চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজারের কাপাসগোলা এলাকায় হিজরা খালে ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ পড়ে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কার্যক্রমে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযানে অভিযুক্ত সংস্থাগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং প্রকল্প-সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। পাশাপাশি চলমান খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ ও সংস্কার প্রকল্পের বাস্তব অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শন করে নানা অনিয়মের প্রাথমিক আলামতও উদঘাটন করা হয়।দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম–১-এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত এনফোর্সমেন্ট টিম এ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান চলাকালে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করা হয় এবং হিজরা খালে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটির বিষয়ে অবহিত হওয়া হয়। চসিক সূত্রে জানা গেছে, নগর সচিবকে আহ্বায়ক করে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।অন্যদিকে, সিডিএ কার্যালয়ে অভিযান শেষে দুদক কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, সাম্প্রতিক এই দুর্ঘটনায় চসিক ও সিডিএর দায়িত্ব ও ভূমিকা রয়েছে কিনা, তা নিরূপণের জন্যই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সিডিএ চেয়ারম্যান এবং জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। সিডিএর আওতায় ৩৬টি খালের উন্নয়ন কাজের মধ্যে ১৯টি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। যে হিজরা খালে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে সিডিএর কাজ এখনও চলমান রয়েছে।দুদক কর্মকর্তা আরও জানান, প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট খালগুলোর তীরে রেলিং নির্মাণের নির্দেশনা থাকলেও সরেজমিন পরিদর্শনে প্রকৃত অবস্থা ও নকশার মধ্যে অসামঞ্জস্য লক্ষ্য করা গেছে। রেলিংয়ের দৈর্ঘ্যে যথাযথতা পাওয়া যায়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। পাশাপাশি, শিশুমৃত্যুর ঘটনায় সিডিএ কেন পৃথকভাবে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি, সেটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম সাংবাদিকদের জানান, দুদক নিয়মিত পর্যবেক্ষণের অংশ হিসেবে বিভিন্ন দফতরে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। তিনি বলেন, দুদকের একটি দল আমাদের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প সম্পর্কে জানতে এসেছিল। তারা প্রকল্পের অগ্রগতি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সাম্প্রতিক দুর্ঘটনা বিষয়ে তথ্য নিয়েছে। আমরা জানিয়ে দিয়েছি, দুর্ঘটনাস্থলে এখনও প্রকল্পের কাজ পুরোদমে শুরু হয়নি। আর যেখানে কাজ সম্পন্ন হয়েছে, সেসব স্থানে রেলিংসহ প্রয়োজনীয় সুরক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।তিনি আরও বলেন, ৩৬টি খালের মধ্যে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাজ চলছে। সিডিএ কেবল সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। খালগুলোর তীরে দেড় থেকে দুই ফুট উচ্চতার রেলিং নির্মাণ করা হয়েছে।এদিকে, দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিযানে সংগৃহীত দলিলপত্র বিশ্লেষণের পর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন শিগগিরই কমিশনে জমা দেওয়া হবে।প্রসঙ্গত, গত ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় টানা বৃষ্টির মধ্যে চকবাজারের কাপাসগোলা এলাকায় হিজরা খালে ব্যাটারিচালিত একটি যাত্রীবাহী রিকশা পড়ে যায়। এতে ছয় মাস বয়সী শিশু সেহরিশ তলিয়ে যায়। দুর্ঘটনার প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর, কয়েক কিলোমিটার দূরে চাকতাই খাল থেকে শিশুটির নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি নগরজুড়ে শোকের ছায়া ফেলেছে এবং খালপাড়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর