যাকাত ইসলামের অন্যতম মূল স্তম্ভ, যা নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ হলে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ করা হয়েছে। অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখা ও সমাজের দরিদ্রদের সাহায্য করাই এর মূল উদ্দেশ্য। যাকাত দিলে সম্পদ কমে যায় না বরং বৃদ্ধি পায়। এটি আপনার উপার্জিত ও জমা রাখা সম্পদকে পবিত্র করে। যাকাত আদায়কারীর পুরস্কার হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি, আখেরাতে মুক্তি ও জান্নাত।আল্লাহ তা’আলা কোরআনে এরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের বৈধ উপার্জন এবং আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যে শস্য উৎপন্ন করি তা থেকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যয় (যাকাত দাও) কর।’ (সূরা বাকারা ২৬৭ নং আয়াত)সূরা বাইয়্যিনাহ এর ৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ এরশাদ করেন, ’তাদের এ মর্মে আদেশ করা হয়েছে যে, তারা একাগ্রচিত্তে শুধুমাত্র আল্লাহ তা’আলার এবাদত করবে, যথাযথভাবে সালাত আদায় করবে, যাকাত প্রদান করবে, আর এটাই হলো সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন।’হযরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, পাঁচটি বিষয়ের ওপর ইসলামের ভিত্তি। এক- এ কথার স্বাক্ষ্য দেওয়া যে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই আর নিশ্চয়ই মোহাম্মদ (সা.) তার সন্মানিত বান্দা ও রাসূল, দুই- সালাত কায়েম করা, তিন- যাকাত আদায় করা, চার- হজ করা, পাঁচ- রমজানে রোজা রাখা। (সহিহ বুখারী)যাকাত আদায়কারীর জন্য যাকাত দেওয়াকে দয়া হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। মালের নেসাব পরিমাণ যাকাত আদায় করা ‘দয়া নয়’ বরং ‘গরিবের হক’। ইসলামী শরীয়তমতে, সুষ্ঠুভাবে যাকাত বণ্টন করা গেলে দারিদ্রমুক্ত একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক সমাজ কিংবা রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব। যাকাত ধনী ও গরীবের মধ্যকার বৈষম্য কমিয়ে আনে।ইসলামী বিধান অনুযায়ী, নিম্নলিখিত শর্তগুলো পূরণ হলে একজন মুসলমানের ওপর যাকাত ফরজ হয়—মুসলমান হওয়া: যাকাত কেবল মুসলিমদের জন্য বাধ্যতামূলক।প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া: শিশুদের সম্পদের ওপর যাকাত ফরজ নয়, তবে তাদের অভিভাবক চাইলে তা আদায় করতে পারেন।বুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া: মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির ওপর যাকাত ফরজ নয়।স্বাধীন হওয়া: দাস বা বন্দির ওপর যাকাত ফরজ নয়।নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া: যাকাত দিতে হলে ব্যক্তির কাছে ন্যূনতম নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে, যা এক বছর অক্ষুণ্ণ থাকলে তবেই যাকাত ফরজ হয়। নিসাব মানে হলো সর্বনিম্ন সম্পদের পরিমাণ, যার ওপর যাকাত ফরজ হয়। হাদিসের আলোকে এটি নির্ধারিত হয়েছে, স্বর্ণের ক্ষেত্রে: ৭.৫ ভরি (৮৭.৪৮ গ্রাম), রৌপ্যের ক্ষেত্রে: ৫২.৫ ভরি (৬১২.৩৬ গ্রাম)। ঋণমুক্ত হওয়া: যদি কারও ওপর বড় পরিমাণ ঋণ থাকে এবং নিসাব পরিমাণ সম্পদ ঋণ পরিশোধের পর থাকে না, তাহলে তার ওপর যাকাত ফরজ নয়।টাকা-পয়সা ও সম্পদের ক্ষেত্রে: যদি কারও কাছে সমপরিমাণ নগদ টাকা, বাণিজ্যিক পণ্য বা সঞ্চয় থাকে, তাহলে তার ওপর যাকাত ফরজ হবে।সুতরাং, যাদের ওপর যাকাত ফরজ, তাদের জন্য যথাসময়ে তা আদায় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কেবল ধর্মীয় দায়িত্বই নয়, বরং সমাজে দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।এবি
Source: সময়ের কন্ঠস্বর