গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী ও মির্জাপুর ইউনিয়নে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ইটভাটার সংখ্যা। এসব ইটভাটা নিয়মনীতি উপেক্ষা করে কৃষিজমির উপর নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে একদিকে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, অন্যদিকে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কৃষি খাতে।কৃষকদের অভিযোগ, কিছু রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এসব ইটভাটা চলছে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।এই উপজেলায় প্রায় দেড় শতাধিক ছোট-বড় শিল্প কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে পিরুজালী ও মির্জাপুর ইউনিয়ন তুলনামূলকভাবে কৃষিনির্ভর। তবে এ অঞ্চলের ফলের গাছ ও ফসল ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালির কারণে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইটভাটার ধোঁয়া ও ধুলাবালি কৃষিজমিতে প্রবেশ করে ফসল নষ্ট করছে। পাশাপাশি এলাকার পরিবেশও দূষিত হচ্ছে।জানা গেছে, মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট দূরত্ব না মেনে ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া ইটভাটাগুলো সাধারণত কৃষিজমির উপর গড়ে ওঠায় জমির উর্বরতা হারাচ্ছে এবং কৃষকেরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।পিরুজালী গ্রামের কৃষক ইনতাজ খান বলেন, “আগে এইসব জমিতে ধান ও সবজি চাষ করতাম। কিন্তু এখন ইটভাটার ধোঁয়ায় গাছ মরে যাচ্ছে। ফলে কৃষি এখন আর লাভজনক নয়।কৃষক মোমরেস খাঁ বলেন,“আমাদের গ্রামে আগে কৃষি ছিল প্রধান পেশা। কিন্তু বর্তমানে ইটভাটার জন্য জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আম, নারিকেল, বড়ই, পেঁপেসহ বিভিন্ন গাছের ফল নষ্ট হয়ে গাছ মরে যাচ্ছে। এছাড়া আমাদের শরীরেও এর প্রভাব পড়ছে। অনেকে শ্বাসকষ্ট ও নানা রোগে ভুগছেন।কৃষকদের অভিযোগ, ইটভাটার কারণে পরিবেশ ও কৃষি খাতে ক্ষতির বিষয়টি নিয়ে বারবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করা হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং ইটভাটার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কৃষিজমির উপর ইটভাটা নির্মাণ বন্ধ হচ্ছে না।বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেন বলেন,“ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে বায়ু দূষিত হচ্ছে, যা ওই এলাকার কৃষিজমি, ফসল এবং মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দূষণের কারণে কৃষিজমি অনুপযোগী হয়ে পড়ছে এবং ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ওই এলাকায় পরিবেশবান্ধব ইট তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে অথবা দূষণ সৃষ্টিকারী ইটভাটা বন্ধ করতে হবে।পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলেন,“ইটভাটার কালো ধোঁয়া শুধু কৃষি নয়, পুরো পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক। এটি নিয়ন্ত্রণ করা না হলে ভবিষ্যতে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে।গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আরেফিন বাদল সময়ের কণ্ঠস্বর কে জানান,“নতুন কোনো ইটভাটাকে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে না। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী ইটভাটাগুলোর ওপর নজরদারি চলছে। পিরুজালী ও মির্জাপুর এলাকার অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে এবং সামনে আরও অভিযান চালিয়ে সেগুলো ভেঙে দেওয়া হবে।”স্থানীয় কৃষকেরা প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। ইটভাটা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে কৃষি নির্ভর এ অঞ্চলের মানুষ চরম বিপদের মুখে পড়বে। এইচএ
Source: সময়ের কন্ঠস্বর