চলতি বছর জানুয়ারিতে হয়নি পুলিশ সপ্তাহ। ফলে দীর্ঘদিনের রেওয়াজে ছেদ পড়ায় জল্পনা ছিল, এবার হবে তো পুলিশ সপ্তাহ? সব জল্পনার অবসান হচ্ছে। পুলিশের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে হচ্ছে আয়োজনটি, তবে ভিন্ন আঙ্গিকে। প্রাথমিকভাবে ২৯ এপ্রিল দিন ঠিক করা হয়েছে।সব সময় প্যারেডের মাধ্যমে পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন হলেও এবার তা থাকছে না। কমিয়ে আনা হয়েছে সময়সীমাও। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে তিন দিনব্যাপী হবে। উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রথম দিন রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের কল্যাণ সভায় তিনি উপস্থিত থাকবেন।পুলিশ সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে এরই মধ্যে বৈঠক করেছেন নীতিনির্ধারকরা। এর ধারাবাহিকতায় আরও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সূত্র জানায়, প্রথমবারের মতো এবার পুলিশ সপ্তাহে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে বাহিনীর নীতিনির্ধারকদের মতবিনিয়ম সভা হবে। সেখানে উঠে আসা মতামত ‘গুরুত্ব পাবে’। কেমন পুলিশ দেখতে চান– এমন বিষয় ওই সভায় উঠে আসতে পারে।পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিবছর সাধারণত পাঁচ-ছয় দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ হয়। এবার সেটি কমিয়ে তিন দিনে আনা হয়েছে। কিছু ইভেন্ট কাটছাঁট করে নতুন কয়েকটি বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্মিলন থাকছে না। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পৃথক আলোচনার সেশনও থাকবে না। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়েও পুলিশ সদস্যরা যাচ্ছেন না। প্রধান উপদেষ্টা রাজারবাগ এসে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন। প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও কোনো সেশন নেই।আরেকটি সূত্র জানায়, পুলিশের প্রতিটি ইউনিট তাদের কর্মকাণ্ড ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা উপস্থাপন করবে। পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। এবার পত্রিকায়ও ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে না। রেডিও-টেলিভিশনেও থাকবে না বিশেষ অনুষ্ঠান।পুলিশের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিতে চায় পুলিশ। বিশিষ্ট নাগরিক ও সংবাদকর্মীদের মতামতও শুনতে চায় পুলিশ। এ জন্য প্রথমবারের মতো নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মতো অনুষ্ঠান রাখা হয়েছে। আরেক কর্মকর্তা বলেন, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের অভিজ্ঞতা শোনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ সপ্তাহের মতো বড় পরিসরে তা হতে পারে। এতে যেমন নানা সমস্যা উঠে আসবে, তেমনি থাকবে সমাধানে করণীয়।জানতে চাইলে পুলিশের মুখপাত্র এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে পুলিশ সপ্তাহ শুরু হতে পারে। প্রাথমিকভাবে একটি দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে কাজ এগিয়ে চলছে।গত বছর পুলিশ সপ্তাহে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন সদস্যরা। যার মধ্যে অন্যতম ছিল, পদোন্নতি জট নিরসন ও সুপার নিউমারারি পদ নিয়মিত করা। দেশের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রেষণে নিয়োগের পাশাপাশি, বিদেশি মিশনে প্রেষণে পুলিশ অফিসারদের নিয়োগের দাবি উত্থাপন করা হয়। এ ছাড়া নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, গাড়ি কিনতে সুদমুক্ত ঋণ ও পরিদর্শক থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঝুঁকি ভাতা, নন-ক্যাডার পুলিশ সদস্যদের জন্য সুপার নিউমারারি পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি জট কমানোর দাবি জানানো হয়।গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর ভেঙে পড়ে আইনশৃঙ্খলা। থানা, ফাঁড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, সদস্যদের মারধর, এমনকি হত্যার ঘটনাও ঘটে। তবে সে অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে পুলিশ।এবি
Source: সময়ের কন্ঠস্বর