ছেলেকে নিয়ে ছিল হাজারো স্বপ্ন। লেখাপড়া শেষ করে ভালো একটা চাকরি করবে, হয়তো বিয়েও দেবে ভালো ঘরে। কিন্তু সব স্বপ্ন থেমে গেল ভূমধ্যসাগরের বুকেই। পাঁচ মাস আগে লিবিয়া থেকে ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রা করা ট্রলার ডুবে নিখোঁজ হন শিবচরের তরুণ রিফাত তালুকদার। সেই রিফাতের লাশ বাড়ি ফিরেছে দীর্ঘ অপেক্ষা আর অশ্রুজলের পর।রিফাত মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার দ্বিতীয়খন্ড ইউনিয়নের তালুকদার কান্দি গ্রামের হুমায়ুন তালুকদার ও শিল্পী বেগম দম্পতির একমাত্র সন্তান। গত বছরের অক্টোবর মাসে দালালের মাধ্যমে দেশ ছাড়েন তিনি। স্বপ্ন ছিল ইতালিতে পৌঁছে একটি ভালো জীবন গড়ার। কিন্তু ভাগ্য ছিল না সহায়।লিবিয়ায় দুই মাস অপেক্ষার পর গত ১৮ ডিসেম্বর একটি ট্রলারে করে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ঘটে দুর্ঘটনা। মাঝ সাগরে ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ডুবে যায় ট্রলার। এতে গুরুতর আহত হন রিফাত। উদ্ধার করে তাকে লিবিয়ার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।মৃত্যুর খবর পৌঁছায় না সঙ্গে সঙ্গে। ট্রলারে ওঠার পর থেকেই পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরিবার বারবার খোঁজ নিয়েও ব্যর্থ হয়। অবশেষে চলতি বছর পবিত্র রমজানের শেষ দিকে খবর আসে—রিফাত আর বেঁচে নেই, লাশ পড়ে আছে লিবিয়ার একটি হাসপাতালের মর্গে।এর আগে, ৫ জানুয়ারি রিফাতের সন্ধানের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন তার পরিবার। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর অবশেষে শনিবার (১০ মে) বিকেলে রিফাতের মরদেহ আসে নিজ বাড়িতে। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।রিফাতের বাবা হুমায়ুন তালুকদার ভেঙে পড়া কণ্ঠে বলেন, ‘একটাই সন্তান আমার। বিদেশ যেতে দিতে চাইনি, কিন্তু শুনল না। সাগরে ট্রলার ডুবির পর আশায় ছিলাম, হয়তো কোথাও বেঁচে আছে। কিন্তু রমজানে খবর পাই, সে আর নেই।’রিফাতের মামা হাবিব মুন্সী বলেন, ‘অনেক খোঁজার পর আমরা জানতে পারি ওর লাশ লিবিয়ায় আছে। অনেক প্রক্রিয়া শেষে লাশ বাড়িতে আনতে পারলাম। ভাগিনাকে হারিয়ে আমরা শেষ।’স্থানীয় ইউএনও পারভীন খানম বলেন, ‘এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। পরিবারটির পাশে থাকার চেষ্টা করছি।’এনআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর