চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বাকপ্রতিবন্ধী এক নারীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে মো. আজিজ (৫৫) নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তবে এই গুরুতর অপরাধের বিচার আদালতে না গিয়ে স্থানীয় সালিশের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, ১০ বার কান ধরে ওঠবস, মাটিতে সিজদা এবং সমাজচ্যুত করার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাতকানিয়ার চরতী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর ব্রাহ্মণডেঙ্গা গ্রামে মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে বাকপ্রতিবন্ধী ওই নারী তার বসতঘরে একা ছিলেন। এই সুযোগে অভিযুক্ত মো. আজিজ ঘরে প্রবেশ করে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। ধস্তাধস্তির আওয়াজ শুনে তার ভাই এবং আশপাশের লোকজন এসে আজিজকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। তবে একপর্যায়ে সে কৌশলে পালিয়ে যায়।পরদিন (২ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় সালিশি বৈঠক বসে। বৈঠকে অভিযুক্ত আজিজকে ১০ বার কান ধরে ওঠবস, মাটিতে সিজদা, ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং সমাজ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে।সালিশি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল আমিন, গণ্যমান্য ব্যক্তি আবদুল মন্নান, জামাল উদ্দিন, মোরশেদুল আলম টিপু, নুরুল আলম সওদাগর, আলী নবী লেদু প্রমুখ।স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল আমিন সময়ের কণ্ঠস্বর-কে বলেন, “উভয়পক্ষের সম্মতিতে আমরা একটি সালিশ করেছি। অভিযুক্ত মো. আজিজকে ১০ বার কান ধরে ওঠবস, মাটিতে সিজদা, ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া তাকে সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।”তবে ভুক্তভোগীর পরিবারের দাবি, তারা জরিমানার টাকা গ্রহণ করেননি। ভুক্তভোগীর বড় ভাই সময়ের কণ্ঠস্বর-কে বলেন, “আমার বোনের বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে আজিজ তার ওপর নির্যাতন চালানোর চেষ্টা করেছিল। এর আগেও সে কয়েকবার আমার বোনকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিল এবং ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমরা তখন প্রমাণসহ ধরতে পারিনি। এবার হাতেনাতে ধরা পড়ার পর সমাজপতিরা সালিশি বৈঠক করে বিষয়টি মীমাংসা করে দিলেন।”এই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জজকোর্টের আইনজীবী মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ হোসাইনী সময়ের কণ্ঠস্বর-কে বলেন, এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে সালিশি বৈঠক কোনোভাবেই যথাযথ বিচার হতে পারে না। বাংলাদেশ দণ্ডবিধি অনুযায়ী, ধর্ষণচেষ্টা একটি গুরুতর অপরাধ। ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (৪) (খ) ধারায় বলা হয়েছে, “যদি কেউ কোনো নারীর শ্লীলতাহানি বা ধর্ষণের চেষ্টা করে, তবে তিনি অনূর্ধ্ব ১০ বছর বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।”একই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জাহেদুল ইসলাম সময়ের কণ্ঠস্বর-কে বলেন, “এ বিষয়ে এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর স্থানীয় বাসিন্দা এবং নেটিজেনরা এই সালিশি রায়ের কঠোর সমালোচনা করেছেন। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ধর্ষণচেষ্টার মতো গুরুতর অপরাধ কেবল কান ধরে ওঠবস আর সামান্য অর্থদণ্ডের মাধ্যমে মীমাংসা করা যায় কি? কেউ কেউ বলছেন, এই ধরনের সালিশি রীতির কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যায় এবং সমাজে অপরাধের প্রবণতা বাড়ে।মানবাধিকার কর্মী কানিজ ফাতিমা আফরিন বলেন, ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টার মতো অপরাধের বিচার শুধুমাত্র আদালতে হওয়া উচিত। এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ভুক্তভোগী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন এবং অপরাধীরা আরও উৎসাহিত হয়।এনআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর