যশোরের চৌগাছা উপজেলা শহরের মায়ের দোয়া প্রাইভেট হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। ২০২০ সালের ৬ আগস্ট স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়ে নানা অভিযোগে হাসপাতালটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। মালিকপক্ষ দেনদরবারের মাধ্যমে ফের কার্যক্রম শুরু করে। এছাড়া কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বছরের পর বছর রোগীদের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। সেখানে ভুল সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের শিকার হয়ে হাসনাহেনা (২৫) নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হলেও স্বাস্থ্য বিভাগ নিরব রয়েছেন। মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন বা অন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। সিভিল সার্জন অফিস সুত্রে জানা গেছে, মায়ের দোয়া প্রাইভেট হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২১ সালে। এরপর থেকে লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। এছাড়া কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সাড়ে ৪ বছর আগে ডায়াগনস্টিক সেন্টার খোলা হয়েছে। মালিকপক্ষ আর্থিকভাবে লাভবান হতে বছরের পর বছর অবৈধভাবে রোগীদের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। সেখানে প্যাথলজি বিভাগের কনসালটেন্ট নেই। ল্যাব টেকনিশিয়ান নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। ২০২০ সালে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করে। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আবেদনটি পেন্ডিংয়ে রাখে। চিকিৎসা ও প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে রীতিমতো মহা প্রতারণা চালানো হচ্ছে।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নানা অনিয়মের অভিযোগে ২০২০ সালের ৬ আগস্ট স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা মায়ের দোয়া প্রাইভেট হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করে। এসময় লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়া, ফ্রিজে মাংস ও রক্তের ব্যাগ রাখা, নোংরা পরিবেশে ব্যাঙ লাফালাফির কারণে হাসপাতালটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সেখানকার অস্ত্রোপচার কক্ষের অবস্থা ছিলো খুবই নাজুক। ক্লিনিকের জরুরি বিভাগে মেডিকেল অফিসার না থাকা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকার অভিযোগের সত্যতা পান তদন্ত কমিটি। এসব অনিয়ম ও ত্রুটি সংশোধনের জন্য আল্টিমেটাম দেয়া হলেও তা পরে মানা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, কিছু দিন পর সিভিল সার্জন অফিসের সাবেক এক কর্মকর্তার সাথে মালিকপক্ষ দেনদরবারের মাধ্যমে হাসপাতালে কার্যক্রম শুরু করে। পরে সেখানে অবৈধভাবে ডায়াগনস্টিক কার্যক্রম শুরু করা হয়। বছরের পর বছর অবৈধভাবে কার্যক্রম চলে আসলেও মায়ের দোয়ার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। ফলে নানা অনিয়মের মধ্যে সেখানে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা হয়ে আসছে।সর্বশেষ সেখানে ভুল সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের শিকার হয়ে ১৭ মার্চ মারা যান চৌগাছা পৌরসভার বাকপাড়ার তৌহিদুর রহমানের স্ত্রী হাসনাহেনা। এই ঘটনায় বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা অবৈধ মায়ের দোয়া ক্লিনিকের বিরুদ্ধে এখনো কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এমনকি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়নি। ফলে মৃত প্রসূতির স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।মায়ের দোয়া প্রাইভেট ক্লিনিকের পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, হাসপাতালের লাইসেন্সর মেয়াদ শেষ হয়েছে এটা সত্য। তবে ডায়াগনস্টিকের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করা আছে। যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা জানান, মায়ের দোয়া প্রাইভেট হাসপাতালে ভুল সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারে হাসনাহেনার মৃত্যুর বিষয়টি শুনেছেন। এ ঘটনায় এখনো তদন্ত কমিটি করা হয়নি। আগের একটি ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। অফিসিয়াল কাজের চাপে একটু ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে। তবে একটু দেরিতে হলেও মায়ের দোয়া ক্লিনিকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।এবি
Source: সময়ের কন্ঠস্বর