পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদীর উপর নির্মিত গুরুত্বপূর্ণ চতুর্থ চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতুটি প্রায় তিন বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে ২০২৪ সালের ১৫ আগস্ট। সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) থেকে ৮ কোটি ৪৬ লাখ ৬৩ হাজার ৪০০ টাকায় এ ইজারা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ইজারা পান মেসার্স সাহা ট্রেডার্স। ১১টি কিস্তিতে ইজারার মূল্য পরিশোধযোগ্য হওয়ায় এরই মধ্যে ৩টি কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু ইজারা শুরুর আট মাসের মাথায় টোল আদায়ের নিয়মে বড়সড় পরিবর্তন আনায় বিপাকে পড়েছেন ইজারাদার।গত ৫ আগস্টের পর থেকে ব্যাটারি চালিত ভ্যান ও ইজিবাইকের টোল প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নামে স্থানীয় শ্রমিক সংগঠনগুলো। মানববন্ধন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে স্মারকলিপি দিয়ে তারা দাবি তোলে, নিম্ন আয়ের চালকদের জন্য প্রতিবার টোল পরিশোধ করা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। এর প্রেক্ষিতে হঠাৎ করেই সোমবার (২১ এপ্রিল) দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘোষণা দেন, ব্যাটারি চালিত ভ্যান ও ইজিবাইকের টোল আদায় বন্ধ করা হয়েছে। এতে শ্রমিকদের মাঝে স্বস্তি ফিরলেও বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন ইজারাদার। এর আগে এইসব পরিবহন থেকে প্রতিবার পারাপারে ১০ টাকা টোল আদায় করা হতো।এইদিকে টোল আদায় বন্ধ হলেও চুক্তি অনুযায়ী ইজারাদারকে পুরো ইজারা মূল্য অর্থাৎ ৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকাই সওজকে পরিশোধ করতে হবে। প্রতিদিন গড়ে যে পরিমাণ টোল আদায় হতো, তার বড় অংশই আসত ব্যাটারি চালিত ভ্যান ও ইজিবাইক থেকে। ফলে এখন প্রতিদিন গড়ে ৩০-৩৫ হাজার টাকা লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।এই প্রেক্ষিতে মেসার্স সাহা ট্রেডার্স-এর স্বত্বাধিকারী শশাঙ্ক কুমার সাহা সোমবারই ক্ষতিপূরণ চেয়ে পঞ্চগড় সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে লিখিত আবেদন জমা দেন। সেখানে তিনি জানান, নতুন পরিস্থিতিতে পূর্বের চুক্তি অনুযায়ী টোল পরিচালনা করা অসম্ভব। একইসঙ্গে ক্ষতির পরিমাণ বিবেচনা করে ত্রৈমাসিক কিস্তি থেকে কর্তনের মাধ্যমে বাকি অর্থ পরিশোধের অনুমতি প্রার্থনা করেন তিনি।শশাঙ্ক কুমার সাহা বলেন, শ্রমিকদের দাবিকে আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু ইজারা নেওয়ার পর হঠাৎ করে টোল আদায় বন্ধের সিদ্ধান্তে আমি দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়বো। এত বড় আর্থিক ক্ষতি হলে পথে বসতে হবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাকে কোন কিছুই জানানো হয়নি।এই বিষয়ে পঞ্চগড় সওজ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, জেলা মাসিক সমন্বয় সভায় (২০ এপ্রিল) বিষয়টি উত্থাপিত হলে সেখানে এই সিদ্ধান্ত হয়। ডিসি স্যারের সিদ্ধান্তে দ্বিমত করতে পারিনি। আমি একক কোন সিদ্ধান্ত নেইনি।জেলা প্রশাসক সাবেত আলী বলেন, জনগণের পক্ষে আমরা ইজারাদারকে অনুরোধ জানিয়েছি। যেহেতু ইজারার টাকা সরকারি খাতে চলে গিয়েছে সেটা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব না। ইজারাদারের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে আপনি জনগণের পক্ষে কথা বলেছেন। এখন ইজারাদারের পক্ষে কথা বলছেন।পিএম
Source: সময়ের কন্ঠস্বর