চট্টগ্রাম মহানগরীতে সরকার পতনের দিন সংঘটিত রাজনৈতিক সহিংসতার আট মাস পর গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত এক শ্রমিকের ঘটনায় অবশেষে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের পরিবার। এই মামলায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ২৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটি বুধবার (০৯ এপ্রিল) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ডবলমুরিং থানায় দায়ের করেন নিহত মো. ইউসূফের বাবা মো. ইউনুচ। তিনি হাটহাজারী উপজেলার পশ্চিম ধলই ইউনিয়নের জলই কোম্পানির বাড়ির বাসিন্দা।২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, বাংলাদেশে সরকার পতনের আন্দোলনের উত্তাল দিন। ওই দিন সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের দেওয়ানহাট মোড়ে চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মো. ইউসূফ (৩৫), পেশায় এক বরফ কারখানার শ্রমিক, প্রতিদিনের মতো আইস ফ্যাক্টরি সড়ক থেকে বরফ সরবরাহ করতে বের হয়েছিলেন। কিন্তু আর ঘরে ফেরেননি। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইউসূফের স্ত্রীর বড় বোন ফোনে জানান—চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) নেওয়া হয়েছে ইউসূফকে, গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মারা গেছেন।তৎকালীন রাজনৈতিক উত্তেজনা, ভয়ভীতি ও পরিবারের মানসিক বিপর্যয়ের কারণে ইউসূফের মরদেহ দ্রুত গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। চমেক থেকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। তখন পরিবারের সদস্যরা নিহতের বুকে গুলির চিহ্ন স্পষ্ট দেখতে পান। তারা স্থানীয়ভাবে জানতে পারেন, দেওয়ানহাট মোড়ে ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত সহিংসতায় রাজনৈতিক নেতাদের নির্দেশে একদল লোক অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়, গুলি ছোড়ে, আর সেই গুলিতেই প্রাণ হারান ইউসূফ।হত্যা মামলার এজাহারে যেসব প্রভাবশালী নেতার নাম উঠে এসেছে, তাদের মধ্যে আছেন—সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও চট্টগ্রাম-৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চু, সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, সাবেক কাউন্সিলর মোর্শেদ আক্তার চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, তৌফিক আহম্মেদ চৌধুরী, আরশাদুল আলম বাচ্চু, জাফর আলম চৌধুরী, আবদুস সবুর লিটন। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, ডবলমুরিং থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোস্তফা কামাল টিপু, আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুম প্রমুখ।এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ১ থেকে ৪ নম্বর আসামির নির্দেশে বাকিরা লাঠি, রড, কিরিচ, দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। ইউসূফ সেই গুলির শিকার হয়ে নিহত হন।মামলার বিষয়ে ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিকুল ইসলাম সময়ের কণ্ঠস্বর-কে বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট বিজয় মিছিল ও আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সংঘটিতগুলোতে এক শ্রমিক মারা গেছেন। সেই ঘটনায় তার বাবা ইউনুচ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Source: সময়ের কন্ঠস্বর