চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার ৩ দিন পর মৃত্যুর কাছে হার মানলেন কলেজছাত্রী তাসনিয়া ইসলাম প্রেমা (১৮)। শুক্রবার (৪ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এর আগে একই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন তার বাবা-মা ও দুই ছোট বোন। প্রেমার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একসময় প্রাণোচ্ছ্বল একটি পরিবার নিঃশেষ হয়ে গেল।এ খবর সময়ের কণ্ঠস্বর-কে নিশ্চিত করেছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দিন।গত বুধবার (২ এপ্রিল) ভোরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ার জাঙ্গালিয়া এলাকায় মাইক্রোবাস ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার ভয়াবহতায় মুহূর্তেই থমকে যায় চারপাশ। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তাসনিয়ার বাবা শামীম ও মা সুমি, পাশাপাশি তার দুই ছোট বোনও। প্রেমা গুরুতর আহত অবস্থায় বেঁচে থাকলেও ৩ দিনের চিকিৎসার পর তাকেও না ফেরার দেশে চলে যেতে হলো।এই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জনে।এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রেমা ছাড়াও গুরুতর আহত হয়েছিল ৬ বছর বয়সী শিশু আরাধ্য বিশ্বাস এবং তার মামাতো ভাই দুর্জয় কুমার বিশ্বাস (১৮)। আরাধ্যর বাবা দিলীপ বিশ্বাস ও মা সাধনা রাণীও একই দুর্ঘটনায় মারা যান।গত বৃহস্পতিবার শিশুটিকে চমেক হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। মানবিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, যিনি শিশুটির চিকিৎসার সমস্ত ব্যয় বহনের দায়িত্ব নিয়েছেন।একসময় স্বপ্নে ভরা ছিল প্রেমার পরিবার। বাবা-মা একে অপরের হাত ধরে পথ চলতেন, সন্তানদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনতেন। সেই স্বপ্নগুলো এক নিমেষে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায়। বাবা-মা ও দুই বোনকে হারিয়েও মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল প্রেমা, কিন্তু শেষরক্ষা হলো না।প্রেমার পরিচিতজনদের মতে, সে ছিল অত্যন্ত মেধাবী ও প্রাণবন্ত মেয়ে। তার উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন ছিল, পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করার প্রত্যয় ছিল। কিন্তু সব স্বপ্ন যেন হঠাৎ করেই নিভে গেল।বিশেষজ্ঞারা বলছেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে প্রায়ই ঘটে যাওয়া এমন দুর্ঘটনা নতুন নয়। অতিরিক্ত গতি, যানবাহনের বেপরোয়া চালনা ও সড়কের বেহাল দশার কারণেই একের পর এক প্রাণহানি ঘটছে। এই দুর্ঘটনা আবারও স্মরণ করিয়ে দিল, বাংলাদেশের মহাসড়কগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা প্রয়োজন।এই হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা কেবল একটি পরিবারের নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার গল্প নয়, বরং সড়ক নিরাপত্তার অভাবের এক নির্মম উদাহরণ। যারা প্রিয়জন হারালেন, তাদের কান্না আমাদের চোখে জল এনে দেয়, কিন্তু এই কান্না যেন আর কারও জীবনে না আসে, দ্রুত সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।এইচএ

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
ঢাবি’র শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারে ইউট্যাবের নিন্দা ও প্রতিবাদ
ঢাবি’র শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারে ইউট্যাবের নিন্দা ও প্রতিবাদ

‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালনকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. নুসরাত জাহান চৌধুরী এবং একই বিভাগের প্রভাষক শেহরীন আমিন Read more

৪৪তম বিসিএসে রিপিট ক্যাডার ৪০০ জন, সংশোধন হচ্ছে বিধি
৪৪তম বিসিএসে রিপিট ক্যাডার ৪০০ জন, সংশোধন হচ্ছে বিধি

৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৬৯০ জনকে নিয়োগে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সাময়িকভাবে মনোনীত করেছে। ৩০ জুন প্রকাশিত Read more

কর্মক্ষেত্রে নারী এসিল্যান্ড ফারিস্তা করিমের সাহসী নেতৃত্ব
কর্মক্ষেত্রে নারী এসিল্যান্ড ফারিস্তা করিমের সাহসী নেতৃত্ব

বিশ্ব নারী দিবসের প্রেক্ষাপটে নারীর ক্ষমতায়ন ও সাফল্যের গল্প তুলে ধরতে গেলে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারিস্তা করিমের Read more

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন