আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি। যিনি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)-এর প্রধান নেতা, একাধারে সংগ্রামী ও বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। তিনি রোহিঙ্গা জনগণের অধিকারের জন্য লড়াইয়ের দাবি করলেও, তার সংগঠনের কার্যক্রম অনেক ক্ষেত্রে সন্ত্রাসী তৎপরতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।আতাউল্লাহর জন্ম পাকিস্তানের করাচিতে, তবে তার শৈশব কেটেছে সৌদি আরবের মক্কায়। সেখানে ইসলামিক শিক্ষা লাভের পর, ২০১২ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা শুরু হলে তিনি সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ২০১৩ সালে তিনি আরসা প্রতিষ্ঠা করেন, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল রোহিঙ্গাদের স্বার্থ রক্ষা করা।২০১৬ সালের অক্টোবরে আরসা প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের সীমান্ত চৌকিতে হামলা চালায়, যাতে বেশ কয়েকজন নিরাপত্তা সদস্য নিহত হন। এরপর ২০১৭ সালের আগস্টে আরসার আরেকটি বড় হামলা রাখাইন রাজ্যে সংঘর্ষ উসকে দেয়, যার ফলে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ব্যাপক অভিযান চালায় এবং সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়।সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগ:সমিয়ানমার সরকার আরসাকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং দাবি করেছে যে তারা বিদেশি জঙ্গি গোষ্ঠীর সহায়তা পায়। বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী, আরসা শুধু মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর উপরই নয়, বরং রোহিঙ্গাদের মধ্যেও ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর হামলা চালিয়েছে।জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আরসা নিরীহ গ্রামবাসীদের উপর হামলা, অপহরণ এবং হত্যার সাথে জড়িত। বিশেষ করে ২০১৭ সালে বৌদ্ধ গ্রামবাসীদের হত্যার অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে ওঠে। এছাড়া, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতেও আরসার অস্ত্রধারীদের তৎপরতা নিয়ে উদ্বেগ দেখা গেছে।আতাউল্লাহর ভবিষ্যৎ ভূমিকা:আতাউল্লাহ নিজেকে রোহিঙ্গা জনগণের নেতা হিসেবে উপস্থাপন করলেও, তার কার্যক্রম কতটা ন্যায়সঙ্গত তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একাংশ মনে করে, তার নেতৃত্ব রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ের পরিবর্তে তাদের আরও সংকটে ফেলছে। অন্যদিকে, কেউ কেউ মনে করেন, তিনি নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের জন্য একমাত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। তার ভবিষ্যৎ কার্যক্রম রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে নাকি নতুন সংঘাতের জন্ম দেবে, সেটি সময়ই বলে দেবে।আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য বলছে, ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের কাছে মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান রুশদী। ওই হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি আরসার প্রধান আতাউল্লাহ। বাংলাদেশের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে হত্যা, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধে আরসার সদস্যরা জড়িত বলে এখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে।২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের কাছে মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান রুশদী। ওই হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি আরসার প্রধান আতাউল্লাহ।এ ছাড়া আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার আসামি আতাউল্লাহ। তিনি ওই খুনের নির্দেশদাতা ছিলেন বলে আদালতের জবানবন্দিতে জানিয়েছেন ওই মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামি। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহকে ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার কুতুপালংয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় করা মামলায় ২০২২ সালের ১৩ জুন কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। এতে বলা হয়, আরসার প্রধান আতাউল্লাহর নির্দেশে সংগঠনের ৩৬ সদস্য পরিকল্পিতভাবে মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করেন। বর্তমানে মামলাটি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের সদ্য বদলি হওয়া অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন গণমাধ্যমে বলেন, র‍্যাব গত এক বছরে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালিয়ে আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী, সামরিক কমান্ডারসহ ১২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় ৫৮ কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য, ৭৮টি দেশি ও বিদেশি অস্ত্র, বিপুল পরিমাণ গ্রেনেড, হ্যান্ড মাইন ও গুলি জব্দ করা হয়েছে। মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থান করায় আতাউল্লাহসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।পুলিশ, র‍্যাব ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্যমতে, গত সাড়ে ৭ বছরে আশ্রয়শিবিরগুলোতে খুন হয়েছেন ২৫২ জন রোহিঙ্গা। এর মধ্যে ২০২৪ সালে আশ্রয়শিবিরগুলোতে ৬৮টি সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৬৭ রোহিঙ্গা নিহত হন। অধিকাংশ খুনের ঘটনা আরসার সঙ্গে আরএসও এবং রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন বাহিনীর মধ্যে। সংঘর্ষে আরসার ২৭ জন ও আরএসওর ৭ জন নিহত হন। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি।আরসাপ্রধানকে গ্রেপ্তারের খবরে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে স্বস্তি, তবে শঙ্কা কাটেনি। গত সাড়ে ৭ বছরে আশ্রয়শিবিরগুলোতে খুন হয়েছেন ২৫২ জন রোহিঙ্গা। এর মধ্যে ২০২৪ সালে আশ্রয়শিবিরগুলোতে ৬৮টি সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৬৭ রোহিঙ্গা নিহত হন।রোহিঙ্গা নেতারা জানান, ২০১৮ সালের দিকে পুরো আশ্রয়শিবিরের নিয়ন্ত্রণ ছিল আরসার হাতে। সাধারণ রোহিঙ্গারাও আরসাকে নানাভাবে সহযোগিতা দিত। কিন্তু রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে বিপাকে পড়ে আরসা। এর ফলে সাধারণ রোহিঙ্গাদের সমর্থন হারাতে থাকে তারা। এরপর আরসা আশ্রয়শিবিরের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছিল। আতাউল্লাহসহ আরসার কয়েকজন শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তারের খবরে আশ্রয়শিবিরে থাকা আরসা সন্ত্রাসীদের মনোবল ভেঙে পড়েছে। অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারা পালানোর চেষ্টা করছে। অন্যদিকে আরএসওসহ অন্য সন্ত্রাসীরা আরসার সন্ত্রাসীদের পালানো ঠেকাতে তৎপরতা চালাচ্ছে। তাতে আশ্রয়শিবিরে নতুন করে সংঘাত-হানাহানি দেখা দিতে পারে।উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) ১০ জনকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। বর্তমানে তিনিসহ তার অপরাপর সহযোগীরা ১০ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।আতাউল্লাহর নেতৃত্বে আরসা রোহিঙ্গা জনগণের স্বার্থ রক্ষায় সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, তবে তাদের কার্যক্রম নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। মিয়ানমার সরকার আরসাকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে, যদিও আরসা দাবি করে যে তারা শুধুমাত্র রোহিঙ্গা জনগণের অধিকার রক্ষায় লড়াই করছে।এদিকে এইসব পাকিস্তানী জঙ্গীদের সক্রিয়তা বাড়ছে বলে বিভিন্ন সংস্থাগুলোর রিপোর্টে উঠে এসেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদেশি জঙ্গি সংগঠনগুলোর সাথে দেশীয় উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলোর যোগসূত্র বাংলাদেশে নতুন নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত এবং দেশীয় কিছু উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে।নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের উদ্বেগ:নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাকিস্তানি জঙ্গিদের উপস্থিতি শুধু সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি নয়, বরং এটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্যও হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। একাধিক স্থানীয়রাসহ বিভিন্ন রিপোর্টে বলা হয়েছে, জঙ্গি সংগঠনগুলো বাংলাদেশকে ‘ট্রানজিট পয়েন্ট’ হিসেবে ব্যবহার করতে চাচ্ছে এবং এখানকার কিছু দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার সুযোগ নিচ্ছে।বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা নয়, বরং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, কূটনৈতিক তৎপরতা এবং প্রযুক্তিগত নজরদারি বাড়ানো জরুরি। দেশের নাগরিকদেরও এই বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো সন্দেহজনক তৎপরতা চোখে পড়ে, তবে তা দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।এমআর

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
সরকারি চাল মিনিকেটের বস্তায় 
সরকারি চাল মিনিকেটের বস্তায় 

বরগুনার বেতাগীতে ১৩৩ বস্তা সরকারি চাল জব্দ করেছে উপজেলা প্রশাসন।

ধানমন্ডিতে র‍্যাব পরিচয়ে ডাকাতি, আটক ৪
ধানমন্ডিতে র‍্যাব পরিচয়ে ডাকাতি, আটক ৪

রাজধানীর ধানমন্ডিতে র‍্যাব পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনায় ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আজ বুধবার (২৬ মার্চ) সকালে তাদের আটক করা হয়।সংশ্লিষ্ট Read more

মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন নেতানিয়াহু: ইরান
মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন নেতানিয়াহু: ইরান

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহ।

এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ৯-১১ মের মধ্যে
এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ৯-১১ মের মধ্যে

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল আগামী ৯ থেকে ১১ মে এর মধ্যে প্রকাশ হতে পারে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি Read more

রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি
রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি

বেশ কিছুদিন ধরে চলা অসহনীয় গরমের পর আজ শুক্রবার (৭ জুন) বিকেলে রাজধানীতে হয়েছে স্বস্তির বৃষ্টি। তবে, বৃষ্টির স্থায়িত্ব ছিল Read more

নতুন বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব আমাদের: ড. ইউনূস
নতুন বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব আমাদের: ড. ইউনূস

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আবু সাঈদ এক পরিবারের সন্তান নয়, আবু সাঈদ এখন ঘরে ঘরে। নতুন Read more

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন