নোয়াখালী সদর উপজেলার মান্নান নগরে মাইজদী ১৩২/৩৩ কেবি বিদ্যুতের সাব-স্টেশন নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নির্মাণাধীন প্রজেক্টের সকল তথ্য সামনে প্রদর্শন করার নিয়ম থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তা করেনি।সাব-ঠিকাদার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এর অর্থায়নে ২০২২ সালে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি’র) তত্ত্বাবধানে মাইজদীতে বিদ্যুতের এ সাব-স্টেশান নির্মাণ কাজ শুরু হয়। চায়নার এনহেসমেন্ট সিংহেং পাওয়ার নেটওয়ার্কিং কোম্পানি এ কাজটি পেয়ে থাকে। সাবস্টেশন নির্মাণের কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে মাটি ভরাট, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, বহুতল ভবন, ট্রান্সফর্মা স্থাপন, আনসার ব্যারাক, সড়ক ও ড্রেন নির্মাণ। চায়না কোম্পানি এ কাজগুলো নিজে সরাসরি না করে বিভিন্ন গ্রুপে সাব-কন্ট্রাকে দিয়ে দেন। আর এসব সাব-কন্ট্রাকের তদারকি করেছেন পতিত স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর প্রজেক্ট সিক্স এর ম্যানেজার ওমর ফারুক। ওমর ফারুক বড় ধরনের সুবিধা নিয়ে এ কাজগুলো সাব-কন্ট্রাকে দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সাব-কন্ট্রাকটার নিম্নমানের সামগ্রী ইট বালি সিমেন্ট রড পাথর খোয়া দিয়ে যেনতেনভাবে এই কাজগুলো করে যাচ্ছেন। নির্মাণাধীন প্রকল্পের সকল তথ্য সামনে প্রদর্শন করার নিয়ম থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তা করেননি। প্রকল্প-সিক্স এর ম্যানেজার ওমর ফারুক আওয়ামী লীগের দোসর হয়েও স্থানীয় নেতাদের ম্যানেজ করে এলাকার জনগণকে মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে এই অনিয়ম গুলো করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।স্থানীয় ইউপি সদস্য নিজাম উদ্দিন, ছাত্র সমন্বয়ক ডাক্তার গোলাপ, স্থানীয় সারোয়ার আল বাবুল, আমির হোসেন, হারুন অর রশিদ অভিযোগ করেন, মান্নান নগর এলাকায় বিদ্যুতের মাইজদী সাব স্টেশন নির্মাণে শুরু থেকে ব্যাপক অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে আসছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এখানে চরাঞ্চলের নিম্নমানের নোনাযুক্ত ইট, চরাঞ্চলের কাদামাটি যুক্ত ভিটি বালু দিয়ে ভবন দেওয়াল ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণে নিম্নমানের ইটের খোয়া, পাথর, সিমেন্ট ব্যবহার করে আসছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া দরজা জানালায় নিম্নমানের কাঠ, লোহার গ্রিল ও থাই গ্লাস লাগানো হয়েছে। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছে, কাজ শেষ হলে দুই তিন বছর পর ওয়ালগুলো থেকে পলেস্তারা খসে পড়বে, এতে করে সীমানা প্রাচীর, দরজা, জানালাসহ পুরো অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়বে। এটি দেখার যেন কেউই নেই। স্থানীয় জনগন এসকল অনিয়মের প্রতিবাদ করলে প্রকল্প-সিক্স এর ম্যানেজার ওমর ফারুক ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন নিজেদেরকে আওয়ামী লীগের লোক দাবি করে প্রভাব বিস্তার করে যেনতেনভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ওমর ফারুকরা এখন সুর পাল্টিয়ে নিজেদেরকে বিএনপি’র লোক বলে প্রচার শুরু করছে। তবে অভিযোগ উঠেছে চৌমুহনী সাব-স্টেশান নির্মাণ কাজেও ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে।বিদ্যুতের সাবস্টেশন নির্মাণে অনিমের তথ্য সংগ্রহে সরেজমিন গেলে প্রজেক্ট সিক্স এর ম্যানেজার ওমর ফারুক সহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন সাংবাদিকদের উপর হামলা করতে উদ্যত হয়, ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং বিভিন্ন ধরনের গালমন্দ হুমকি-ধমকি ও ভয় ভীতি প্রদর্শন করে। এ সময় সাংবাদিকদের সাথে স্থানীয় লোকজন একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ করলে তখন তারা মারমুখি আচরণ থেকে পিচু হটে, নমনীয় আচরণ করে। এই বিষয়ে প্রজেক্ট সিক্স এর ম্যানেজার ওমর ফারুক এর নিকট জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে উগ্র আচরণ করেন, সঠিক তথ্য না দিয়ে অনেক তথ্য এড়িয়ে যান। তিনি জানান, পিজিসিবি তথা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশ লিঃ এর তত্ত্বাবধানে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এর অর্থায়নে প্যাকেজ সিক্স এর একটি প্রকল্প সদরের মান্নান নগরে অপরটি বেগমগঞ্জের চৌমুনীতে। মান্নান নগরের সাব-স্টেশান এ প্রজেক্টটি আড়াই বছর ধরে কাজ চলছে। ২৫ সালের মার্চের শেষের দিকে এটি শেষ হবে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এ কাজ হচ্ছে। একনেক কমিটি ও অডিট কমিটির পর্যবেক্ষণে কাজ চলছে। এখানে মাটি ভরাট, ভবন নির্মাণ, চারদিকে বাউন্ডারি (সীমানা প্রচীর), আনসার ব্যারাক, ড্রেন ও শাখা সড়ক নির্মাণ হবে। এটি সাব-কন্ট্রাকে আপন কনস্ট্রাকশনসহ একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। কাজের অনিয়ম, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে এড়িয়ে যান, পরবর্তীতে স্বীকার করেন, শেষ মুহূর্তে ইট বালি ইটের খোয়া সহ কিছু নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে। এই বিষয়ে জানতে চেয়ে সাব কন্টাকটার আপন কনস্ট্রাকশনের সত্ত্বাধিকারী মফিজ মিয়ার মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে আপন কনস্ট্রাকশনের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী এ.আর রাসেল, প্রজেক্ট ম্যানেজার ওমর ফারুকদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান। এ ঘটনায় নিউজ হলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হবে, তাদের বিল আটকে যাবে। সেজন্য সংবাদ প্রচার না করতে সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন। রাসেল আরও জানান, মাইজদী সাব স্টেশনের কাজ পেয়েছে চায়না কোম্পানী। তবে ওমর ফারুক বলতে তিনি শুনেছেন এ প্রজেক্ট এর ব্যয় শত কোটি টাকা। আপন কনস্ট্রাকশন সাব-কন্টাকে ভিতরের পশ্চিম পাশে চার তলা ভবন, আনসার ব্যারাক, শাখা সড়ক ও ড্রেন নির্মাণ করতেছে। এখানে বাউন্ডারি মাটি ভরাট ট্রান্সফর্মার স্থাপন অন্য ঠিকাদাররা করতেছে, নিম্নমানের কাজের বিষয়ে তিনি এড়িয়ে যান।এ নিয়ে পিডিবির নোয়াখালী নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুল কবিরের নিকট জানতে চাইলে তিনি পরে জানানোর কথা বলেন। পরবর্তীতে আবার ফোন করলে তিনি চৌমুহনী গ্রীডের প্রকৌশলী আব্দুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। চৌমুহনী গ্রিডের প্রকৌশলী আব্দুর রহমান এর নিকট জানতে চাইলে তিনি তথ্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন, সাবস্টেশন নির্মাণের কোন তথ্য তাদের কাছে নেই বলে জানান। তবে তিনি জানান, ঠিকাদারের কাজ শেষ হলে বিদ্যুতের সাইটটি তারা বুঝে নিবেন, কিন্তু কনস্ট্রাকশন সাইটটি তাদের (গ্রীডের নয়) বুঝার বিষয় নয়। এ ব্যাপারে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ এর নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি আমার নলেজে নেই, এখন যেহেতু শুনেছি খবর নিব। এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর