চট্টগ্রামের পাহাড়ঘেরা নগরী আজ উন্নয়নের নামে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। নিয়ম, নীতি ও পরিবেশের তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠছে একের পর এক বহুতল ভবন। এমনই এক নকশা বহির্ভূত স্থাপনা। চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা এসএস খালেদ সড়কে নির্মিত ১৪ তলা ভবনের বিরুদ্ধে সোমবার (২১ এপ্রিল) উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।স্বপ্নের ফ্যামিলি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সমিতি এসএস খালেদ সড়কে প্রায় ৩০ কাঠার একটি জমিতে এই বহুতল ভবন নির্মাণ করে। সিডিএ থেকে প্রাপ্ত নকশা অনুমোদনে ছিলো ৬০ শতাংশ জায়গা খালি রেখে ভবন নির্মাণ এবং পাহাড়ের প্রাকৃতিক গঠন রক্ষার বাধ্যবাধকতা। কিন্তু মালিকপক্ষ টিনের বেষ্টনি দিয়ে পুরো জমি ঘিরে গোপনে পাহাড় কেটে এবং পুরো প্লটজুড়ে নির্মাণকাজ শুরু করে। এতে করে একদিকে যেমন সিডিএর নীতিমালা লঙ্ঘিত হয়, অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়ে পাহাড়ি ইকোসিস্টেম।পরিবেশ ও নির্মাণ শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে সিডিএ ভবন নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু মালিকপক্ষ উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়ে একটি স্থগিতাদেশ এনে কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। পরে, ২০ এপ্রিল আদালত তাদের আবেদন খারিজ করে দিলে ২১ এপ্রিল সিডিএ অভিযানে নামে।অভিযানে উপস্থিত সিডিএর স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট নজরুল ইসলাম গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, “আমরা তদন্তে দেখতে পাই যে, অনুমোদনের কোনো শর্ত মানা হয়নি। পুরো জমি দখল করে পাহাড় কেটে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণের চেষ্টা চলছে। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।”বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) অনুযায়ী, পাহাড় কাটা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ধরনের অপরাধের জন্য অনধিক ১০ লাখ টাকা জরিমানা এবং সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। তাছাড়া, সিডিএ বিল্ডিং কোড অনুসারে অনুমোদিত নকশার বাইরে যেকোনো স্থাপনা নির্মাণ সরাসরি উচ্ছেদযোগ্য।পরিবেশবিদ ও নগর পরিকল্পনাবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, পাহাড় কাটার ফলে ভূগর্ভস্থ পানি প্রবাহে বিঘ্ন ঘটে, ভূমির ধারণ ক্ষমতা কমে যায় এবং বর্ষায় ভূমিধসের সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়। অতীতেও নগরীর লালখান বাজার, মতিঝর্ণা, বায়েজিদ, চকবাজার এলাকায় পাহাড় ধসের কারণে প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে।চট্টগ্রামে ভূমি উন্নয়ন ও ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এক ধরনের ‘অদৃশ্য প্রভাবশালী চক্র’ কাজ করছে বলে অভিযোগ অনেকের। এদের ছত্রছায়ায় নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে পাহাড় কেটে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ হয়, আর আইনি প্রক্রিয়াকে দীর্ঘ করে সময় ক্ষেপণ করে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হয়।সিডিএর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নকশা বহির্ভূত যেকোনো ভবনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে। নিয়মিত অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি উচ্চ আদালতের রায় কার্যকরে তাদের আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া হবে।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর