আল-কোরআন মুসলমানদের জন্য জীবনব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা। এই মহাগ্রন্থে রয়েছে আল্লাহর বিধান ও নির্দেশ, নৈতিকতা ও সামাজিক আচরণের সংহিতা, যা প্রতিটি মুসলমানের জীবনে বাস্তবায়ন করা অপরিহার্য।কোরআন আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তার শেষ রসুল মুহাম্মাদ (সা.)-এর নিকট ২৩ বছরেরও অধিক সময় ধরে ধাপে ধাপে অবতীর্ণ হয় ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে। এটি কেবল ধর্মীয় বিধান নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা।মুসলমানদের জন্য কোরআন হচ্ছে শান্তি, বরকত এবং হিদায়াতের শ্রেষ্ঠ উৎস। এটি পাঠ, তাফসির ও আমলের মাধ্যমে মানুষ আত্মিক পরিশুদ্ধি লাভ করতে পারে। কোরআন মুখস্থ করা, পাঠ করা বা বাড়িতে সংরক্ষণ করাও একটি সওয়াবের কাজ হিসেবে গণ্য হয়। বিশ্বাস করা হয়, কিয়ামতের দিন একজন মুসলমানের জান্নাতে অবস্থান নির্ধারিত হবে তিনি দুনিয়ায় কত আয়াত মুখস্থ করেছেন তার ভিত্তিতে। কোরআনের আয়াতসমূহ পাঠ করলে আমরা দেখতে পাই, আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন ব্যক্তি, নবী, রাসুল, ফেরেশতা এবং এমনকি আল্লাহর দ্বীনবিরোধী ব্যক্তিদের নামও কোরআনে উল্লেখ করেছেন। এই নামগুলোর মাধ্যমে আমরা ঐতিহাসিক ঘটনা, শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত এবং আল্লাহর বার্তাবাহকদের জীবনের বিভিন্ন দিক জানতে পারি। সর্বমোট ৪৯ জন ব্যক্তির নাম কোরআনে উল্লেখ আছে, যাদের মধ্যে আছেন: কোরআনে মোট ২৫ জন নবী, ৩ জন সম্ভাব্য নবী বা মহৎ ব্যক্তি, ১৩ জন মানুষ, ৮ জন ফেরেশতা ও একজন নারীর নাম আছে। কোরআনে একমাত্র নারীর নাম–মারইয়াম (আ.)। পুরো কোরআনে মাত্র একজন নারীর নাম সরাসরি উল্লেখিত হয়েছে, তিনি হলেন মারইয়াম (আ.) – যিনি নবী ঈসা (আ.)-এর মা। আল্লাহ তার নাম উল্লেখ করে মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ঈসা (আ.) কোনো পুরুষের পুত্র নন, বরং মারইয়ামের অলৌকিক গর্ভধারণে জন্মগ্রহণ করেছেন। ১৩ জন ব্যক্তির নাম যাদের কথা কোরআনে উল্লেখ আছে।কোরআনে উল্লেখিত অ-নবী ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন আদিপিতা ইবরাহিম (আ.)-এর পিতা আযার, মিসরের শাসক আযীয, বনী ইসরাঈলের গোমরাহকারী আল-সামিরি, আল্লাহর রাসুলের বিরোধী আবু লাহাব, জালিম ফিরআউন ও তার মন্ত্রী হামান, মারইয়ামের পিতা ইমরান, তাগুত জালুত, আল্লাহপ্রদত্ত সম্পদের গর্বে পতিত কারুন, বনী ইসরাঈলের ন্যায়পরায়ণ রাজা তালুত, শয়তান ইবলিস, প্রিয় সাহাবি যায়দ ইবনে হারিসা (রাঃ), এবং উপরে উল্লেখিত মারইয়াম (আ.)। ২৫ জন নবীর নাম যাদের কথা কোরআনে উল্লেখ আছে।পবিত্র কোরআনে যাঁদের নবী হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন আদম (আ.), ইদরিস (আ.), নূহ (আ.), হুদ (আ.), সালেহ (আ.), ইব্রাহিম (আ.), লূত (আ.), ইসমাঈল (আ.), ইসহাক (আ.), ইয়াকুব (আ.), ইউসুফ (আ.), শু‘আইব (আ.), আইউব (আ.), মূসা (আ.), হারুন (আ.), দাউদ (আ.), সুলাইমান (আ.), ইলিয়াস (আ.), আল-ইয়াসা (আ.), ইউনুস (আ.), যাকারিয়া (আ.), ইয়াহইয়া (আ.), ঈসা (আ.), যুল-কিফল (আ.) এবং সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (সা.)। ৩ জন সম্ভাব্য নবী বা মহৎ ব্যক্তিতিনজন ব্যক্তির নাম কোরআনে উল্লেখ আছে যারা সম্ভবত নবী ছিলেন কিংবা অত্যন্ত জ্ঞানী ও ন্যায়পরায়ণ ছিলেন। তারা হলেন যুল-কারনাইন (রহ.), লুকমান (রহ.) এবং উজায়ের (রহ.)। ৮ জন ফেরেশতা যাদের নাম কোরআনে এসেছে।কোরআনে যেসব ফেরেশতার নাম পাওয়া যায় তারা হলেন আল্লাহর বার্তাবাহক জিবরাইল (আ.), রিজিক ও বৃষ্টি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত মিকাইল (আ.), পরীক্ষার জন্য প্রেরিত হারুত (আ.) ও মারুত (আ.), জাহান্নামের রক্ষক মালিক (আ.), মৃত্যুগ্রহণকারী ফেরেশতা মালাকুল মউত বা ইজরাঈল (আ.), আমল লিপিবদ্ধকারী কিরামান কাতিবিন (আ.) এবং আল্লাহর নিকটবর্তী ফেরেশতাবৃন্দ – মুকাররাবুন (আ.)। পবিত্র কোরআন কেবল নাম উল্লেখের জন্য নয়, বরং এর প্রত্যেকটি নামের পেছনে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও বার্তা। আল্লাহ তার নবীদের মু’জিজা প্রদান করেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ মু’জিজা দিয়েছেন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.)-কে – আল-কোরআন। একজন মুসলমানের দায়িত্ব, এই নামগুলো জানার পাশাপাশি তাদের জীবনী ও কোরআন থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের জীবনে তা বাস্তবায়ন করা।এবি
Source: সময়ের কন্ঠস্বর