রাজধানীর আদাবর এলাকা থেকে হারিয়ে যাওয়া ‘জিপসি’ নামের সান কনিউর প্রজাতির পোষা পাখিটি ১২দিন পর অবশেষে ফিরে পেয়েছেন মালিক নূর সাকিব নিলয়। সময়ের কণ্ঠস্বরে সংবাদ প্রকাশের মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যেই পাখিটির খোঁজ পাওয়া যায়।গত ৬ মে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ‘হারানো পাখির সন্ধান পেতে ২০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে সময়ের কণ্ঠস্বর। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর শেখেরটেক এলাকার বাসিন্দা মুমু (৩২) পাখির মালিক নিলয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।নিলয় জানান, সময়ের কণ্ঠস্বরে প্রতিবেদন প্রকাশের পর অনেকেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। একজন পাখির ছবিও পাঠান, কিন্তু তাঁর মনে হয়নি সেটা তাঁর পোষা পাখি। তবে রাত সাড়ে ৮টার দিকে শেখেরটেক এলাকার মুমু নামের একজন ব্যক্তি ফোন করে একটি পাখির ছবি ও বিস্তারিত বিবরণ দেন। সেটি দেখেই নিলয়ের মনে হয়, এটাই তাঁর হারিয়ে যাওয়া ‘জিপসি’ হতে পারে।’আমি ও আমার স্ত্রী তখনই সেখানে যাই। জিপসিকে ডাকতেই সে চিৎকার করে ডাকা শুরু করে। আরও কিছু লক্ষণ দেখে নিশ্চিত হই, এটা আমাদেরই জিপসি। এরপর পুরস্কারের অর্থ দিয়ে পাখিটি নিয়ে আসি,’ বলেন নিলয়।জানা যায়, গত ২৪ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর আদাবরের বাসা থেকে উড়ে যায় ‘জিপসি’। এরপর পাখিটিকে ফিরে পেতে নিলয় ও তাঁর স্ত্রী আদাবর, শেখেরটেক, শ্যামলী, রিং রোড, নূরজাহান রোডসহ মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫০০ পোস্টার লাগান। পাশাপাশি ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপেও পোষা পাখি হারানোর বিষয়টি জানিয়ে পোস্ট দেওয়া হয়।ওই দিনই বিকেল ৩টার দিকে পাখিটিকে পান শেখেরটেক এলাকার বাসিন্দা মুমু। পাখিটির ডানা ও লেজে আঘাত থাকায় তখন সেটি উড়তে পারছিল না। পরে তিনি খাঁচায় রেখে ১২দিন সযত্নে পরিচর্যা করেন। তিন চারদিন পর প্রথমে রাস্তায় পাখি হারানোর পোস্টার দেখতে পেলেও গুরুত্ব দেননি মুমু। তবে সময়ের কণ্ঠস্বরে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরই তাঁর মন বদলায়। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, পাখিটিকে প্রকৃত মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। নিলয় বলেন, সংবাদটি তাঁদের মনে দাগ কাটে। তারা বোঝে, এই পাখির সঙ্গে আমাদের গভীর আবেগ জড়িয়ে আছে। এরপরই তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যদিও শুরুতে পুরস্কার নিতে চাননি, আমি কথা রাখার জন্য ঘোসণার ২০ হাজার টাকা দিয়েছি। জিপসিকে ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন নিলয় ও তার স্ত্রী। নিলয় বলেন, ‘ওকে ফিরে পাওয়া আমাদের জন্য সন্তানের মতো কিছু ফিরে পাওয়া। এই অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। জিপসি আমাদের পরিবারের একজন সদস্য, বেশিরভাগ সময়ই সে আমার বুকে ঘুমায়। বাসায় আরও দুটি পাখি, দুটি বিড়াল ও একটি কুকুর রয়েছে। সবগুলোই আমার কলিজার টুকরা।’আর এই খোঁজাখুঁজির যাত্রায় সবচেয়ে বড় অবদান তাঁর স্ত্রীর—সে কথাও অকপটে স্বীকার করলেন নিলয়। ‘আমার স্ত্রীর অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। জিপসিকে খুঁজে পাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ওরই—পোস্টার লাগানোর ভাবনাটাও প্রথম এসেছিল ওর মাথায়,’ বলেন তিনি।বর্তমানে পাখিটি কিছুটা অসুস্থ। নিলয় জানান, ‘ও এখনো ঠিকমতো উড়তে পারছে না। শুধু ওপর থেকে নিচে নামতে পারে, ওপরে উঠতে পারে না। চেকআপের জন্য কাল চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাব।’পাখিটি ফিরে পাওয়ার পর কৃতজ্ঞতা জানাতে বুধবার (০৭ মে) বিকালে সময়ের কণ্ঠস্বর কার্যালয়ে আসেন মালিক নূর সাকিব নিলয়। তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম হয়তো আর কখনো ‘জিপসি’কে খুঁজে পাব না। কাক, চিলের আক্রমণে মারা যাওয়ার আশঙ্কাও ছিল। কিন্তু সময়ের কণ্ঠস্বরের সংবাদই আমাদের আশার আলো দেখিয়েছে। শুধু ধন্যবাদ দিলে কম হয়ে যাবে। আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ।’উল্লেখ্য, জিপসি সান কনিউর (Sun Conure) প্রজাতির একটি উজ্জ্বল হলুদ-কমলা রঙের পাখি। মাত্র ছয় মাস বয়সী এই পাখিটি মানুষের সান্নিধ্যে খুবই অভ্যস্ত এবং ডাকলে সাড়া দেয়। এই পাখি সাধারণত দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া যায় এবং ভালো যত্নে ২৫-৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচে।এসকে/আরআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর