ফসল ভান্ডার হিসেবে খ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত উল্লাপাড়াতে একটি সেতুর অভাবে বছর জুড়ে ফসল আহরণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় ২৯ গ্রামের কৃষকদের। চলনবিল অভ্যন্তরে বনপাড়া গোহালা নদীর কোলঘেঁষা নাদা গ্রাম অংশে একটি সেতু না থাকায় প্রায় দশ হাজার একর জমির চাষাবাদ নিয়ে চরম বিপাকে কৃষকেরা। কাঁচা হালট বা রাস্তা আছে কিন্তু মাঝখানে গোহালা নদীর বনপাড়া পয়েন্টে সেতু নাই। এ কারনে নদী পারাপরে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। ফলে উৎপাদন খরচের চাইতে ফসল ঘরে নিতে দ্বিগুণ খরচ গুনতে হয় এখানকার কৃষকদের। দীর্ঘদিন এ অবস্থা চলে আসলেও যেন দেখার কেউ নেই।সরেজমিন দেখা যায়, চলনবিল অভ্যন্তরে উল্লাপাড়া উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। চোখের নজর যতদূরে যায় শুধু ফসলে ভরা ক্ষেত আর ক্ষেত। দক্ষিণ ও পশ্চিমে পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলা পুব পাশে শাহজাদপুর উপজেলার রেশমবাড়ি ও রাওতারা এলাকা এবং উত্তরে উল্লাপাড়া উপজেলার বৃহত্তর মোহনপুর ইউনিয়ন। এই মোহনপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সীমান্তবর্তী ‘নাদা’গ্রাম। এই গ্রামের প্রায় দুই কিলোমিটার দক্ষিন দিয়ে বয়ে গেছে গোহালা নদী। শুষ্ক মৌসুমে নদীটি ক্ষিণ ধারায় বয়ে চললেও ভরা বর্ষায় এটি ভয়াল রুপ ধারণ করে। নদীর উত্তর-দক্ষিণে ২১টি গ্রামের ছয় হাজার ৩৩১ একর ও পূর্ব-পশ্চিমে ৮টি গ্রামের তিন হাজার ৩৯৩ একরসহ প্রায় দশ হাজার একর জুড়ে ফসলি মাঠ। প্রায় ত্রিশ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে বাড়িঘর নেই। বসতবাড়ি থেকে দূরবর্তী নিজ ফসলি জমিতে যেতে তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে যেতে হয়। এই দিগন্তজোড়া ফসলী এলাকার মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে চলনবিলের বিখ্যাত গোহালা নদী। নদীর উভয় দিকে নিচু আকারে হালট বা কাঁচা সড়ক থাকলেও নদীর বনপাড়া পয়েন্টে একটি সেতু না থাকায় ২৯ গ্রামের দশ হাজার একর ফসলি জমি চাষাবাদে বিড়ম্বনার মুখোমুখী হতে হয় কৃষকদের।স্থানীয়রা জানায়, প্রতি বর্ষায় প্লাবিত হয় এই বিস্তীর্ণ এলাকা। নদীর দক্ষিন তীর ঘেঁষে বৃ-আঙ্গারু, পোতাজিয়া, রাউতারা, বিলচন্দক, কেনাই, চিথুলিয়া, বাড়াবিল, বায়ড়াপাড়া, দত্তপুংলী ও গাছ পুংলী গ্রামের চার হাজার ৪০৭ একর আবাদি জমি রয়েছে। আবার উত্তর তীরে বেলতৈল, আটিয়ারপাড়া, চকপাড়া, এলংজানী ও কোনাবাড়ীসহ ১১টি গ্রামের কৃষকের সাড়ে পাঁচ হাজার একর ফসলি জমি রয়েছে। এসব জমিতে প্রচুর পরিমান সরিষা, ধান, আলু, গম, খিরা, শসা, মাসকালাই ও সবজি উৎপাদন হয়। কিন্তু সেতু না থাকায় এবং চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার মেঠো পথ হওয়ায় উৎপাদিত ফসল মাথায় বইতে হয়। আবার গরু বা মহিষের গাড়ীতে বহন করে ফসল ঘরে নিতে শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ ফসল ভাড়া হিসেবেই দিতে হয়। নাদা গ্রামের কৃষক ফজর আলী,হাসান আলী,আনোয়ার হোসেন,নুর মোহাম্মদ,শাহিন সরকার,সায়েম আকন্দসহ অন্যরা জানান, নদী পার হয়ে আমাদের জমি চাষাবাদ করতে অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কারণ নদীর অপর পারে যাওয়ার জন্য কোন সেতু নেই। নদী সাঁতরে অপর পারে যাওয়া সম্ভব না হওয়ায় জমিগুলো পরিণত হয়েছে এক ফসলি জমিতে। এ কারণে দীর্ঘ দিন থেকে ২৯ গ্রামের মানুষ বনপাড়া গোহালা নদীর অংশে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে।নাদা চকরিপুর গ্রামের কৃষক জসমত আলী বলেন, আমাদের বিশাল সেতুর দরকার নেই। একটি ফুটওভার ব্রিজের মত থাকলে ওপারের জমিতে গিয়ে নিয়মিত চাষাবাদ করা সম্ভব হতো। তাছাড়া বর্তমানে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেড়েছে। নদীতে সেতু না থাকায় সময় মত জমিতে সারের ব্যবহার, কীটনাশক ও ওষুধ প্রয়োগ, জমির ফসল রোপন ও ঘরে তোলা এবং আবাদকৃত ফসল বাজারজাত করতে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ফলে প্রতি বছর ভালো ফসল উৎপাদন করেও লোকসান গুনতে হয় আমাদের। সেতু না থাকায় কৃষকের দুর্ভোগের কথা জানিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমী বলেন, কৃষকের এটি ন্যায্য দাবি। আমি নিজেও সেখানে গিয়েছিলাম। ওই নদীর দু’পাড়ে বিস্তীর্ণ ফসলী মাঠ। কিন্তু সেতুর অভাবে কৃষকের উৎপাদিত ফসল পরিবহনে অধিক শ্রম ও অতিরিক্ত খরচ গুনতে হয়। কৃষি বিভাগের পরামর্শে কৃষকরা ফসল উৎপাদন ভালো পেলেও সেতু না থাকায় তাদের দুর্ভোগ কমছেনা।এ প্রসঙ্গে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী শহিদুল্লাহ বলেন, আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি। কৃষকের এই দুর্ভোগের বিষয়টি আমার জানা নেই৷ তবে এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি। এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর