সূর্য পশ্চিমাকাশে গড়িয়ে পড়ছে, আকাশজুড়ে সোনালি আভা। ধীরে ধীরে সন্ধ্যার ছোঁয়ায় গাঢ় হতে থাকা এই সময়ের অপেক্ষায় আছে তিন হাজার রোজাদার। শিবচরের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী জামিয়া দারুল উলুম হক্কানিয়া মাদ্রাসা যেন এক শান্ত-সমাহিত বন্দরে পরিণত হয়েছে, যেখানে শুধু খাবার নয়-বিতরণ করা হচ্ছে ভালোবাসা, সংযম আর ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সোমবার (১৭ মার্চ) প্রতিবছরের মতো এবারও মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ী এলাকায় মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে বসেছে এই মহতী ইফতারের আয়োজন। মাদ্রাসার ছাত্রদের হাতের ছোঁয়ায় দীর্ঘ চাদরের ওপর পরিপাটি করে সাজানো হয়েছে খিচুড়ির প্লেট, পাশে টকটকে লাল তরমুজ, শশা, খেজুর আর এক বোতল বিশুদ্ধ পানি। ব্যস্ততা যেন এক আনন্দের পূর্ণতা পেয়েছে, যখন মাইকে ধ্বনিত হচ্ছে জিকিরের সুর, রোজাদারদের হৃদয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রশান্তির স্পন্দন।স্থানীয় মুসাফির, পথচারী, মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ এখানে এসে বসেন এক কাতারে। কেউ কাউকে চেনে না, কিন্তু রোজার সেতুবন্ধনে সবাই এক সুতোয় গাঁথা। প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আজহারুল হক ফরিদীর হাত ধরে ১৯৭৭ সালে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আত্মপ্রকাশ করেছিল, আজ তার উত্তরসূরি মঈনুল করিম ফরিদী বাবার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন, আগলে রেখেছেন সেই ঐতিহ্যকে।ইফতারে অংশ নিতে আসা মান্নান শেখের চোখে আনন্দের ঝিলিক—”প্রতি বছরই আসি, এখানকার ইফতার শুধুই খাবার নয়, আত্মার প্রশান্তি এনে দেয়।”মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা আবু তাহের বলেন, “রমজান মানে শুধু সংযম নয়, মানুষের মাঝে ভালোবাসার বন্ধনও। আমাদের এ আয়োজন সেই ভালোবাসারই অংশ।”সময়ের কণ্ঠস্বরকে মাদ্রাসার মুহতামিম মঈনুল হক ফরিদী বলেন, “আমার বাবা যে আদর্শ রেখে গেছেন, তা ধরে রাখা আমাদের দায়িত্ব। প্রতিবছর ৩ থেকে ৫ হাজার রোজাদারের জন্য আমরা এই আয়োজন করি, ইনশাআল্লাহ, এটা চিরকাল চলবে।”সূর্য ডুবতে বসেছে, আকাশে আজানের সুর ধ্বনিত হচ্ছে, আর হাতে হাত রেখে সবাই মুখে তুলছে প্রথম খেজুর। এ শুধু ইফতার নয়, এক মহৎ আত্মার সম্মিলন, মানবতার এক উজ্জ্বল ছবি!এনআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর