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি।শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বলেন, আর্কিটেকচারের দাবিগুলো যৌক্তিক। আমরা ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি। ভিসি স্যার না থাকায় প্রশাসন একদিন সময় চেয়েছে। আশা করি দ্রুত যৌক্তিক সমাধান দিতে পারব।বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, আইএবি অ্যাক্রেডিশনের জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ ও সিএসই অনুষদের শিক্ষকদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। আর দশতলা একাডেমিক ভবনের ফ্লোর ও রুম পুনরায় বণ্টনের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে অনেক আগেই। সমস্যা হলো যারা আগের ডিস্ট্রিবিউশন অনুযায়ী ফ্লোর পেয়েছে তারা কেউ ছাড়তে চাচ্ছে না। আর শিক্ষক সংকট ও সেশনজট নিরসনে আমরা বলেছি প্রয়োজনে গেস্ট টিচার আনতে।এসআর

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
‘শেষ’ থেকেই ‘শুরু’ করলো লেভারকুজেন
‘শেষ’ থেকেই ‘শুরু’ করলো লেভারকুজেন

জার্মান বুন্দেসলিগায় আগের মৌসুমে ঝলক দেখিয়েছিল বায়ার লেভারকুজেন। অপরাজিত থাকার রেকর্ডে ইউরোপের সকল দলকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল জাভি আলোনসোর দল।

উমর আমিনের ১৭৭, রান পাহাড়ে চাপা বাংলাদেশ ‘এ’
উমর আমিনের ১৭৭, রান পাহাড়ে চাপা বাংলাদেশ ‘এ’

প্রথমদিনে বল হাতে আগুন ঝরিয়ে নাসিম শাহরা দাপট দেখিয়েছেন। দ্বিতীয় দিন চলে ব্যাটারদের রাজত্ব। তাতে পাকিস্তান শাহীন্সের রান পাহাড়ে চাপা Read more

দেশে আওয়ামী স্টাইলে কোনো নির্বাচন হবে না: রফিকুল ইসলাম
দেশে আওয়ামী স্টাইলে কোনো নির্বাচন হবে না: রফিকুল ইসলাম

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, কোনো কোনো দল মনে করছেন তারা ক্ষমতায় এসে উনারা আওয়ামী Read more

আজ ১৪ মে, রাশিফলে কী আছে জেনে নিন
আজ ১৪ মে, রাশিফলে কী আছে জেনে নিন

প্রতিটি রাশির নিজস্ব স্বভাব এবং গুণ-ধর্ম থাকে, তাই প্রতিদিন গ্রহের স্থিতি অনুসারে তাদের সঙ্গে যুক্ত জাতকের জীবনে নানা ধরনের ঘটনা Read more

পাকিস্তানে পর পর ১৬ বার ভূকম্পন অনুভূত
পাকিস্তানে পর পর ১৬ বার ভূকম্পন অনুভূত

পাকিস্তানের করাচিতে গতকাল রোববার পর পর ১৬ বার ভূকম্পন অনভূত হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ জুন) এ তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানের ভূতাত্ত্বিক দপ্তরের Read more

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন