প্রতি বছর বোরো মৌসুমে ধান রোপণ করতে ও কাটতে শ্রমিক সংকটে পড়েন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কৃষকরা। দ্বিগুণ পারিশ্রমিক দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যায়না। অনেকে পরিবারের লোকজন নিয়ে ধান কাটতে বাধ্য হন। অনেকে আবার বাড়তি পারিশ্রমিক দিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলতে হয়। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে লোকসান হয় বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। তবে, ধান চাষে আধুনিকায়ন করার লক্ষে সমলয় পদ্ধতি কৃষকদের আশা জাগাচ্ছে বলে জানান কৃষি বিভাগ।কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চাষাবাদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে উন্নত কৃষি ব্যবস্থাপনা ও কৃষি প্রযুক্তি। কৃষিতে এমনই এক আশীর্বাদের নাম হলো ‘সমলয় চাষাবাদ পদ্ধতি’। সারিবদ্ধভাবে ট্রেতে সাজানো ধানের কচি চারা, দেখতে অনেকটা সবুজ কার্পেটের মতো মনে হলেও আসলে তা নয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি ও চারা রোপণ না করে এ পদ্ধতিতে প্লাস্টিকের ট্রেতে আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে লাগানো হয় ধানের বীজ। এতে ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে চারা মাঠে লাগানোর উপযোগী হয়ে যায়।সর্বাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে উচ্চ ফলনশীল জাত ব্যবহার, ট্রে-তে বীজ বপন, কম বয়সের চারা রোপণ, চারা রোপণে রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার ব্যবহার, সুষম সার ব্যবহার, ধান কাটায় কম্বাইনড হারভেস্টার ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো, উৎপাদন খরচ কমানো ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ভরা মৌসুমে ধান কাটার সময় কৃষি শ্রমিকের সংকটের সমাধানে ‘সমলয়’ চাষাবাদ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হবে।উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের পূর্ব রাজনগর এলাকার ৬০-৬৫ জন পাহাড়ি কৃষক তাদের ৫০ একর জমিতে চাষাবাদের জন্য গ্রহণ করেছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর বাস্তবায়নে ২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষি পূর্নবাসন সহায়তা খাত হতে রবি মৌসুমে বোরো ধানের “সমলয়” চাষাবাদ পদ্ধতি।রাজনগর এলাকার কৃষক আবুল কালাম, আবু তালেব ও জ্যোতিভূষণ বর্মণসহ কয়েকজন কৃষকের ভাষ্য, শ্রমিক স্বল্পতার কারনে সমলয় চাষাবাদের মাধ্যমে মেশিনের সাহায্যে জমিতে ধানের চারা রোপন করেছি। এতে শ্রমিক খরচ ও সময় সাশ্রয় হয়েছে। এ পদ্ধতি ব্যবহার করায় অনেক উপকৃত হয়েছি।একই এলাকার অপর কৃষক রাখাল চন্দ্র বর্মণ বলেন, বোরো ধান চাষাবাদে এর আগে কখনো আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে ট্রে-তে ধানের চারা উৎপাদন করিনি। প্রথমবারের মতো এমন পদ্ধতিতে ধানের বীজতলা করেছি। মেশিনের সাহায্যে চারা রোপণ করেছি। রাসায়নিক সার কম ব্যবহার করা হয়েছে। আশা করছি ফলনও ভালো পাওয়া যাবে।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে কৃষকের যে শ্রম ও শ্রমিক খরচ, তা কমে যাবে। পাশাপাশি আধুনিক পদ্ধতিতে তারা চাষাবাদ করবেন। ধান কাটার সময় কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ব্যবহারের দ্রুত কাটা ও মাড়াই করতে পারবেন। এতে কৃষকের শ্রমিক সংকট কেটে যাবে।এইচএ
Source: সময়ের কন্ঠস্বর