চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা পরিচয়ে হেফজখানা ও এতিমখানায় সংঘটিত ডাকাতির আট মাস পার হলেও মামলার তদন্তে তেমন অগ্রগতি নেই। প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ও বিদেশি মুদ্রা লুট হলেও উদ্ধার হয়নি একটি টাকাও। বেশির ভাগ আসামি জামিনে মুক্ত বা পলাতক থাকলেও তাদের গ্রেপ্তারে তৎপরতা নেই—যা তদন্তের স্বচ্ছতা ও পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে প্রশ্ন তুলেছে।২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাতে চরপাথরঘাটার খোয়াজনগরে অবস্থিত ‘আলত্বাফিয়া ইয়াছিনিয়া আল এজাজ ইন্টারন্যাশনাল হেফজ ও এতিমখানা’তে ‘সেনা গোয়েন্দা’ পরিচয়ে ঢুকে তল্লাশির নামে একটি লকার ও ওয়ারড্রব ভেঙে প্রায় ৩ লাখ টাকা এবং ৬ হাজার দিরহাম ও রিয়াল লুট করা হয়। ঘটনার সময় জনতার সহায়তায় চারজন আটক হন, পরদিন হেফজখানার হিসাবরক্ষক কর্ণফুলী থানায় মামলা করেন।মামলার ৯ আসামির মধ্যে একজন ছিলেন কর্মরত সেনাসদস্য, অন্যরা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য, সাংবাদিক পরিচয়ধারী ও শ্রমিক নেতা। সেনাসদস্য সার্জেন্ট মো. সুহেল আনোয়ার বীরের বিরুদ্ধে সেনা আইন ১৯৫২ অনুযায়ী ফিল্ড জেনারেল কোর্ট মার্শালে বিচার অনুষ্ঠিত হয়। তিনি দোষ স্বীকার করায় সংক্ষিপ্ত বিচার শেষে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, চাকরিচ্যুতি ও পদাবনতির শাস্তি পান। এই সাজা তিনি অসামরিক কারাগারে ভোগ করছেন।অপরদিকে, মামলার বাকি আসামিদের অধিকাংশই জামিনে কিংবা পলাতক। বিদ্যুৎ কান্তি দে কারাগারে, মো. শফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সাত্তার টিটু হাইকোর্টের জামিনে, সুমন কান্তি দে চার্জশিট পর্যন্ত চট্টগ্রাম আদালত থেকে জামিনে, সৈনিক রুবেল আনোয়ার সেনা হেফাজতে এবং সৈনিক জামাল এখনো পলাতক।তদন্তের দায়িত্বে থাকা ওসি (তদন্ত) সাফিউল ইসলাম পাটোয়ারী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বারবার ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য মেলেনি, যা দায়িত্বহীনতারই পরিচায়ক।তবে থানার ওসি মুহাম্মদ শরীফ দাবি করেন, ‘তদন্ত চলছে, বাকি আসামিদের ধরতে অভিযানও অব্যাহত রয়েছে।’ তবে আট মাসেও কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় স্থানীয়রা মনে করছেন, পুলিশ হয় নিষ্ক্রিয়, নয়তো প্রভাবশালীদের চাপে নতিস্বীকার করেছে।সামরিক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার ও দণ্ড কার্যকর হলেও অসামরিক আসামিদের ক্ষেত্রে পুলিশের ধীরগতি এক ধরনের বিচারিক বৈষম্যও তুলে ধরছে। বিশেষ করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত এমন একটি চাঞ্চল্যকর ডাকাতির বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও গতি না থাকায় জনমনে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত, লুট হওয়া অর্থ উদ্ধার এবং সব আসামিকে গ্রেপ্তার করে বিচার নিশ্চিত করাই এখন সময়ের দাবি। এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর