সমুদ্র উত্তাল, চারপাশে শুধু পানি আর পানি। একদিকে প্রসববেদনায় কাতর গর্ভবতী মা, অন্যদিকে চিকিৎসা-সেবার ন্যূনতম সুযোগ নেই। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) কক্সবাজারের কুতুবদিয়া থেকে রেফার হওয়া এক নারী যখন উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে স্পিডবোটে যাত্রা করছিলেন, তখন কারো কল্পনাতেও ছিল না—এই যাত্রা হবে এক নতুন প্রাণের জন্মের সাক্ষী।বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে পেকুয়ার মগনামা ঘাটের কাছে হঠাৎ করেই শুরু হয় প্রসববেদনা। আর ঠিক তখনই কাকতালীয়ভাবে স্পিডবোটে উপস্থিত ছিলেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক ও চিকিৎসক ডা. সৈকত বড়ুয়া। প্রশাসনিক কাজ শেষে তিনি ফিরছিলেন মহেশখালীতে। ছিলেন আরও দুই সহকর্মী।“আমি বুঝতেই পারিনি এমন একজন মুমূর্ষু রোগী বোটে রয়েছেন,” বলেন ডা. সৈকত। “বোটে ওঠার কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রসববেদনা শুরু হলে পাশে থাকা দাই মা এবং মায়ের চিৎকারে বিষয়টি স্পষ্ট হয়।”পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ডা. সৈকতের নির্দেশে বোটটি মগনামা ঘাটে ভেড়ানো হয়। যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন তিনি এবং দাই মা। আধুনিক কোনো যন্ত্রপাতি ছিল না, ছিল শুধু মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ ও মানবিকতা। যা কিছু ছিল হাতের কাছে—কাথা, কাপড়, হ্যান্ড স্যানিটাইজার—তা দিয়েই নতুন শিশুর পৃথিবীতে আগমনের আয়োজন করেন তারা।ডা. সৈকত বলেন, “আমি কর্ড কেটে দেই, নবজাতককে সুরক্ষা দেই, মায়ের ভাইটালস চেক করি এবং নিশ্চিত হই যে মা ও নবজাতক ঝুঁকিমুক্ত।” পরবর্তীতে মা ও শিশুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় স্থানীয় হাসপাতালে।এই ঘটনাটি শুধু একটি চিকিৎসা নয়, বরং মানবতার এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত। কিন্তু এর পেছনে উঠে আসে একটি বড় প্রশ্ন—বাংলাদেশের উপকূলীয় দ্বীপ অঞ্চলে এমন পরিস্থিতিতে কাদের ভরসা করবেন মানুষ?সুশীল সমাজ বলছে, এটি কেবল একটি ব্যতিক্রমী সৌভাগ্য যে ওই স্পিডবোটে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন। কিন্তু প্রতিটি যাত্রায় কি এমন কেউ থাকবেন? যদি না থাকেন? তাহলে?স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের নেতা মাহবুবুর রহমান বলেন, “দ্বীপাঞ্চলে যেখানে হাসপাতাল নেই, সড়ক নেই, সেখানে ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স না থাকা এক রকম অবহেলা। সরকারকে এখনই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।”স্থানীয় সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী নারগিস পারভীন জানান, “এই ঘটনা একদিকে যেমন সাহস ও মানবতার বার্তা দেয়, অন্যদিকে আমাদের দুর্বল স্বাস্থ্যসেবার চিত্রটিও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।”ডা. সৈকত বড়ুয়ার আকুতি, “প্রতিটি দ্বীপ উপজেলায় যেন প্রশিক্ষিত প্যারামেডিক টিম ও অন্তত দুটি ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স থাকে। সাগর পাড়ি দিয়ে রোগী আসা মানে জীবন-মৃত্যুর সীমানা অতিক্রম করা। সেখানে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে, প্রতিটি প্রাণই মূল্যবান।”সমুদ্রের বুক চিরে যে শিশুটি আজ পৃথিবীর আলো দেখলো, সে যেন একটি নতুন আলো জ্বালায়—স্বাস্থ্যসেবায় বৈষম্য দূর করার, দ্বীপবাসীর অধিকারে রাষ্ট্রকে সচেতন করার। এই নবজাতকের কণ্ঠ যেন হয় মানবতার অনুরণন।এনআই

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
যুবদলের কমিটিতে যুবলীগ নেতা, ক্ষোভে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদত্যাগ
যুবদলের কমিটিতে যুবলীগ নেতা,  ক্ষোভে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদত্যাগ

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে যুবদলের ইউনিয়ন কমিটি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। অভিযোগ উঠেছে, টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়ন যুবদলের নতুন কমিটিতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির Read more

ওরা যেন সড়কে বিমান চালায় !
ওরা যেন সড়কে বিমান চালায় !

অদক্ষ ও অপেশাদার ড্রাইভারের হাতে নিয়ন্ত্রণহীন হ্যান্ডেল। এসব যানবাহনের বেপরোয়া গতিতে আতঙ্কে নগরবাসীসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চল। বলছি ব্যাটারি চালিত অবৈধ ইজিবাইক Read more

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন