কুমিল্লার চান্দিনায় চুরির অপবাদ সইতে না পেরে নিজের শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করা অটোরিকশা চালক মো. সবুজ (৩০) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার স্ত্রী খুশি আক্তার।নিহত সবুজ কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বাড়েরা ইউনিয়নের গড়ামারা গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে। জীবিকার তাগিদে তিনি চান্দিনা উপজেলা সদরের বেলাশহর এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাতেন। দুই সন্তানের জনক ছিলেন তিনি।ঘটনার সূত্রপাত গত ১৩ এপ্রিল (রবিবার) সন্ধ্যা ৭টায়। চান্দিনা সরকারি হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় কয়েকজন মাতাব্বরের উপস্থিতিতে তাকে চোর অপবাদ দিয়ে অটোরিকশাটি ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে বলা হয়। অপমান সইতে না পেরে ঘটনাস্থলেই নিজের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন সবুজ। এতে তার শরীরের প্রায় ৩৫ শতাংশ পুড়ে যায়। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়।জানা গেছে, চান্দিনা হাসপাতাল রোডে ইউনুছ মিয়ার একটি গ্যারেজ ভাড়া নিয়ে সবুজসহ আরও দুইজন অটোরিকশা রাখতেন। পালাক্রমে তারা গ্যারেজ পাহারা দিতেন। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৩টার দিকে ওই গ্যারেজ থেকে দুটি অটোরিকশা চুরি হয়। পরবর্তীতে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চোর শনাক্ত করে চলতি বছরের ৪ মার্চ চান্দিনা থানায় তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০ জনকে আসামি করে মামলা (নং-৬) দায়ের করা হয়। পরে স্থানীয়রা একজন আসামিকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও কিছু মাতাব্বর বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনেন এবং উল্টো সবুজকে দোষারোপ করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। সবুজ এ জরিমানা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়।১৩ এপ্রিল সালাউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি মাতাব্বরদের প্ররোচনায় সবুজকে আটকে রেখে তার অটোরিকশা ছিনিয়ে নেয় এবং জরিমানা আদায়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। অপমান সহ্য করতে না পেরে সেদিনই সবুজ আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।নিহতের স্ত্রী খুশি আক্তার বলেন, “গরিবের জন্য কোনো আইন নেই, বিচার নেই। যারা চুরি করেছে, তারা ছাড়া পেয়ে গেছে। আর আমার স্বামী নির্দোষ হয়েও অপমানিত হয়ে মারা গেল। তার অটোরিকশাটিও ফেরত দেয়নি কেউ।”এ বিষয়ে চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মো. জাবেদ উল ইসলাম বলেন, “চুরির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মানিক, সাইফুল ও নাজমুল নামে তিনজনের নাম উল্লেখ ছিল। সে সময় আমি এই থানায় ছিলাম না। পরবর্তীতে সবুজকে দোষী করে তার ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। অপমান সহ্য করতে না পেরে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”পিএম
Source: সময়ের কন্ঠস্বর