নারায়ণগঞ্জের ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত ছাত্রদলের সাবেক নেতা জাকির খান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। রবিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। এই দফায় দীর্ঘ আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাবন্দি ছিলেন। হত্যাসহ কমপক্ষে ৩৩টি মামলার এই আসামি৷। এর আগে ৭ জানুয়ারি আলোচিত ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলায় জাকির খানসহ সব আসামি বেকসুর খালাস পান।দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর র্যাব-১১ এর একটি অভিযানে রাজধানী ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে সর্বমোট ৩৩টি মামলা আদালতে বিচারাধীন ছিল। মামলাগুলোর মধ্যে তিনি ৩০টি মামলায় আগেই খালাস পান তিনি। বাকি ৩টি মামলার মধ্যে দুটিতে জামিনে আছেন। সাব্বির আলম হত্যা মামলার খালাসের মাধ্যমে তার কারামুক্তিতে কোনো বাধা ছিল না।আশির দশকে জাতীয় পার্টির তৎকালীন এমপি নাসিম ওসমানের হাত ধরে ছাত্ররাজনীতিতে আসেন জাকির খান৷ ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর জাকির খানের সঙ্গে নাসিম ওসমানের বিরোধ শুরু হয়। পরে জাকির খান বিএনপি নেতা কামালউদ্দিন মৃধার নেতৃত্বে ১৯৯৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৫ সালে দেওভোগ এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে শহরের সোনার বাংলা মার্কেটের পেছনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার অভিযোগ রয়েছে জাকির খানের বিরুদ্ধে।১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে শহরের খাজা সুপার মার্কেটে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় হওয়া মামলায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড পেয়ে কারাগারে যান জাকির খান, কিন্তু রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় তিনি মুক্ত হন। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরীর নাতি হিসেবে শহরে পরিচিত হয়ে ওঠেন জাকির। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার ৭ মাসের মাথায় কাশীপুর বাংলাবাজার এলাকায় এক ঠিকাদারের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগে করা মামলায় দ্বিতীয় দফায় জাকির খানের ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। আওয়ামী লীগের আমলে প্রায় ৪ বছর কারাগারে ছিলেন জাকির।১৯৯৯ সালে স্বল্প সময়ের জন্য কারামুক্ত হয়ে জাকির খান জেলা ছাত্রদলের সভাপতির পদ পেয়ে যান। ২০০১ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিশাল গাড়িবহর নিয়ে মহড়া দেয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ফের কারাবন্দি হন জাকির। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরও প্রায় ৫ মাস তিনি কারাবন্দি ছিলেন।২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার। এ হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি, বর্তমান তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব এবং নিহতের বড় ভাই তৈমুর আলম খন্দকার বাদী হয়ে সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নামে ফতুল্লা থানায় মামলা দায়ের করেন।এবার এমন এক সময়ে জাকির খান কারামুক্ত হলেন, যখন ক্ষমতায় না থেকেও ক্ষমতার স্বাদ পাচ্ছে বিএনপি। সারাদেশে বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে শুরু করে তৃনমূলের সবাই আত্মগোপনে থাকায় রাজনীতির মাঠে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সুযোগ থাকছে তার সামনে। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির অনেকেই জাকির খানকে বেশ সমীহ করেন, ফলে বিএনপির রাজনীতিতে জাকির খান বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্ট৷ ফলে মুক্ত জাকির খান যে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে বড় প্রভাবক হয়ে উঠবেন, তা নিশ্চিত করেই জানাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর