চট্টগ্রাম নগরীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্য দিয়ে পালিত হলো বাংলা ১৪৩২ নববর্ষ। বর্ষবরণকে ঘিরে মহানগরজুড়ে নানা আনুষ্ঠানিকতা থাকলেও ছিল না আগের মতো জনসমাগমের উচ্ছ্বাস। নিরাপত্তা থাকলেও ছিল না প্রাণের ছোঁয়া; আয়োজন ছিল, তবে দর্শক ছিল না।সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে বের হয় প্রতীকী বর্ষবরণ র্যালি। নারী-পুরুষ মিলিয়ে মাত্র ৩০-৪০ জনের অংশগ্রহণে শোভাযাত্রাটি চট্টেশ্বরী মোড় হয়ে আলমাস মোড়, কাজীর দেউড়ি, এসএস খালেদ রোড ও প্রেস ক্লাব হয়ে সার্সন রোড ঘুরে পুনরায় ইনস্টিটিউটে গিয়ে শেষ হয়।শোভাযাত্রায় ঐতিহ্যবাহী ঢোলক-বাদ্য বাজলেও ছিল না সে চিরচেনা কোলাহল। মুখোশে ছিল ঘোড়া, মাছ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি; কিন্তু সেই মুখোশের পেছনে লুকিয়ে ছিল নগরের উদযাপনশূন্যতা।জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে সকাল ৮টায় জাতীয় সংগীত ও ‘এসো হে বৈশাখ’ গানের মধ্য দিয়ে সূচনা হয় বর্ষবরণের আনুষ্ঠানিকতার। পরে বের হয় রঙিন আনন্দ শোভাযাত্রা।ময়ূর, মোরগ, ঘোড়া, পাখি, মুখোশসহ নানা বর্ণিল প্রতিকৃতিতে সজ্জিত এ শোভাযাত্রায় অংশ নেন কিছুসংখ্যক মানুষ। জনসংখ্যার তুলনায় আয়োজন অনেক বেশি, তবে মানুষের অংশগ্রহণ ছিল সীমিত।বাংলাদেশ শিশু একাডেমির আয়োজনে সকালে শিশুদের নিয়ে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। এতে অংশ নেয় প্রায় ৪০-৫০ জন শিশু ও অভিভাবক। শিশুদের হাতে ধরা ছিল বিভিন্ন প্রতীক, রঙিন মুখোশ ও খেলনা তবে আগের বছরের মতো উচ্ছ্বাস ও ব্যাপকতা ছিল না চোখে পড়ার মতো।এদিকে নগরের ঐতিহ্যবাহী ডিসি হিল এলাকায় পূর্বঘটিত ভাঙচুরের ঘটনায় উৎসবের পরিবর্তে বিরাজ করে নিরবতা। সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ অনুষ্ঠান বাতিলের ঘোষণা দেওয়ায় সকাল থেকে দর্শনার্থীরা ফিরে যাচ্ছেন হতাশ হয়ে। মঞ্চে নেই কোনো পরিবেশনা, নেই সাজসজ্জা একটুকরো শূন্যতা যেন ছড়িয়ে আছে গোটা প্রাঙ্গণে।সকালে সিআরবির শিরীষতলায় নববর্ষ উদ্যাপন পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু হয় সমবেত বেহালাবাদনের মাধ্যমে। অংশ নেয় চট্টগ্রামের স্বনামধন্য সংগীত ও আবৃত্তি সংগঠনগুলো—আনন্দী সংগীত একাডেমি, সংগীত ভবন, নজরুল সংগীত শিল্পী সংস্থা, শ্রুতিনন্দন, বোধন, প্রমা, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস ইত্যাদি। মাঝে মাঝে নৃত্য পরিবেশনায় ভিন্নমাত্রা যুক্ত হলেও দর্শকের উপস্থিতি ছিল আশানুরূপ নয়। শিরীষতলার আয়োজন দুপুর গড়িয়ে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলবে বলে সময়ের কণ্ঠস্বর-কে জানিয়েছেন আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফারুক তাহের।চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাহমুদা বেগম সময়ের কণ্ঠস্বর-কে জানিয়েছেন, নববর্ষ উপলক্ষে নগরজুড়ে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিটি অনুষ্ঠানস্থল ও আশপাশের সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। শোভাযাত্রাগুলোতে মোতায়েন ছিল সোয়াট ইউনিটের সদস্য, সাদা পোশাকে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।সিআরবিতে বসানো হয় মেটাল ডিটেক্টর, তল্লাশি করা হয় আগত দর্শনার্থীদের।জনসাধারণের উপস্থিতি কমে যাওয়ার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গতকাল রাতে ডিসি হিলে রাজনৈতিক কারণে ভাঙচুর ও নিরাপত্তাহীনতা, চট্টগ্রামে সংঘাতের আশঙ্কা, নগরের যানজট ও যান নিয়ন্ত্রণের কারণে সাধারণ মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশ থেকে দূরে সরে গেছে। কেউ কেউ মনে করছেন, বর্ষবরণ আজ আর আগের মতো স্বতঃস্ফূর্ত নয়; বরং প্রশাসনিক আনুষ্ঠানিকতায় আবদ্ধ।এই প্রসঙ্গে সাংস্কৃতিক কর্মী তুষার দাশ সময়ের কণ্ঠস্বর-কে বলেন, বর্ষবরণ ছিল, আয়োজনও ছিল; তবে দর্শক আর প্রাণের উচ্ছ্বাস ছিল না। প্রাচীন বাঙালি ঐতিহ্য আর সাংস্কৃতিক বহুমাত্রিকতার প্রতীক পহেলা বৈশাখ আজ যেন অনিশ্চয়তার মেঘে ঢাকা। তবু এ আয়োজনগুলোই প্রমাণ করে, আমরা থেমে যাইনি। হয়তো এবারের বৈশাখ ছিল নীরব, তবে ভবিষ্যতের বৈশাখ নতুন রঙ নিয়ে আসবে এই প্রত্যাশায় বুক বেঁধে আছে সংস্কৃতিপ্রেমী চট্টগ্রাম।এসআর

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে বাংলাদেশকে ‘অশনি সংকেত’ নেদারল্যান্ডসের
শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে বাংলাদেশকে ‘অশনি সংকেত’ নেদারল্যান্ডসের

টি–টোয়েন্টিতে নেদারল্যান্ডস বারবারই ভালো দল। কিন্তু গতকাল তারা বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে স্রেফ তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশকেও Read more

চলে গেলেন ভারতীয় ক্রিকেটের ‘দ্য গ্রেট ওয়াল’
চলে গেলেন ভারতীয় ক্রিকেটের ‘দ্য গ্রেট ওয়াল’

পেসারদের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক। স্রেফ মাটি কামড়ে পড়ে থাকতেন। যে কারণে তাকে বলা হতো ‘দ্য গ্রেট ওয়াল’।

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন