রাষ্ট্রায়ত্ত সার উৎপাদন কারখানা চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল)-এ গ্যাসের কোনো সংকট না থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)।শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সকাল ৬টা থেকে কারখানাটির সার উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। উৎপাদন স্থবিরতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) পরিচালিত এই রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি।বিস্ময়করভাবে, এই বন্ধের পেছনে কোনো সুস্পষ্ট কারণ জানানো হয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে। সরবরাহ বন্ধ থাকায় সিইউএফএলের দৈনিক ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে কৃষি উৎপাদন ও সার সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান সময়ের কণ্ঠস্বর-কে জানান, “কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। সে অনুযায়ী আমরা কারখানায় শাটডাউন প্রক্রিয়া শুরু করি। কিন্তু ঠিক কী কারণে সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে, সে বিষয়ে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।”উল্লেখ্য, প্রতিদিন সিইউএফএল কারখানায় সরবরাহ করা হতো প্রায় ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। অন্যদিকে, চট্টগ্রামের আরেকটি বেসরকারি সার কারখানা কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো)-কে সরবরাহ করা হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।গ্যাস সরবরাহ বন্ধের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (প্রকৌশল) আমিনুর রহমান বলেন, “গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের সিদ্ধান্ত আমরা নিই না। আমাদের যে নির্দেশনা দেওয়া হয়, আমরা তা বাস্তবায়ন করি। যখন যাকে গ্যাস দিতে বলা হয় দিই, আর বন্ধ করতে বলা হলে বন্ধ করি।”তিনি আরও বলেন, “চট্টগ্রামে গ্যাসের কোনো সংকট নেই। সুতরাং এটা ধরে নেওয়া যায়, কোনো বিশেষ কারণে হয়তো সরবরাহ বন্ধের নির্দেশ এসেছে।”সিইউএফএল একটি রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান, যেটি দেশের সার উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। ১৯৮৭ সালের ২৯ অক্টোবর জাপানের কারিগরি সহায়তায় আনোয়ারা উপজেলার রাঙ্গাদিয়ায় কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে এই কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখন পর্যন্ত এটি বিসিআইসি’র অধীনে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের প্রতি অবহেলার এই নমুনা যদি চলমান থাকে, তাহলে কৃষি নির্ভর অর্থনীতির দেশ হিসেবে এর চরম মূল্য দিতে হতে পারে।” চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহে সাম্প্রতিক সময়গুলোতে একাধিকবার অসামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করা গেছে। সরকার গ্যাস সরবরাহে “জাতীয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বণ্টন” নীতির কথা বললেও বাস্তব চিত্র অনেকাংশেই প্রশ্নবিদ্ধ। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, রাষ্ট্রীয় কারখানার তুলনায় বেসরকারি কারখানার প্রতি সরবরাহে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে কি না, সে প্রশ্নও উঠে আসছে।এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে অকারণে অবরুদ্ধ করে রাখার সিদ্ধান্তকে একটি “ব্যবস্থাপনাগত অসচেতনতা কিংবা বেসরকারিকরণে প্ররোচনার কৌশল” হিসেবেও দেখছেন কেউ কেউ।এনআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর