চট্টগ্রামের সমুদ্রবন্দর দেশের অর্থনীতির প্রধান প্রবাহপথ। এই বন্দর দিয়েই দেশের আমদানি-রপ্তানির সিংহভাগ সম্পন্ন হয়। কিন্তু ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক চাহিদা মেটাতে বর্তমানে বিদ্যমান অবকাঠামো যথেষ্ট নয়। এ কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের হালিশহর উপকূলে নতুন বে টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি মাইলফলক হতে যাচ্ছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পটি নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে কাঙ্ক্ষিত গতিতে এগোতে পারছিল না। তাই নতুন করে সমন্বিত একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার, যেখানে তিনটি প্রধান কাজকে একত্রে অন্তর্ভুক্ত করে বিশাল বিনিয়োগের প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে।বে টার্মিনাল নির্মাণের মূল প্রকল্পে তিনটি প্রধান কাজকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে— ব্রেকওয়াটার নির্মাণের মাধ্যমে টার্মিনালকে সমুদ্রের উচ্চ ঢেউ ও প্রবল স্রোত থেকে রক্ষা করবে। নেভিগেশন অ্যাকসেস চ্যানেল তৈরি করে জাহাজ চলাচলের জন্য একটি আধুনিক ও নিরাপদ নৌপথ গড়ে তোলা হবে। এবং রেল ও সড়ক সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে টার্মিনাল থেকে সরাসরি দেশের প্রধান মহাসড়ক ও রেলপথের সাথে সংযোগ তৈরি করা হবে।এই তিনটি কাজ একত্রে বাস্তবায়ন করলে প্রকল্পের গতি অনেক বেশি বাড়বে এবং দীর্ঘসূত্রিতা কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম বন্দরের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সমন্বিত এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে “বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট” (বিটিএমআইডিপি)।বে টার্মিনাল প্রকল্পের এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিকভাবে ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হবে ব্রেকওয়াটার নির্মাণে, যেখানে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮,২৬৯ কোটি টাকা। নেভিগেশন চ্যানেল নির্মাণে ১,৯৭৯ কোটি টাকা, বিভিন্ন নেভিগেশন সহায়ক যন্ত্র স্থাপনে ৫৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা, এবং রেল ও সড়ক সংযোগ নির্মাণে ৩,৪৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।এই বিশাল প্রকল্পের ব্যয়ের প্রধান উৎস হবে বিশ্বব্যাংক, যারা প্রায় ১০,২৭২ কোটি টাকা ঋণ দেবে। এর মধ্যে ৬৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হবে চ্যানেল ও ব্রেকওয়াটার নির্মাণে, আর ১৯২ মিলিয়ন ডলার ব্যবহার করা হবে রেলওয়ে ও মহাসড়ক সংযোগ স্থাপনে। বন্দর কর্তৃপক্ষও নিজস্ব তহবিল থেকে ৪,৬৩৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে।চট্টগ্রাম বন্দর বর্তমানে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর হলেও এটি ক্রমবর্ধমান আমদানি-রপ্তানির চাপ সামাল দিতে পারছে না। বিশ্লেষকদের মতে, বে টার্মিনাল চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সামগ্রিক সক্ষমতা প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি পাবে। এতে শুধু দেশেরই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্যিক মানচিত্রেও নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। কারণ, এই টার্মিনাল দিয়ে ভবিষ্যতে ট্রান্সশিপমেন্ট হাব তৈরি করা সম্ভব হবে, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস. এম. মনিরুজ্জামান সময়ের কণ্ঠস্বর-কে জানিয়েছেন, “বে টার্মিনাল নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত ডিটেইলড প্রজেক্ট প্ল্যান (ডিপিপি) ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটি অনুমোদিত হলেই দ্রুত বিশ্বব্যাংকের সাথে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে এবং কাজ পুরোদমে শুরু হবে।”বে টার্মিনাল প্রকল্প শুরু থেকেই নানা জটিলতার মুখে পড়েছে। পৃথক পৃথক প্রকল্পের কারণে ধীরগতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতা দেখা দিয়েছিল। তবে এবার তিনটি বড় প্রকল্পকে একত্রিত করার ফলে সময় ও খরচ উভয়ই কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক সময়ের কণ্ঠস্বর-কে বলেন, “বে টার্মিনাল নির্মাণে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। কিছুটা সময় লাগলেও সবকিছু দ্রুত গুছিয়ে আনার চেষ্টা করছি।”বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হলো চট্টগ্রাম বন্দর। তবে বর্তমান সক্ষমতা দিয়ে ভবিষ্যতের আমদানি-রপ্তানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে না। তাই বে টার্মিনাল শুধু একটি অবকাঠামো প্রকল্প নয়, বরং এটি দেশের দীর্ঘমেয়াদী বাণিজ্যিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান ভিত্তি হতে চলেছে।বিশ্বের উন্নত বন্দরগুলোর মতো আধুনিক প্রযুক্তি ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে গড়ে উঠতে যাওয়া এই টার্মিনাল একশ বছরের জন্য দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করাবে। যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়, তবে এটি বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক সংযোগের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।এমআর

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
এবি ব্যাংক পারপেচ্যুয়াল বন্ডের মুনাফা ঘোষণা
এবি ব্যাংক পারপেচ্যুয়াল বন্ডের মুনাফা ঘোষণা

পুঁজিবাজারে করপোরেট বন্ড খাতে তালিকাভুক্ত এবি ব্যাংক পারপেচ্যুয়াল বন্ডের ট্রাস্টি চলতি বছরের অর্ধবার্ষিকী (১৩ জুন, ২০২৪ থেকে ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪) Read more

নাটোরে ছাত্রী নিবাস থেকে শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
নাটোরে ছাত্রী নিবাস থেকে শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

নাটোরে শহরের এক ছাত্রী নিবাস থেকে কলেজ ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি ‘আত্মহত্যা’ করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে Read more

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন