মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল দুর্নীতি ও অনিয়মে ভরপুর। পতিত সরকারের আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত দোসররা এখনো আছেন আগের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে। তাই অনিয়ম করাই যেন দিনদিন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে এই হাসপাতালে।২০২০ সালে হাসপাতালের কার্যক্রম উদ্ভোদনের পর সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছের ও আস্থাভাজন অদক্ষ ডাক্তারদের হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু আজ অব্দি কোন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এই হাসপাতালে পরিচলক হিসেবে নিয়োগ পাইনি । তাই অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার মতন কেউ উঠে দাঁড়ায়নি । বর্তমানে হাসপাতালটির পরিচালক ডা মো সফিকুল ইসলামও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত। আরও জানা যায়, এই পরিচালক ডা মো সফিকুল ইসলাম চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ছাত্রলীগের পদদারী নেতা ছিলেন।শুরু থেকেই ৫০০ শয্যার সরকারি এই হাসপাতালটি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয় । যা গত ৫ বছরে চরমে পৌছে গেছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে গাইনি, মেডিসিন, নাক কান গলা, কিডনি ডায়লাইসিস, ডেন্টাল, অর্থপেডিক ও সার্জারি বিভাগ সহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ গুলোতে অনিয়মে নিমজ্জিত।প্রতিদিন বহির্বিভাগে ১০০০ হাজার থেকে ২০০০ রোগী সেবা নিতে আসেন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর কেউ চলে যান আবার কেউ ভর্তি হন হাসপাতালে। কিন্তু রোগিদের কি পরিমান ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে তা কেবল রোগী এবং তাদের স্বজনরাই জানেন।পদে পদে রোগীদের গলা কেটে টাকা আদায় করা হচ্ছে। ভর্তির সময় সব রোগীই হচ্ছেন বিড়ম্বনার শিকার। আয়া, বুয়া, ওয়ার্ড বয় দ্বারা প্রতিনিয়ত হেনস্তার শিকার হচ্ছেন রোগী ও স্বজনেরা। স্তরে স্তরে টাকা দিয়েও হয়রানীর শিকার হচ্ছেন অনেকেই। দেখে মনে হয় হাসপাতাল নয় এটি একটি কষাইখানা। কেউ কারো কথা শুনতে রাজি নন। স্বজনেরা টাকা খরচ করেও কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেননা। গরীব ও অসহায় রোগীদের চিকিৎসা নেই বললেই চলে । কারন এখানে প্রতিটি পদে পদে টাকা ছাড়া কাঙ্খিত চিকিৎসা মিলে না।সাম্প্রতি ভুল রক্ত দেওয়ার কারণে রোগী মারা গেছে। সঠিক চিকিৎসা ও চিকিৎসায় অবহেলার কারণে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে রোগী । স্বজনদের আহাজারীতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। তবে দায়িত্বরতারা রোগী এবং স্বজনদের সাথে দুর্ব্যবহার ও নিষ্ঠুরতা এতোটাই নির্মম যা দেখে মনে হয় যেন হাসপাতালে কোন হৃদয়বান ব্যাক্তি নেই। উল্টো মনে হয় রোগী ও তাদের স্বজনদেরকে শাসন করা হয়।সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া আউটসোর্সিং ডিউটি করা স্টাফরা। আওয়ামী লীগের আমলে বিভিন্ন এলাকার চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের টাকা দিয়ে এই আউটসোর্সিং চাকরি নিয়েছে তারা। তাদের ধারা রোগীদের টেস্ট বানিজ্য চলছে রমরমা । অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো প্রতিকার তো দূরের কথা তারা দেখেও না দেখার ভান করছেন। এই হাসপাতালে কর্মরত অনেকেই লুটপাটের সক্রিয় সদস্য বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে এবং এ নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয় । কয়েক মাস আগে দুর্নীতি দমন কমিশন হাসপাতালে অভিযান চালায় সে সময় বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণও পায় । তবে আজ পর্যন্ত পরিচালক তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। হাসপাতালে প্যাথলজি বিভাগ দীর্ঘ দিন যাবত বন্ধ থাকায় রোগী ভর্তি হলেই সকল প্রকার টেস্ট বাইরে থেকে করতে হয়। বিভিন্ন ইউনিটের ডাক্তার, নার্স ও ওয়ার্ড বয়রা রোগী ও রোগীর স্বজনদের বাধ্য করেন বাইরে থেকে টেস্ট করে আনতে । একটা ইসিজি টেস্ট হাসপাতালে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। একই টেস্ট বাইরে ৩০০ টাকা দিয়ে করতে হয়। এই টেস্ট গুলো তাদের নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করতে হবে। তা নাহলে রোগী ও স্বজনদের সাথে খারাপ আচরণ করেন তারা । এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালককে ভক্তভোগিরা অনেকবার মৌখিক ভাবে অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি।আরো অভিযোগ রয়েছে , কিডনি ডায়লাইসিস ইউনটে ১৪ শয্যার ইউনিটের দায়িত্বে রয়েছেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক একিউএম আশরাফুল হক এর আপন ছোট ভাই ডা: আসলামুল হক। রোগী ভাগানো নিয়ে সাংবাদিকরা তথ্য চাইতে গেলে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেন এই একিউএম আশরাফুল হক। বিভিন্ন গণমাধ্যমে যা ডালাও করে সংবাদ প্রকাশিত হলেও ৷ এই ঘটনার কয়েক দিন পর তাকে সহকারী পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। যা নিয়ে জনমনে রয়েছে নানা কৌতুহল। গত কয়েক দিন হাসপাতাল ঘুরে বিভিন্ন বিভাগের মেডিকেল অফিসারদেরকে বেশি ভাগ সময় দেখা যায়নি। বলতে গেলে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দিয়েই চলছে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সাম্প্রতিক সময়ে ভুল রক্ত দেয়ার ইস্যুতে ও দেয়া যায় , ভুল রক্তের অর্ডার একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক দিয়েছিলেন।পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি এক রোগীর স্বজন (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানায়, প্রায় রোগীর স্বজনদের উপর এক প্রকার জোর খাটিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা আদায় করে ওয়াড বয়রা। হুইলচেয়ারে নিয়ে যেতে, ময়লা পরিষ্কার করতেও টাকা দিতে হয় তাদের। ডায়বেটিক ফুট এর মত সিরিয়াস পেশেন্টের ড্রেসিং পর্যন্ত করে থাকে এই আউটসোর্সিং ওয়াড বয় রা।মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এই সব অভিযোগ এর সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেল দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। এই হাসপাতালে এর আগে যেসব পরিচালক দায়িত্ব পালন করেছে। তাদের সময়ের চেয়ে বর্তমান পরিচালক এর সময়ে অব্যবস্থাপনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে খারাপ ৷ এই হাসপাতালে রয়েছে দেশি বিদেশি নামিদামি অনেক যন্ত্রপাতি যা এখনো বিভিন্ন রুমে অযত্নে পড়ে রয়েছে বছরের পর বছর । সব মিলিয়ে এই হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ অত্যন্ত ভয়াবহ। সাধারণ মানুষ এখানে সেবা নেয়ার আশায় এসে এক প্রকার অত্যাচারের স্বীকার হয়। এই হাসপাতালের সেবার মান বাড়াতে অন্তর্বর্তী কালীন স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সুনজর প্রয়োজন বলে মনে করেন মানিকগঞ্জ বাসী। এমআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর