কুমিল্লার কান্দিরপাড়ের একটি বহুতল মার্কেটের একটি সেলাইয়ের দোকানে আনমনে সুঁইয়ে সুতো পরাচ্ছিলেন কাটিং মাস্টার এনামুল হক। একসময় তার দোকানে পোশাক সেলাইয়ের চাপ সামলানোই মুশকিল হতো, এখন দিন পার করাই কঠিন। গলার স্বর নরম করে বললো, “গত কয়েক ঈদে আমার দোকানের সামনে ভিড় থাকতো। রোজার আগ থেকেই সেলাইয়ের সিরিয়াল লেগে থাকতো। কিন্তু, ১০ টি রোজা পার হয়ে গেলেও এখন তেমন সাড়া পাচ্ছিনা।”একই অবস্থা দর্জি কাউসার আহমেদেরও। তিনি জানান, “ঈদের সময় তো আমরা ঘুমাতে পারতাম না। এত কাজ! আর এখন? সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বসে থাকলেও হাতে গোনা দুই-একটা অর্ডার পাই।” আক্ষেপ করে কাউসার আহমেদ বলেন, মানুষ এখন সেলাই করা জামা কাপড়ের প্রতি আগ্রহী কম। সবাই এখন রেডিমেড পোশাকের দিকেই ঝুঁকছে।’অন্যদিকে কান্দিরপাড়ের এক রেডিমেড পোশাকের দোকানে ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। ক্রেতারা পছন্দের পোশাক বেছে নিচ্ছেন, ট্রায়াল দিয়ে দেখে নিচ্ছেন আর ঝটপট কিনে নিচ্ছেন।নগরীর কান্দিরপাড় খন্দকার হক শপিং কমপ্লেক্সে পরিবারের জন্য ঈদ শপিং করতে আসা সানজিদা আকতার বলেন, “দর্জির কাছে দিলে জামা বানাতে এক-দুই সপ্তাহ লেগে যায়। কখনো ফিটিংস ঠিক হয়, কখনো আবার ডিজাইন ঠিক থাকে না। রেডিমেডে এসব ঝামেলা নেই, ট্রায়াল দেই, ভালো লাগলে কিনি।”লাকসাম থেকে আসা ইয়াসমিন আরা জানালেন, “আগে বাসার সবার জন্য এক মাস আগে কাপড় কিনে দর্জির কাছে দিতে হতো। এখন মার্কেট থেকে একদিনে সবার জামা কিনে ফেলা যায়। সময়ও বাঁচে, পরিশ্রমও কম হয়।”এদিকে, দর্জির দোকানের চিরচেনা দৃশ্য বদলে যাচ্ছে, ক্রেতারা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ এখন শুধুমাত্র ব্লাউজ বা পাঞ্জাবির মতো নির্দিষ্ট পোশাকের অর্ডার নিচ্ছেন, কেউ আবার বড় কাজ ছেড়ে দিয়েছেন।কিন্তু দর্জি প্রেমা লেডিস টেইলার্সের স্বত্তাধিকারী এনামুলের মতো অনেকের চোখে এখনো সেই পুরনো দিনের স্মৃতি ভাসে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে এনামুল বললেন, “আমাদের হাতে বানানো জামার মতো কি রেডিমেড হয়? কিন্তু মানুষ এখন আর সেটা বোঝে না। হয়তো একদিন আমাদের কেউ মনে রাখবে না।”এদিকে, বিশ্লেষকরা বলছেন, সময় বদলাচ্ছে, বদলে যাচ্ছে মানুষের পছন্দ ও অভ্যাস। এক সময় যে দর্জির দোকানগুলো ছিল ঈদের প্রস্তুতির কেন্দ্রবিন্দু, সেগুলো আজ ক্রেতাশূন্য। রেডিমেড পোশাকের সহজলভ্যতা, সময়ের সাশ্রয় আর নতুন নতুন ডিজাইন মানুষের রুচি পাল্টে দিয়েছে। তবে, হাতে সেলাই করা পোশাকের কারুকাজ, নিখুঁত ফিটিংস আর ব্যক্তিগত ছোঁয়ার যে মূল্য, তা হয়তো কোনোদিন পুরোপুরি মুছে যাবে না। প্রযুক্তি আর সময়ের স্রোতে টিকে থাকতে হলে দর্জিদেরও নতুন কৌশল নিতে হবে, আধুনিক ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করতে হবে। নাহলে একদিন সত্যিই হয়তো এনামুলের আশঙ্কাই সত্যি হয়ে যাবে—দর্জিদের কথা কেউ মনে রাখবে না।আরইউ

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
ফেনীতে গরম ও লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন
ফেনীতে গরম ও লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন

বিদ্যুৎ চলে গেলে হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলো অগ্নি কুন্ডলীতে রূপ নেয়।

মানিকগঞ্জের পয়লা ইউপি চেয়ারম্যন ও সচিবকে সর্তক করলো তথ্য কমিশন
মানিকগঞ্জের পয়লা ইউপি চেয়ারম্যন ও সচিবকে সর্তক করলো তথ্য কমিশন

তথ্য প্রদান না করায় মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পয়লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হারুন অর রশীদ ও ইউপি সচিব মো. সাদেক Read more

ইরানকে দেখতে হাসপাতালে ফখরুল
ইরানকে দেখতে হাসপাতালে ফখরুল

লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানকে দেখতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন