‘সরকার আমাকে কিছুই না দিলে আফসোস নেই,কিন্ত আমার সন্তানের লাশ কবর থেকে তুলতে দিব না’  শহীদ তারেক হোসেনের মা ফেরদৌসী খাতুন।সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০২৪ সালের বছরের ঠিক মাঝামাঝি সময়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, শেষমেশ তা গড়েছে সরকার উৎখাতের ইতিহাসে।৩৬ দিনের সেই আন্দোলনে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালাতে বাধ্য হন সাড়ে ১৫ বছর দোর্দণ্ড প্রতাপে দেশ চালিয়ে আসা শেখ হাসিনা।কথা ছিল এবার ঈদে বাড়ি ফিরে বড় ভাইকে একটি মুদি দোকান করে দেবে। আর সবাই নতুন পোশাক পরে ভালোভাবে ঈদটা কাটাবেন। কিন্তু ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের পতনে যখন ছাত্র জনতার আন্দোলন তুঙ্গে। তখন সেই আন্দোলনে শামিল হতে নিজেকে ঘরে আবদ্ধ করে রাখতে পারেনি তরুণ যুবক তারেক হোসেন। তিন সন্তানের জননী ফেরদৌসী খাতুন ডুকরে ডুকরে কান্না করে কথাগুলো বলছিলেন। ৫ আগষ্টের আগে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করলেও বাড়িতে তেমন জানাতো না। কিন্তু ৫ আগস্ট এর গণভবন মুখে আন্দোলনে সেদিন বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগেই বাবা-মাকে বলেই বের হয়েছিল। কিন্তু তার বের হওয়াটা যে শেষ বের হওয়া হবে এটা কে জানতো?এক সন্তান ছাড়া এবার ঈদ কেমন কাটবে এমন প্রশ্নে তারেকের বাবা আসাদুল ইসলাম বলেন,‘ সন্তান হারানোর বেদনা কেবলমাত্র বাবা-মা বোঝে।‘এত টাকায়, এত পোশাক; এত জামা কি হবে’! আমার সন্তান মারা যাওয়ার পরে সরকারসহ অনেকেই আমাকে সাহায্য সহযোগিতা করছে। তাতে আমার কিছুই হয় না। ঠিকমতো ভালো করে খেতে পারিনা। স্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হচ্ছে। শরীর ফুলে যাচ্ছে। সন্তান হারানোর শোকে। এখন শুনছি নাকি আমার সন্তানের লাশ কবর থেকে তোলা হবে। খবরদার আমি আমার সন্তানের লাশ কখনো তুলতে দেবো না। এতে যদি আমাকে কেউ কিছু না দেয়। তাতেও আমার আফশোস নেই।’ফেরদৌসী খাতুন ডুকরে ডুকরে কান্না করছিলেন আর বলছিলেন,‘আমার মেজো ছেলে তারেক খুব চালাক-চতুর ছিল। অনেক পরিশ্রমী। আমরা তাকে অনেক ভালবাসতাম। কিন্তু আমার বুকে পাথর মেরে সে-যে চলে যাবে দুনিয়া ছেড়ে তা আমি কখনো ভাবতে পারেনি। জীবন মায়ার সন্দীক্ষণে সে যখন মৃত্যুকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে লড়ছিল। তখন মনে হচ্ছিল- কেন তাকে আন্দোলনে পাঠালাম। কিন্তু কে-শুনে কার কথা! তার তো আন্দোলনে যাওয়ার মনস্থির হয়ে গেছিল। তাই তাকে বাধ্য হয়েই আন্দোলনে পাঠাতে হয়েছে। বুকে চার-চারটি গুলি আর হাতে একটা গুলি তার শরীরটা ঝাজড়া করে দিয়েছিল।’তারেকের মা আরও বলেন,আমরা যখন হাসপাতালে গেলাম, তখন হাসপাতাল পুরো রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছিল। চারিদিকে শুধু আহত আর নিহতের পুরো হাসপাতাল ভরে গেছিল। কোথাও ছিল না ওষুধ-পত্র। তেমন পাওয়া যাচ্ছিল না চিকিৎসক। একজন চিকিৎসক ২২ থেকে ২৫টি পর্যন্ত অপারেশন করেছিল। রাত যখন গভীর হলো,তখন চিকিৎসক বললো আপনার ছেলের অপারেশন সম্পূর্ণ হয়েছে। সে খবরটা শুনে নিঃশ্বাসটা বড় করে ফেললাম।তিনি আরও জানান, কিন্তু আমার সন্তান একফোঁটা পানি খাওয়ার জন্য আমাকে যখন বলছিল- চিকিৎসকরা তখন পানি না খেতে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছিল। কিন্তু আমি-তো মা, সন্তানের এই আর্তনাদ দেখে আমি না থামতে পেরে তাকে লুকিয়ে কিছু পানি খাওয়াই। নার্সরা দেখে সে পানির বোতলটি আমার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বাইরে ছুড়ে ফেলে দেয়। একদিন দুদিন এভাবে কয়েকদিন চলে যাওয়ার পরে ৯ আগস্ট আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে আমার সন্তান এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যায়। এখন শুনছি লাশ নাকি কবর থেকে তুলবে। এটা না করার দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে। তাতে সরকার আমাদের কিছুই না দিলে আফসোস নেই। আমি আর সহ্য করতে পারবো না আমার সন্তানের লাশ দেখে।’প্রতিবেশী সীমা খাতুন বলেন, তাদের জমি জামা বলতে কিছুই নেই। খাস জমিতে নদীর পাশে তারা বাস করছে। তার বাবা সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারেনি। ছোট থেকেই তাদেরকে ঢাকাতে মানুষ করেছে। তারেক তাদের পরিবারের খরচ চালাতো। তাদের পরিবার থেকে হাল ধরার একজন চলে গেছে। এখন তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। সরকারকে এই পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করব।জাতীয় নাগরিক পার্টি(এনসিপি) শ্রমিক উইং কো-অর্ডিনেটর কমিটির সংগঠক মোঃ মনিরুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন,‘শহীদ তারেক হোসেনের বাড়ি আমার এলাকায়। তারা অনেক দরিদ্র। আমি ও আমার দল সবসময় তাদের পরিবারের পাশে আছি এবং ভবিষতে থাকব। কবর থেকে এর আগে লাশ উত্তোলনের জন্য এসছিল। কিন্তু তার পরিবারের অনুমতি না থাকায় সেটা সম্ভব হয়নি। আমার ব্যক্তিগত মতামত লাশ না তোলার জন্য। কারণ সেতো শহীদ হয়ে গেছে। শহীদের আবার কিসের লাশ উত্তোলন করা হবে।’এনআই

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
২য় শ্রেণির মর্যাদা পাবেন প্রাথমিকের ৩০ হাজার প্রধান শিক্ষক
২য় শ্রেণির মর্যাদা পাবেন প্রাথমিকের ৩০ হাজার প্রধান শিক্ষক

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩০ হাজার প্রধান শিক্ষক দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার মর্যাদা পাবেন। সেই সঙ্গে এখন থেকে ১০ম গ্রেডে সব Read more

শারমিন-নাহিদায় আবাহনীর তিনে তিন 
শারমিন-নাহিদায় আবাহনীর তিনে তিন 

ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন নারী ক্রিকেট লিগে আবাহনী লিমিটেডের জয়রথ ছুটে চলছে। তৃতীয় দল হিসেবে চলমান লিগে টানা তৃতীয় জয় তুলে Read more

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন