রঙ, নকশা, আর স্বপ্নের মিশেল এই তিন উপাদান একসঙ্গে গেঁথে দিয়েছেন তানজিনা সুলতানা রিমি। সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েও থেমে থাকেননি তিনি, বরং প্রতিটি ফাঁকে বুনে চলেছেন নতুন জীবনের গল্প। চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার এই সংগ্রামী নারী বাটিকের শিল্পকে সৃজনশীলতার আলোয় উদ্ভাসিত করে তুলেছেন, তৈরি করেছেন নিজস্ব এক জগত। যেখানে প্রতিটি নকশা শুধু কাপড়ের গায়ে নয়, বরং আঁকা হয় জীবনের ক্যানভাসে।করোনার সেই গৃহবন্দি দিনগুলো, যখন গোটা বিশ্ব স্থবির, তখন রিমি সময়ের গহীন গভীরে আবিষ্কার করলেন এক নতুন দিগন্ত। ইউটিউব আর ফেসবুকের পর্দায় যখন তিনি ব্লক প্রিন্ট আর হ্যান্ডপেইন্টের শিল্পকলা দেখতে শুরু করলেন, তখন নিজের ভেতর এক সুপ্ত শিল্পীর হাতছানি টের পেলেন। ছোটবেলা থেকেই রঙ আর নকশার প্রতি তার অনুরাগ ছিল, কিন্তু সেই ভালোবাসাকে কখনো জীবিকার পথ হিসেবে ভাবেননি।মাত্র ৩ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু হয় তার এই শিল্পযাত্রা। অল্প কিছু কাপড়, রঙ আর কেমিক্যাল দিয়ে নিজের হাতে তৈরি করা প্রথম নকশাগুলো যখন ফেসবুকে তুলে ধরেন, তখনই প্রশংসার ঢেউ এসে লাগে তার স্বপ্নের তীরে। এই ভালোবাসা ও উদ্দীপনার ওপর দাঁড়িয়েই জন্ম নেয় “রিমি’স ক্রিয়েশন”— তার সৃষ্টিশীলতার এক অনন্য পরিচয়।সংসার ও স্বপ্নের ভারসাম্য রক্ষা করা যে সহজ নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু একজন নারীর ইচ্ছাশক্তি যখন প্রবল হয়, তখন সে সমুদ্রের ঢেউকেও বশ মানাতে পারে। রিমির গল্পটাও ঠিক তেমন। তার স্বামী নাজিম উদ্দিন নিয়াজ, একজন সরকারি চাকরিজীবী, যিনি শুধু জীবনসঙ্গীই নন, বরং স্বপ্নযাত্রারও সারথি। গৃহকর্ম, সন্তানদের লালন-পালন, ব্যবসার দেখাশোনা—সবকিছুর মাঝেই স্বামীর সহযোগিতা পেয়েছেন ছায়ার মতো। সংসারকে অগ্রাধিকার দিয়েও যে স্বপ্ন বাস্তব করা যায়, সেটাই প্রমাণ করেছেন রিমি।বাটিক শুধু কাপড়ের ওপর রঙের খেলা নয়, এটি শিল্প। রিমির প্রতিটি কাজ যেন একেকটি গল্প বলে। শাড়ি, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, কাপল সেট, ফ্যামিলি সেট, ক্যানভাস, লেডিস ব্যাগ, গয়না—সবকিছুতেই তিনি তার সৃজনশীলতার স্পর্শ এঁকে দেন। ঈদসহ নানা উৎসবে তার ডিজাইন করা কাপল সেট আর ফ্যামিলি সেটের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। তার অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রতি মাসেই শত শত অর্ডার আসে, যা প্রমাণ করে যে সৃজনশীলতা কখনো সীমানার মধ্যে আবদ্ধ থাকে না।রিমি শুধু নিজের জন্য স্বপ্ন দেখেননি; তিনি স্বপ্ন দেখান অন্য নারীদেরও। লোহাগাড়া সদরের নিজের বাসায় তিনি বিনা মূল্যে বাটিকের প্রশিক্ষণ দেন স্থানীয় নারীদের। ইতোমধ্যে তার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক মেয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে, কেউ পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছে, কেউ পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে।নারীদের উদ্দেশ্যে রিমি সময়ের কণ্ঠস্বর-কে বলেন, মোবাইলে অযথা সময় নষ্ট না করে যদি আমরা সৃজনশীল কাজে সময় দিই, তাহলে শুধু নিজেদের নয়, সমাজকেও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।মাত্র ৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে এখন তার ব্যবসার মূলধন ৪ লাখ টাকা ছুঁয়েছে, প্রতি মাসে আয় করছেন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। তবে তার স্বপ্ন এখানেই থেমে নেই। সরকারি সহযোগিতা পেলে তিনি তার “রিমি’স ক্রিয়েশন” আরও বড় করতে চান, যাতে আরও বেশি নারী এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজেদের ভাগ্য গড়ে নিতে পারেন।

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
ময়মনসিংহ সদরে রূপালী ব্যাংকের উপশাখা উদ্বোধন
ময়মনসিংহ সদরে রূপালী ব্যাংকের উপশাখা উদ্বোধন

যুগোপযোগী ব্যাংকিং সেবা প্রদানের অঙ্গীকার নিয়ে ময়মনসিংহ সদরে রূপালী ব্যাংক পিএলসি’র থানাঘাট শাখার আওতাধীন ৩১তম কেওয়াটখালী উপশাখা উদ্বোধন করা হয়েছে।

অবৈধ মাটি উত্তোলন থেকে রক্ষা পেলো আমলাই গ্রাম
অবৈধ মাটি উত্তোলন থেকে রক্ষা পেলো আমলাই গ্রাম

যশোরের শার্শার গোগা ইউনিয়নের আমলাই গ্রামের উত্তর মাঠে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলনের কারণে আশেপাশের জমিতে ধস নামে। দীর্ঘদিন ধরে মাটি Read more

‘ভঙ্গুর আইনশৃঙ্খলায় পুলিশের খোলনলচে বদলের উদ্যোগ’
‘ভঙ্গুর আইনশৃঙ্খলায় পুলিশের খোলনলচে বদলের উদ্যোগ’

সোমবার প্রকাশিত পত্রিকাগুলোর প্রধান শিরোনামে বিগত সরকারের আমলে বিচার বহির্ভুত হত্যা, পুলিশের দলীয়করণ সংবিধান সংশোধন ও পুনর্লিখন প্রসঙ্গ, বিদ্যুৎ খাতে Read more

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন