মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে বিধবা পারভীন বেগম (৪৫) হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। এতে ঘটনার পর থেকে নিহতের পরিবারের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা থেকে রাত ১০ টার মধ্যে যে কোন সময় উপজেলার রশুনিয়া ইউনিয়নের আবিরপাড়া গ্রামে বাবার পাশে নিজ বাড়ির শয়নকক্ষে বিধবা পারভীনকে কোপায় দুর্বৃত্তরা। এসময় নগদ ৬ লাখ নগদ টাকা ও ৫ ভরি স্বর্ণ লুটে নিয়ে যায়। পরে ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ডেল্টা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। নিহত পারভীন একই উপজেলার আবিরপাড়া গ্রামের আজিজ শেখের মেয়ে। তার স্বামী উপজেলার চোরমর্দ্দন গ্রামের শাহ জালাল খান বছর দুয়েক আগে মারা যান। বিয়ের পর থেকে স্বামীর সঙ্গে আবিরপাড়া গ্রামের বাবা বাড়ি পাশে নিজ বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। নিহতের ছেলে পারভেজ দুবাই প্রবাসী। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। এদিকে, বিধবা পারভীনকে কোপানোর ঘটনায় খুনের ঘটনায় ২২ ফেব্রুয়ারি সিরাজদিখান থানায় মামলা দায়ের করেন দেবর মো. শাহজাহান খান। পরে পুলিশ জুয়েল নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে সে জেল হাজতে রয়েছে। নিহতের বাবা আজিজ শেখ বলেন, আমার ছোট নাতনিটা সবসময় আমার মেয়ে পারভীনের কাছে ঘুম আসতো। ১৬ ফেব্রুয়ারি দিনগত রাত ১০ টার দিকে আমার নাতনি ঘুমাতে যাবে, তখন সে তার খালাকে ডাক দিলে কোন উত্তর না দেওয়ায় আমার নাতনি আমাদেরকে এসে বলে। আমরা গিয়ে পারভীনের রুমের দরজা ধাক্কাধাক্কি করি। তাতে কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙ্গে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। নিহতের দেবর মো. শাহজাহান খান বলেন, আমার ভাই শাহ জালাল খান গত দুই বছর আগে মারা গেছে, আমার ভাতিজা বিদেশে থাকে এবং ভাতিজির বিয়ে হয়ে গেছে। ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ১০ টার মধ্যে আমার ভাবী পারভীন বেগমকে কে বা কারা বাসায় ঢুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। পরে পরিবারের লোকজন তাকে প্রথমে আরাফাত হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে থাকা চিকিৎসক আমার ভাবীর অবস্থার গুরুতর দেখে ঢাকায় রেফার্ড করেন। পরে ২২ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যায়। নিহত পারভীন বেগমের ছেলে মো. পারভেজ বলেন, আমি বিদেশে থাকি। মাকে কোপানোর খবর পেয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি দেশে আসি। এসেই জানতে পারি আমাদের বাসায় আমার মায়ের মামাতো বোনের ছেলে জুয়েল আসা যাওয়া করত। আমার মাকে চিকিৎসা করার জন্য বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেত। বিভিন্ন ধরনের ওষুধ নিয়ে খাওয়াতো। মাকে কে বা কারা কুপিয়ে গুরুতর আহত করে ৬ লাখ নগদ টাকা ও ৫ ভরি স্বর্ণ নিয়ে যায়। আমাদের এই নগদ টাকার ব্যাপারে শুধু জুয়েল জানত, যেহেতু জুয়েল আমার মায়ের মামাতো বোনের ছেলে। সেই সুবাদে সে প্রতিনিয়তই আমাদের বাসায় আসা যাওয়া করতো। আর সুযোগ নিয়ে আমার মাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত যখন করে টাকা পয়সা স্বর্ণালঙ্কা নিয়েছে বলে মনে হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি আমার মাকে আহত করে ২২ ফেব্রুয়ারি আমার মা মারা যায়। এঘটায় ২৫ ফেব্রুয়ারি জুয়েলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। আমার মা খুন হওয়ার ২৪ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়নি। এতে আমরা আতঙ্কিত। আমার মা হত্যার বিচার চাই। সহকারী পুলিশ সুপার (সিরাজদিখান সার্কেল) আ.ন.ম ইমরান খান বলেন, পারভীন হত্যার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে এবং জুয়েল নামে একজনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি, আদালতের অনুমতি ক্রমে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছিল, আমাদের তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে, প্রয়োজন আমরা জুয়েলকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে অনুমতি চাইবো।এনআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর