জীবননগর উপজেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম এবং ধানে তেমন কোনো রোগবালাই না লাগায় ফলন অত্যন্ত ভালো হচ্ছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা ধান কাটা শুরু করেছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি শুরু হবে ধান কাটার কাজ। কৃষকের ঘরে ঘরে ফিরবে নবান্ন উৎসবের আমেজ।জীবননগর উপজেলার উথলী, আন্দুলবাড়িয়া, মনোহরপুর, রায়পুর, হাসাদাহ, বাঁকা ও সীমান্ত এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, সবুজ ধান পেকে সোনালি রঙ ধারণ করেছে। বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালি ধানের শীষ। এ দৃশ্য দেখে কৃষকের মুখে ফুটে উঠেছে নবান্নের হাসি।এক সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হবে ধান কাটা। এরপর ২-৩ দিন রোদে শুকিয়ে ধানের আঁটি বেঁধে বাড়িতে আনা হবে। জীবননগরের কৃষকেরা পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবেও বছরে দুবার ধান চাষ করে থাকেন। ধানের পাশাপাশি এর বিচালি উৎকৃষ্ট মানের গো-খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। প্রতি বিঘা জমি থেকে প্রাপ্ত বিচালির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১০-১২ হাজার টাকা।উপজেলার উথলী গ্রামের ধান চাষি শাহাবুদ্দিন বলেন, আমি এবার দুই বিঘা জমিতে খাটো বাবু জাতের ধান চাষ করেছি। ধান খুব ভালো হয়েছে। আগামী ২-৩ দিন পর ধান কাটা শুরু করবো। প্রতি বিঘায় ৩০ মণ করে ধান পাবো বলে আশা করছি। নিজের খোরাকের জন্য কিছু রেখে বাকি বিক্রি করবো। বিচালিও গরুর সারা বছরের খোরাক হয়ে যাবে।মনোহরপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান জানান, আমি দেড় বিঘা জমিতে রড মিনি জাতের ধান চাষ করেছি। ফলন এবার খুব ভালো হবে বলে আশা করছি। মাঠের ধান দেখে খুব আশাবাদী। তবে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় আছি। ধান ঘরে না উঠা পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছি না। ধান বিক্রি করে মহাজনের হালখাতা ও বর্গা জমির টাকা শোধ করবো।একই গ্রামের কৃষক মন্টু মিয়া বলেন, ধান চাষ এখন অনেক ব্যয়বহুল। তবে এবার ফলন দেখে মনে হচ্ছে ধান লাগানো, সেচ, সার-কীটনাশক ও শ্রমিক খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকবে।আন্দুলবাড়ীয়া গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আবুল হোসেন বলেন, প্রতিবিঘা জমিতে ধান লাগানো, সেচ, সার-কীটনাশক, শ্রমিক ও জমি লিজমানি বাবদ খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি ৩০ মন ধান হলে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবো। খরচ বাদে প্রতি বিঘায় ১৫ হাজার টাকা লাভ থাকবে।জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে জীবননগর উপজেলায় ৬ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। সেখানে ৬ হাজার ১৬২ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ হয়েছে। এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব তেমন ছিল না এবং ধানে রোগবালাইও তুলনামূলকভাবে কম ছিল। ঝড় ও শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাসের বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা কৃষকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। এখন ৮০ শতাংশ ধান পেকে গেলে দ্রুত ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।এআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর