রাজশাহীর একদল বিনিয়োগকারী প্রতারণার শিকার হয়েছেন একটি মোবাইল অ্যাপে বিনিয়োগের নামে। ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট নামের একটি অ্যাপে টাকা রেখে মাসিক উচ্চ মুনাফার আশায় তারা প্রায় ৮৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। তবে প্রতিশ্রুত মুনাফা তো দূরের কথা, মূল টাকাটুকুও ফেরত পাননি তারা।এই প্রতারণার ঘটনায় রাজশাহীর চন্দ্রিমা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী সাইফুল ইসলামসহ মোট সাতজন ভুক্তভোগীর বিনিয়োগের তথ্য মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে।প্রতারকচক্রটি দাবি করেছিল, ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট অ্যাপে বিনিয়োগ করলে প্রতি এক লাখ টাকার জন্য মাসে ১১,২০০ টাকা মুনাফা পাওয়া যাবে। এই লোভনীয় অফারের ফাঁদে পড়ে সাইফুল ইসলাম ১৫ লাখ, জাকির হোসেন ১২ লাখ, শারমীন সুলতানা ২০ লাখ, তাহেরুল ইসলাম ৬ লাখ, রাজীব সাহা ১৭ লাখ, আনোয়ার হোসেন ৮ লাখ এবং আশরাফুল রহমান ৯ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন।এই চক্রটি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন সেমিনারের আয়োজন করেছিল, যেখানে তারা মূলত সম্ভাব্য মুনাফার কথা বলে বিশ্বাস অর্জন করে। এরপর ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর বিনিয়োগকারীরা টাকা দেন এবং তাদের অ্যাপে লগইন করে দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো লাভ তো আসেনি, উল্টো মূল টাকা তুলতেও পারেননি তারা।গত ২১ ফেব্রুয়ারি মামলার বাদী সাইফুল ইসলাম প্রতারকদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে দেখা করেন এবং টাকা ফেরত চান। কিন্তু তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে টাকা ফেরত দেওয়া হবে না। বরং টাকা চাইতে থাকলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে বলে হুমকি দেন।এই ঘটনার পরই সাইফুল ইসলাম মামলা করেন এবং আদালত চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেন।মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তারা হলেন— সজীব কুমার ভৌমিক ওরফে মাহাদী হাসান (৩৩), ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টের বাংলাদেশ প্রধান মোতালেব হোসেন ভুঁইয়া (৩৫), কান্ট্রি লিডার ওয়াহেদুজ্জামান সোহাগ (৩৮), রাজশাহী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক ফাতেমাতুজ জহুরা মিলি (৩২), রাজশাহী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক ও ওয়াহেদুজ্জামানের স্ত্রী মিঠুন মণ্ডল (৩৬), রাজশাহীর এজেন্ট ওয়াজেদ আলী খেবির (৬০), মোজাহার আলী (৫৫), মো. ওবাইদুল্লাহ (৪৩)।তাদের মধ্যে সজীব কুমার ভৌমিক নোয়াখালী, মোতালেব হোসেন লক্ষ্মীপুর ও ওবাইদুল্লাহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা। বাকিরা রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।আইনজীবী শামীম আখতার হৃদয় জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের শুরুতে রাজশাহীর আদালতে এ সংক্রান্ত আরও কয়েকটি মামলা হয়েছে এবং আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছিল। এই মামলাটি নতুন সংযোজন। আগামী ২৯ এপ্রিল এ মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উচ্চ মুনাফার প্রতিশ্রুতি থাকলেই সাবধান হওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি কোনো প্রতিষ্ঠান বা অ্যাপ সন্দেহজনকভাবে অতিরিক্ত লাভের প্রতিশ্রুতি দেয়, তবে তা নিশ্চিতভাবেই প্রতারণার ফাঁদ হতে পারে।রাজশাহীর এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন, যাতে তারা ভবিষ্যতে এমন প্রতারণার শিকার না হন।এনআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর