মাঠ থেকে পেঁয়াজ উত্তোলনের মৌসুম চলছে। কৃষকরা কেউ মাঠ থেকে, আবার কেউ কেউ হাট-বাজারে আড়ৎ এ এসে মাঠের পেঁয়াজ বিক্রয় করছে। তাগিদ অনুভব করলাম, গত পহেলা বৈশাখে যে ঋণগ্রস্ত পেঁয়াজ চাষী মৃত মীর রুহুল আমীন ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করলেন তাঁর পরিবার তাঁদের চাষকৃত পেঁয়াজ সঠিক মূল্যে বিক্রয় করতে পারলেন কিনা তার খোঁজ নেয়ার। ছুটির দিনে রওনা দিলাম। পথিমধ্যে যাচাই করলাম আড়ানী ইউনিয়নের একটি হাটে আজ মনপ্রতি কত টাকা হারে কৃষকরা আড়ৎদারদের নিকট পেঁয়াজ বিক্রয় করছেন। ব্যবসায়ীরা জানালেন দু’সপ্তাহ আগের দামের তুলনায় বর্তমানে দাম মনপ্রতি ৩০০-৪০০ টাকা বেশি। কৃষি বিভাগের তথ্যও এমনই।কথা হলো মৃত মীর রুহুল আমীনের স্ত্রী মোছা: মরিয়মের সাথে। উনি জানালেন জমি বর্গা নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করায় খরচ বেশি হয়েছে, তাই বর্তমান বাজার মূল্যে বিক্রয় না করে তিনি পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে অফ সিজনে যখন দাম বেশি তখন বিক্রয় করতে চান। সে মোতাবেক তিনি পেঁয়াজ সংরক্ষণের কাজও শুরু করেছেন।ঋণের কথা জানতে চাইলে তিনি জানান চারটি এনজিও থেকে ঋণ নেয়া আছে। এনজিওগুলো ঋণের বিষয়ে কোন চাপ দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান কোনরকম চাপ দিচ্ছে না এবং ঘটনার পর এনজিওগুলো তাদের নীতিমালা অনুযায়ী সর্বোচ্চ শিথীলতা দেখাবেন মর্মে জানিয়ে গিয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন থেকে কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হলে জানাতে তাঁকে অনুরোধ করা হয়। তবে মৃত ব্যক্তির কিছু ব্যক্তিগত লোন আছে। যেহেতু ছেলে ঢাকায় ছোট একটি চাকরি করে সেহেতু সংসার চালিয়ে ঋণ পরিশোধ করা নিয়ে তিনি বেশ দুশ্চিন্তাগ্রস্থ।শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বিকালে এইভাবেই নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক আইডিতে কথাগুলো লিখেছেন বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মী আক্তার। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের মাঝপাড়া গ্রামে মৃত মীর রুহুল আমীনের বাড়িতে যান। সে সময় সকল খবরা খবর নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৃত মীর রুহুল আমীনের স্ত্রী মোছা: মরিয়মের হাতে ৩০ কেজি চাল ও কিছু আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন বলেও ফেসবুকে উল্লেখ করেন।মরিয়মের ভাষ্য অনুযায়ী, তার স্বামী মীর রুহুল আমীন ছিলেন খুবই চাপা স্বভাবের। কোনো দুশ্চিন্তা কখনো তার মুখ থেকে বের হত না। তিনি যে কোন কারণে আত্মহত্যার মত সিদ্ধান্ত নিয়ে বসবেন এটা এখনও তাঁর কাছে দুঃস্বপ্নের মত!এ ঘটনায় ইউএনও সবাইকে একে অপরের কষ্ট বোঝার আহ্বান জানান। তিনি লেখেন, আসুন আমরা একে অপরের, বিশেষ করে পরিবারের পরিশ্রমী মানুষগুলোর কষ্টগুলো শোনার চেষ্টা করি। কোন কষ্টই এতটা বড় হতে না দেই, যেন অপূরনীয় ক্ষতি হয়ে যায়। পরিবারের সকল সম্পর্ক হোক শান্তিপূর্ণ এবং নির্ভরতার। মহান সৃষ্টিকর্তা সকলকে নিরাপদে রাখুন!উলেখ্য, গত ১৪ এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বাঘা উপজেলার আড়ানী রেলস্টেশন এলাকায় ট্রেনের নিচে আত্মহত্যা করেন রুহুল আমিন (৬০) নামের এক বৃদ্ধ। বৃদ্ধ ছিলেন পেঁয়াজ চাষি। তার এই আত্মহত্যার ভিডিও ভাইরাল হয় নেট দুনিয়ায়।এসকে/আরআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর